Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

সকালের ছাদ যেন দার্জিলিং

এলেন, দেখলেন এবং হাড়ে হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিলেন। গোটা অঘ্রান জুড়ে মাথা খুঁড়েও তাঁর নাগাল মেলেনি।

জাঁকিয়ে পড়েছে শীত। হাত ধরাধরি করে ঘনিয়ে এল কুয়াশাও। শনিবার সকালে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

জাঁকিয়ে পড়েছে শীত। হাত ধরাধরি করে ঘনিয়ে এল কুয়াশাও। শনিবার সকালে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে। কৃষ্ণনগরে। ছবি: সুদীপ ভট্টাচার্য

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৩৭
Share: Save:

একেই বলে আসা!

এলেন, দেখলেন এবং হাড়ে হাড়ে কাঁপুনি ধরিয়ে দিলেন। গোটা অঘ্রান জুড়ে মাথা খুঁড়েও তাঁর নাগাল মেলেনি। হালকা সোয়েটার-মাফলারে যেটুকু বা শীতের অস্তিত্ব মফস্সলে মিলছিল, কলকাতার দিকে তা-ও ছিল না। কিন্তু ময়দানে নেমে প্রথম দিন থেকেই ভেলকি দেখাতে শুরু করেছে পৌষের শীত। যার দাপটে আক্ষরিক অর্থেই কুঁকড়ে গিয়েছে গোটা নদিয়া।

গত দু’দিন ধরেই পাহাড়ি ধসের মতো কেবলই নেমেছে থার্মোমিটারের পারদ। মাত্র দু’দিনের মধ্যে এক ধাপে ছয় ডিগ্রি। শনিবার কনকনে ঠান্ডার সঙ্গে যোগ হয়েছে ছুরির মতো তীক্ষ্ণ উত্তুরে হাওয়া এবং গাঢ় কুয়াশা। সকালে ছাদে উঠলেই যেন দার্জিলিং! শুধু বরফটাই যা নেই। শীত, উত্তুরে হাওয়া, কুয়াশার ত্র্যহস্পর্শে দাঁতে দাঁতে লেগে যাচ্ছে মানুষের।

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন নিয়ে এ দিন কোথাও তেমন গোলমাল না হওয়া স্বত্ত্বেও নদিয়ার পথঘাট ছিল অনেকটা সুনসান। বেশির ভাগ বাড়ির দরজা-জানালাও খোলা হয়নি। নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া লেপ-কম্বল ছাড়েননি অনেকেই। দুপুর দুটো নাগাদ কুয়াশা কেটে রোদ ওঠে। তাকে অবশ্য রোদ নয়, নরম কমলা আলো বলাই ভাল।

সকালে নবদ্বীপ খেয়াঘাটের ছবিটা ছিল ঘাবড়ে দেওয়ার মতো। কোথায় ঘাট, কোথায় নদী। সামনে দুর্ভেদ্য সাদা ধোঁয়া পাঁচিল তুলেছে। কয়েক হাত দূরের জিনিসও দেখা যাচ্ছে না। বেশ কিছুক্ষণ ফেরি চলাচল ব্যাহত হয় নবদ্বীপ, মায়াপুর, স্বরূপগঞ্জের মধ্যে। বহু মানুষ খেয়াঘাটে গিয়ে আটকে পড়েন। বেলার দিকে কুয়াশা হালকা হলে নৌকা চলাচল শুরু হয়।

কুয়াশার সম্পর্ক দুর্ঘটনার একটা বেশ ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। ফলে বাস বা গাড়ি চলাচলও সকালে ছিল কম। বাস চালকেরা জানাচ্ছেন, শুক্রবার রাতে কুয়াশা তুলনায় কম ছিল। কিন্তু এ দিন সকালে বিশেষ করে রাস্তার ধারে পুকুর, জলাশয় বা চাষের খেত থাকলে কথাই নেই। চাপ-চাপ কুয়াশা মেঘের মতো ঘিরে রয়েছে চারপাশ।

নদিয়া জেলা বাসমালিক সমিতির তরফে অসীম দত্ত জানান, ‘‘কুয়াশা সব সময়েই উদ্বেগের। সকালের দিকে বেশির ভাগ রুটের বাসের চালকই সমস্যায় পড়েছেন। তা ছাড়া একদম যাত্রী থাকছে না। ফলে বাসের সংখ্যা কমাতেই হচ্ছে। চালকদের বলেছি, গাড়ির গতি ঘণ্টায় কুড়ি থেকে পঁচিশ কিলোমিটারের মধ্যে রাখতে।”

তাপমাত্রার নাটকীয় পতনে উত্তুরে হাওয়ায় চ্যালঞ্জের মুখে পড়েছেন পর্যটকেরাও। শীতের শনিবার, অনেক স্কুলে ছুটিও পড়ে গিয়েছে, তবু নবদ্বীপ সুনসান। মায়াপুরের ইস্কন চত্বর থেকে নবদ্বীপের মহাপ্রভু মন্দির পর্যন্ত লোকজন প্রায় নেই বললেই চলে।

তবে দারুণ খুশি শীত পোশাকের কারবারিরা। পুজোর পর থেকেই তাঁরা সোয়েটারে-চাদরে দোকান সাজিয়েও তেমন বিক্রিবাটা করতে পারছিলেন না। কিন্তু গত তিন দিনে ছবিটা আমূল বদলে গিয়েছে। হাওয়া অফিসের পূর্বাভাসে রাজ্য জুড়ে জাঁকিয়ে শীত পড়ার কথা শোনা ইস্তক তাঁদের মুখে চওড়া হাসি। তবে বোরোধানের বীজতলা নিয়ে উদ্বেগ ক্রমশ বাড়ছে চাষিদের। কেন না এমন আবহাওয়া থাকলে বীজতলার ধানগাছ এক সপ্তাহের মধ্যে হলুদ হয়ে যাবে। ঠেকানোর উপায় নেই। তাঁরা এখন ঝলমলে রোদ্দুরের প্রার্থনায়।

অন্য বিষয়গুলি:

Weather Nadia
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy