হেরে যাওয়ার পর দলীয় কার্যালয়ে পার্থসারথী। নিজস্ব চিত্র
আক্ষরিক অর্থেই তিনি ছিলেন জেলার দক্ষিণে বিজেপির সারথী। তিন দশক পরে তাঁর নিজেরই রথের চাকা বসে গেল।
বিধানসভা ভোটের আগে জার্সি বদলে বিধায়ক পদ বাঁচিয়েছিলেন পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায়। কিন্তু এ বার নিজের শহরই ‘প্রত্যাখ্যান’ করল পার্থ ওরফে ‘বাবুদা’কে। গত বছরেই শঙ্কর সিংহকে হারিয়ে বিধায়ক হয়েছেন তিনি। তাঁকে ১৩১ ভোটে হারিয়ে ‘জায়ান্ট কিলার’ হয়ে গেলেন তৃণমূলের জয়দীপ দত্ত। যদিও ছাপ্পা ও ভোট লুটের কারণেই তিনি হেরেছেন বলে দিনের শেষে দাবি করেছেন তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে নাম লেখানো প্রবীণ নেতা।
পুরসভায় কাউন্সিলর হিসাবে পার্থসারথীর পা রাখা ১৯৯০ সালে। ১৯৯৫ সালে কংগ্রসের পুরবোর্ডের প্রধান। ২০০৯ সালের শেষ দিকে দলবল নিয়ে যোগ দেন তৃণমূলে। পুরপ্রধান পদে থেকে যান তিনিই। ২০১০ ও ২০১৫ সালের পুরভোটেও জিতে পুরপ্রধান। ২০২০ সালে মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তিনি ছিলেন পুর প্রশাসক। এর মধ্যে ২০১১ সালে তৃণমূলের টিকিটে বিধায়ক। তবে ২০১৬ সালে হেরে যান বিধানসভা ভোটে। গত বছরের গোড়ার দিকে তৃণমূল ছেড়ে যোগ দেন বিজেপিতে। বিধানসভা ভোটে জিতে ফের বিধায়ক হন। বর্তমানে তিনি বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি।
এর আগে এক বার বিধানসভা ভোটে হারলেও পুরভোটে প্রায় তিন দশকে পার্থের হার এই প্রথম। বাবা বিনয় চট্টোপাধ্যায় ছিলেন রানাঘাটের বিধায়ক, কাকা বিমল চট্টোপাধ্যায় ছিলেন পুরপ্রধান। পার্থ হারলেও রানাঘাটের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের উত্তরসূরি হিসাবে অবশ্য পুরসভায় পা রাখছেন তাঁর ছেলে কামনাশিস। রানাঘাট পুরসভায় তিনিই এক মাত্র গেরুয়া প্রতিনিধি।
শুধু রানাঘাট নয়, বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলায় বিজেপির প্রধান মুখ ছিলেন পার্থই। নিজের দূর্গে তার এই হার বিজেপির কাছেও বড় ধাক্কা। কিন্তু তার নিজের শহর পার্থর থেকে মুখ ঘুরিয়ে নিল কেন? এ বার অবশ্য পার্থ তাঁর নিজের ৭ নম্বর ওয়ার্ড ছেলেকে ছেড়ে পাশের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে দাঁড়িয়েছিলেন, ভোটের অঙ্কে যা বিজেপির পক্ষে খুব একটা নিরাপদ আসন ছিল না বলেই মনে করছেন অনেকে। ৭ নম্বর ওয়ার্ড সেই তুলনায় অনেকটাই নিরাপদ। সেখানে দাঁড়িয়ে জিতেছেন তাঁর ছেলে কামনাশিস চট্টোপাধ্যায়। পার্থর ঘনিষ্ঠ শিবিরের কথাতেও স্পষ্ট, আসন বাছতে ভুল হয়ে গিয়েছিল। একাংশের দাবি, বিধায়ক ছাড়াও পার্থ বিজেপির জেলা সভাপতি, কাজেই কাউন্সিলর হলে তাঁকে এলাকার কাজে সে ভাবে পাবেন কি না তা নিয়েও সন্দিহান ছিলেন অনেকে। অনেকেরই আগাম ধারণা ছিল, তৃণমূলের বোর্ড হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে পার্থ জিতলেও পুরপ্রধান হবেন না, বিরোধী কাউন্সিলর হয়ে কতটা কাজ করতে পারবেন তা নিয়েও সংশয় ছিল অনেকের। যদিও পার্থের মতে, “এর আগেও তো আমি বিধায়ক ও পুরপ্রধান এক সঙ্গে ছিলাম, সমস্যা তো হয়নি। এ বার সন্ত্রাস আর ছাপ্পা ভোটের কারণে হারতে হল।” তাঁর দাবি, “পাশের ওয়ার্ডে তৃণমূলের বাহিনী বুথ দখলের চেষ্টা করে। আমি সে দিকে যেতেই ওরা আমার বুথে ঢুকে পড়ে। বৃষ্টির সুযোগও নিয়েছে।”
তৃণমূলের রানাঘাট শহর সভাপতি পবিত্র ব্রহ্মের পাল্টা দাবি, “উনি তো সারা দিন নিজের বুথেই ছিলেন। ছাপ্পা হলে ঠেকালেন না কেন, আর কেনই বা প্রশাসনিক স্তরে প্রতিবাদ করলেন না? এখন নিজের মুখ বাঁচাতে উনি এ সব বলছেন।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy