Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

সাফল্যের পথ দেখাল সবুজ সাথীর সাইকেল

এবারের পাস করা ছাত্রীদের মধ্যে একজন তহেদা খাতুন। বাড়ি প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে উলাডাঙা গ্রামে। বাবা সাইদুর রহমান ফেরিওয়ালা। মা মাহমুদা বিবি বলছেন, “লেখাপড়া শিখতে পারিনি আমরা। তাই দুই মেয়েকে স্কুলে পড়াতে চেয়েছি। দূরের স্কুল। স্কুল থেকে  সাইকেল পাওয়ায় দুই বোনের স্কুল যেতে পেরেছে।’’

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

বিমান হাজরা
সাগরদিঘি শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২০ ০৩:৫৭
Share: Save:

ঘাটমাঠ পেরিয়ে স্কুল যাওয়াই ছিল বেশ শক্ত কাজ। বাড়িতেও বারণ করত। কিন্তু সবুজ সাথীর সাইকেল পাওয়ার পরে রাস্তা ছোট হল। আর তাতেই নম্বর পাওয়াও হল সহজ।

উদাহরণ, সাগরদিঘির গণ্ডগ্রামের গার্লস হাই মাদ্রাসা। দূরত্বের কারণে মেয়েদের স্কুলছুটই যেখানে ছিল ভবিতব্য, সেখানে সবুজ সাথীর সাইকেলে চড়ে নিয়মিত স্কুলে যাতায়াতেই এল বড়সড় সাফল্য। এবারই প্রথম হাইমাদ্রাসা পরীক্ষায় বসে ২৮ জন ছাত্রীর মধ্যে ২৮ জনই পাশ করল রণজিতপুর বেগম জাহানারা মেমোরিয়াল গার্লস হাইমাদ্রাসায়। যা দেখে সাগরদিঘির বিডিও শুভজিত কুণ্ডু বলছেন, “ওই রকম পিছিয়ে পড়া গণ্ডগ্রামে মেয়েদের এই উত্তরণ নজিরবিহীনই নয়, পিছিয়ে পড়া অন্য এলাকাকেও তা

পথ দেখাবে।”

শিক্ষায় পিছিয়ে থাকা এলাকায় মেয়েদের এই সাফল্যে উচ্ছ্বসিত গোটা এলাকা । গ্রামেরই প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক বদরুল আলম বলছেন, “পিছিয়ে পড়া গ্রামে স্কুলছুটই ছিল মেয়েদের কপাল লিখন। অধিকাংশ পরিবারেই ওই গার্লস স্কুলে প্রবেশ প্রথম প্রজন্মের। সেখানে ১০০ শতাংশ সাফল্য তো চমকে দেওয়ার মতই ফল। শুধু রণজিতপুর নয়, গার্লস মাদ্রাসার পড়ুয়াদের এই কৃতিত্বে খুশি উলাডাঙা, অমৃতপুর, ডিহিবরজ, ভুপেন্দ্রনগর, মথুরাপুরের গ্রামবাসীরাও।”

এই সব গ্রামের ছেলেমেয়েদের স্কুল বলতে ছিল গৌরীপুর, কাবিলপুর অথবা ভাগীরথী পেরিয়ে লালগোলার রাজারামপুর। দূরত্বের কারণে ছেলেরা স্কুলে গেলেও মেয়েদের পক্ষে কাদা ভেঙে দূরের স্কুলে যাওয়ার চল ছিল না বললেই চলে। সেই থেকে গণ্ডগ্রামে মেয়েদের জন্য গার্লস স্কুলের ভাবনা। স্কুল গড়তে ৩৯ শতক জমি দেন এলাকারই আমিনুল ইসলামের পরিবার। ২০১০ সালে অনুমোদন পেলেও সে স্কুল চালু করতে কেটে যায় আরও চারটি বছর।

স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা তনুশ্রী কাঁড়ার বলছেন, “কয়েক মাস ধরে বিভিন্ন গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্কুল ছুট ও প্রাথমিক পাস ছাত্রীদের ডেকে এনে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করে প্রথম মাদ্রাসা চালু হয় গ্রামেরই প্রাথমিক স্কুলে ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি। পরে ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে ত্রিতল নয়া স্কুল ভবন। দু’বছর আগেই অনুমোদন পায় দশম শ্রেণি পর্যন্ত হাইমাদ্রাসার। এবারই প্রথম পরীক্ষা দিয়েছিল হাইমাদ্রাসার ২৮ জন ছাত্রী। পাস করেছে সকলেই।” ছাত্রীর সংখ্যা ৩৮০ জন। শিক্ষিকা ৫ জন। বিজ্ঞান শাখার কোনও শিক্ষিকা নেই, নেই আরবির শিক্ষিকাও। নেই কম্পিউটার।

এবারের পাস করা ছাত্রীদের মধ্যে একজন তহেদা খাতুন। বাড়ি প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে উলাডাঙা গ্রামে। বাবা সাইদুর রহমান ফেরিওয়ালা। মা মাহমুদা বিবি বলছেন, “লেখাপড়া শিখতে পারিনি আমরা। তাই দুই মেয়েকে স্কুলে পড়াতে চেয়েছি। দূরের স্কুল। স্কুল থেকে সাইকেল পাওয়ায় দুই বোনের স্কুল যেতে পেরেছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

sabuj sathi cycle hs exam
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy