Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

গৌড়ীয় কড়াইয়ে আঁচ দিতে কাঠ দশ মন

এমন কড়াই নিয়ে বড়াই করা যায় অনায়াসেই। যাবে নাই বা কেন? এক-একটি কড়াইয়ে নয় থেকে দশ কুইন্ট্যাল চাল-ডাল-সব্জি এক সঙ্গে রাঁধা যায়। আর কড়াই যদি অত বড় হয়, খুন্তিও যে নেহাত খাটো হবে না, বলাই বাহুল্য।

চলছে সব্জি-খিচুড়ি রাঁধা। —নিজস্ব চিত্র।

চলছে সব্জি-খিচুড়ি রাঁধা। —নিজস্ব চিত্র।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
নবদ্বীপ শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০১:২০
Share: Save:

এমন কড়াই নিয়ে বড়াই করা যায় অনায়াসেই।

যাবে নাই বা কেন? এক-একটি কড়াইয়ে নয় থেকে দশ কুইন্ট্যাল চাল-ডাল-সব্জি এক সঙ্গে রাঁধা যায়। আর কড়াই যদি অত বড় হয়, খুন্তিও যে নেহাত খাটো হবে না, বলাই বাহুল্য। ৪৫ কেজির এক-একটি খুন্তি ঘোরাতে দু’জন করে লোক লাগছে। নবদ্বীপের কেশবজি গৌড়ীয় মঠে দোল উপলক্ষে ওড়িশা থেকে সদলবলে রান্না করতে এসেছেন ত্রিলোচন পাণ্ডা। ওই বিরাট কড়াই-খুন্তিতে দৈনিক কুড়ি হাজার লোকের তিন বেলার রান্না চলছে।

প্রতি বারই দোলের ঠিক আগে-আগে বিপুল ভক্তসমাগম হয় নবদ্বীপে। রাজ্য এবং দেশের বিভিন্ন জায়গা তো বটেই, বিদেশ থেকেও বহু ভক্ত নব-দ্বীপ পরিক্রমার জন্য বিভিন্ন মঠে এসে জড়ো হন আসেন। পরিক্রমা শেষ হয় দোলের আগের দিন। তার আগে অন্তত পনেরো দিন ধরে ভক্তদের আনাগোনা চলতেই থাকে। কেশবজি গৌড়ীয় মঠের মতো বড় মঠে তাই এই রাজসূয় আয়োজন।

দৈবাৎ মঠের হেঁসেলে উঁকি দিলে যে কারও চোখ কপালে উঠবে। রোজ সকালে জলখাবারে একটিই পদ সব্জি খিচুড়ি। তার জন্য লাগছে ৫ কুইন্ট্যাল চাল, ৪ কুইন্ট্যাল ডাল, আলু ৪ কুইন্ট্যাল, টম্যাটো আড়াই কুইন্ট্যাল আর ৪৫ কেজি সর্ষের তেল। দুপুরে রান্না হচ্ছে ১৪ কুইন্ট্যাল চাল, মুগ ডাল ৪ কুইন্ট্যাল, সব্জি ২৮ কুইন্ট্যাল। আড়াই কুইন্ট্যাল চিনি আর ৬ কুইন্ট্যাল টম্যাটো দিয়ে চাটনি। আর শেষ পাতে এক হাজার লিটার দুধ, ২ কুইন্ট্যাল গোবিন্দভোগ চাল, আড়াই কুইন্ট্যাল চিনি, ৬০ কেজি নলেন গুড়ে তৈরি পায়েস। রাতের মেনুও প্রায় একই রকম। কেবল ভাতের জায়গায় ৮০ কেজি আটা দিয়ে হাতে গড়া রুটি।

পাকশালার ভারপ্রাপ্ত বাবাজি মহারাজ জানিয়ে দেন, “প্রতি বছর ওড়িশা থেকে ত্রিলোচন পাণ্ডা পঞ্চাশ জন হালুইকর নিয়ে আসেন। তাঁরাই রান্নার দেখভাল করেন। আরও প্রায় আশি জন সব্জি কাটা, মশলা বাটার কাজ করেন।”

নবদ্বীপের একেবারে দক্ষিণে গৌরাঙ্গ সেতুর নীচে কয়েক বিঘা জমিতে কেশবজি গৌড়ীয় মঠ। তার গা ঘেঁষে চলে গিয়েছে নবদ্বীপ-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক। ঘড়িতে রাত তখন ২টো। পরিক্রমা-ক্লান্ত হাজার হাজার ভক্তের দল মঠের আনাচে কানাচে গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। ঠিক তখনই বিরাট রান্নাঘরে শুরু হয়ে গেল সব্জি কাটা, মশলা বাটার কাজ। পাম্পের সঙ্গে পাইপ লাগিয়ে দমকলের আগুন নেভানোর কায়দায় ধোয়া হল স্তুপীকৃত কাটা সব্জি, চাল, ডাল। রাত ৩টে নাগাদ ত্রিলোচন পান্ডা ৪৮ জন সঙ্গী নিয়ে দশ মণ কাঠ দিয়ে ধরিয়ে ফেললেন প্রকাণ্ড উনুন।

ত্রিলোচনবাবু বলেন, “এখানে সবকিছু ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে তাল মিলিয়ে করতে হয়। না হলেই গোলমাল হয়ে যাবে। সকাল ৭টার মধ্যে বিশ হাজার লোকের সব্জি-খিচুড়ি, দেড়টার সময় দুপুরের খাবার। রাতের খাবার সাড়ে ৮টার মধ্যে তৈরি করে ফেলতে হয়। কাজ শুরু হয়ে যায় রাত ২টো থেকে। এই ক’টা দিন আমরা মেরে-কেটে ঘণ্টা চারেক বিশ্রাম নিতে পারি।”

এই রাজসূয় রান্নার জন্য খরচ কেমন হয়? বাবাজি মহারাজ বলেন, “শুধু জ্বালানির জন্য সাড়ে চার লক্ষ টাকার কাঠ কেনা হয়েছে। রান্নার লোকজন এবং অন্যান্য খরচ ধরলে দৈনিক প্রায় সাড়ে সাত লক্ষ টাকা খরচ হচ্ছে।” এত খরচ জোগান কোন চিন্তামণি? বাবাজি জানান, ভক্তদের দানেই সব চলে।

কে না জানে, ভক্তই ভগবান?

অন্য বিষয়গুলি:

debashish bandyopadhyay nabadwip
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy