প্রতীকী ছবি
দর্জির কাজ শিখে কলকাতায় গিয়েছিলাম, সে প্রায় পনেরো বছর আগের কথা। পরে কলকাতাতে একটি কারখানাও খুলেছিলাম। কিন্তু বছর তিনেক ধরে ব্যবসা ভাল হচ্ছিল না। ফলে এক বছর আগে আমার এক আত্মীয়ের হাত ধরে মুম্বই শহরে দর্জির কাজ করতে যাই। কিন্তু সেখানেও দর্জির কাজ জুটোতে পারিনি। পরে ওই আত্মীয় আমাকে মুরগি কাটার দোকানে কাজ দেখে দেয়। ওই দোকানেই এক বছর আছি। এই প্রথম মুম্বইয়ে গিয়েছিলাম। ভালই ছিলাম। মালিকের ঘরে থাকতাম আর আমরা দশ জন কর্মী এক সঙ্গে রান্না করে খেতাম। খাওয়া আর হাত খরচে মাসে চার হাজার টাকা খরচ হয়েছে। প্রতিমাসে দশ হাজার টাকা বাড়ি পাঠাতে পারতাম। এ বার ইদের সময় বাড়ি আসার কথা ছিলো। সেই মতো ৫ মে ট্রেনের টিকিট কেটে রেখেছিলাম। কিন্তু মার্চ মাসে জনতা কার্ফুর মধ্যে দিয়ে প্রথমে তিন সপ্তাহের লকডাউন ঘোষণা হয়। আমাদের মুরগির দোকানে ঝাঁপ বন্ধ হয়ে গেল। ঘরে বসে খাওয়া ছাড়া আর কোনও কাজ নেই। আয় বন্ধ হয়ে গেল, কিন্তু খরচ কিছুটা বেড়ে গিয়েছিল। লকডাউন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে চাল, ডাল-সহ মুদির জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাওয়ার সঙ্গে আনাজপাতির দামও বেড়ে যেতে শুরু করল। তিন সপ্তাহ পরে সব ঠিক হয়ে যাবে। বাজার খুলবে, আমাদেরও উপার্জন হবে ভেবেছিলাম। কিন্তু আমাদের সেই আশা করাই ভুল হয়। দেশে হু হু করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে। সরকার দফায় দফায় লকডাউন বাড়াতে থাকে। এদিকে আমাদের হাতে পয়সা প্রায় শেষ। কেরালা থেকে শ্রমিকদের বাড়ি ফেরার জন্য ট্রেন দিচ্ছে, কিন্তু মুম্বই থেকে একটিও ট্রেন দেওয়া হয়নি। বাসে করে বাড়ি ফিরতে অনেক টাকা খরচ। তবুও বাড়ি ফিরতে হবে, না হলে টাকা পয়সার অভাবে না খেতে পেয়ে মরতে হবে ভেবেই বাড়ি ফেরার তোড়জোড় শুরু করি। এদিকে বাড়ি থেকেও ঘনঘন ফোন যেতে শুরু করে। মিথ্যা করেই বলতে হয়েছে ভাল আছি। এদিকে বাড়িতে আমার দুই ছেলে, স্ত্রী ছাড়াও এক বৃদ্ধ কাকা এবং মূক ও বধির ভাই আছে। মুম্বইয়ে থাকলেও মন ছিল বাড়িতেই। কারণ আমার উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই বাড়িতে সমস্যা দেখা দেবে।
সেই সময় বাড়ি ফেরার জন্য উদ্যোগী হতেই আমাদের জেলা ও বর্ধমান জেলার ৩০ জন শ্রমিকের সন্ধান করতে পারি। একটি বাস ভাড়া করে মাথা পিছু সাড়ে ছয় হাজার টাকা ভাড়া দিয়ে তিন দিন পর বাড়ি ফিরেছি। লকডাউনের মধ্যে নিজের কাছে থাকা সমস্ত টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিলো। বাড়ি থেকে আট হাজার টাকা পাঠিয়ে ছিলো, ওই টাকা দিয়েই বাড়ি ফিরতে পেরেছি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy