ধুলিয়ানে বিড়িশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলছেন রাহুল গান্ধী। — নিজস্ব চিত্র।
শমসেরগঞ্জের ধুলিয়ানে বৃহস্পতিবার ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’র মাঝে বিড়িশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাহুল গান্ধী। সেখানেই এক মহিলা শ্রমিক তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামে নালিশ করেন। অভিযোগের সুরেই তিনি জানান, অভিষেক প্রতিশ্রুতি দিলেও বিড়িশ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি হয়নি। সে কথা যেন শুনেও শুনলেন না রাহুল। মুখ ফিরিয়ে সঙ্গে সঙ্গেই পাশের অন্য এক বিড়িশ্রমিকের সঙ্গে গল্প জুড়ে দেন কংগ্রেস সাংসদ। তামাক পাতার গুণগত মান নিয়ে পাল্টা প্রশ্নও করেন তিনি।
ফরাক্কা হয়ে বৃহস্পতিবারই রাহুলের ‘ভারত জোড়ো ন্যায় যাত্রা’ প্রবেশ করেছে মুর্শিদাবাদে। যাত্রাপথে ধুলিয়ানে বিড়িশ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলেন রাহুল। শোনেন তাঁদের সমস্যার কথা। তাঁদের সঙ্গে বসে বিড়ি বাঁধারও চেষ্টা করেন। সেই সময়েই এক মহিলা শ্রমিক অভিযোগ করেন, গত মার্চে সাগরদিঘি উপনির্বাচনের আগে বিড়িশ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি নিয়ে আশ্বাস দিয়েছিলেন অভিষেক। কিন্তু ভোট মিটে যাওয়ার পর ১০ মাস কেটে গেলেও সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করা হয়নি। ওই মহিলার কথায়, ‘‘ভোটের আগে অভিষেক প্রতিশ্রুতি দিলেও এক পয়সা মজুরি বাড়েনি।’’ সে কথাও শুনেও যেন শুনলেন না রাহুল। সঙ্গে সঙ্গেই তামাক পাতার গুণগত মান নিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করেন তিনি।
২০২৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে সাগরদিঘির উপনির্বাচনে প্রচারে এসে অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘৯০০ বিড়ি বাঁধলে ১৬৫ টাকা এবং হাজার বিড়ি বাঁধলে দেওয়া হয় ১৭৮ টাকা। নির্বাচনের পর এক থেকে দেড় মাসের মধ্যে যাতে মজুরি ১৭৮ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ২৩০-২৪০ টাকা করা যায়, সেটা দেখব।’’ এর পরেই অভিষেক বলেছিলেন, ‘‘আমি এক কথার ছেলে। যা বলি, তা করি।’’ ওই মহিলার অভিযোগ, এর পরে তৃণমূল সাংসদ প্রতিশ্রুতি রাখেননি।
গত বেশ কয়েক দিন ধরেই তৃণমূলের সঙ্গে জোট গড়ার ব্যাপারে কখনও রাহুল, কখনও জয়রাম রমেশ আগ্রহ প্রকাশ করে আসছেন। প্রদেশ কংগ্রেস নেতৃত্ব যদিও সমালোচনা চালিয়ে যাচ্ছেন রাজ্য সরকারের। বুধবার রাহুলের গাড়ির পিছনের কাচ ভাঙা নিয়েও একই অবস্থান ছিল কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের। রাজ্য সরকার বা প্রশাসনের দিকে এক বারও আঙুল তোলেননি নেতৃত্ব। বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরীর গলায় অভিযোগের সুর শোনা গেলেও জয়রাম রমেশ অন্য কথাই বলেন। অধীর ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে বলেন, ‘‘বুঝে নিন, কে করেছে।’’ ঘটনার অব্যবহিত পরে অধীর বলেন, ‘‘কেউ হয়তো পিছন থেকে পাথর ছুড়েছে।’’ তিনি পুলিশের দায়িত্বজ্ঞান নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘‘রাহুলজির মতো এক জন ব্যক্তির বিশাল নিরাপত্তার প্রয়োজন হয়। তাঁর নিরাপত্তায় যদি এমন হয়...।’’ এর পর আবারও নাম না করে তৃণমূলকে নিশানা করে তিনি বলেন, ‘‘আমরা মধ্যহ্নভোজনের জন্য একটা জায়গা চেয়েছিলাম। সেটা বাংলার সরকারের। দেওয়া হয়নি আমাদের। তার পর এখানে নিরাপত্তার কোনও বন্দোবস্ত নেই। ওরা চায়, এখানে কোনও না কোনও ঘটনা ঘটুক।’’ অধীর যখন এ সব বলছেন, তখন সাংবাদিক সম্মেলনে তৃণমূলনেত্রী মমতার প্রশংসা করেন জয়রাম। তিনি জানান, রাহুলের গাড়ির কাচ ভাঙার ঘটনায় কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়্গে চিঠি দিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, ‘‘কেউ হয়তো শয়তানি করতে পারেন। যাতে বাংলার সরকারের বদনাম হয়।’’ জয়রাম এ-ও বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের সম্মাননীয় নেত্রী। তিনি আগে কংগ্রেসে ছিলেন। আমরা মমতাজির কাছ থেকে প্রেরণা নিই। কংগ্রেসের আর এক মুখপাত্র সুপ্রিয়া শ্রীনতে এক্সে আবার গাড়ির কাচ ভাঙা নিয়ে অন্য ব্যাখ্যা দেন। এক মহিলা দেখা করতে এসেছিলেন রাহুলের সঙ্গে। হঠাৎ গাড়ি থামাতে হয়। তখনই নিরাপত্তা বলয় গড়তে ব্যবহৃত দড়ির ধাক্কায় গাড়ির পিছনের কাচ ভেঙে যায়।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা গাড়ির কাচ ভাঙা প্রসঙ্গে স্পষ্টই জানান, এ সব তিনি পছন্দ করেন না। তবে সেই কাচ ভেঙেছে বিহারের কাটিহারে। বাংলায় নয়। রাজ্যে কংগ্রেসের জোট নিয়ে নেতিবাচক বার্তা তিনি আগেই দিয়েছেন। আর সে জন্য দায়ী করেছে সিপিএমকে। বুধবারই বহরমপুরে সরকারি পরিষেবা প্রদান কর্মসূচি থেকে মমতা জানান, কংগ্রেসের সঙ্গে তাঁর দলের বোঝাপড়া ভাল জায়গায় ছিল। কিন্তু গোটাটা নষ্ট হয়েছে সিপিএমের জন্য। মমতা এ-ও জানান, গান্ধীদের সঙ্গে তাঁর পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু কোনও রাজনৈতিক সম্পর্ক নেই। এত কিছুর পরেও কংগ্রেস কিন্তু দমতে নারাজ। পরের দিন, বৃহস্পতিবারই ‘ন্যায় যাত্রা’র মাঝে বিড়িশ্রমিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিষেককে নিয়ে তাঁদের অভিযোগ শুনেও শুনলেন না রাহুল। এ ভাবে আরও এক বার কি বাড়িয়ে দিতে চাইলেন ‘জোট-বন্ধুত্ব’-এর হাত?
প্রসঙ্গত, রাহুলের বিষয়ে মমতা নিজের মনোভাব কখনও স্পষ্ট না করলেও অভিষেককে অতীতে তাঁর কাছে যেতে দেখা গিয়েছে। গত বছর রাহুলের সাংসদ পদ খারিজ হওয়ার পর সরব হয়েছিলেন অভিষেক। আবার মুম্বইয়ে ‘ইন্ডিয়া’র বৈঠকের আগে গত আগস্টে দিল্লিতে সনিয়া গান্ধীর ১০ জনপথের ঠিকানায় রাহুলের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন অভিষেক। এ বার সেই অভিষেকের নামেই নালিশ শুনতে চাইলেন না রাহুল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy