Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
Cinema hall

কোন সিনেমা হল খুলবে কবে, প্রতীক্ষা

গত মাসের শেষ দিকে রাজ্য সরকার সিনেমা হল খোলার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করার পরেই বিভিন্ন হলে কর্মীরা ফিরে এসেছেন। ঝাড়পোঁছ শুরু হয়েছে।

সঙ্গীতা সিনেমা হল। নিজস্ব চিত্র

সঙ্গীতা সিনেমা হল। নিজস্ব চিত্র

শেষ আপডেট: ০২ অক্টোবর ২০২০ ০৬:০৬
Share: Save:

আশ্বিনে পুজো না হোক, অক্টোবরের শুরুতেই সিনেমা হল খুলে যাবে বলে আশা করেছিলেন অনেকেই। কিন্তু আজ, অক্টোবরের প্রথম শুক্রবার মাল্টিপ্লেক্স বা সিঙ্গল স্ক্রিন কোনও হলই খুলছে না। কেননা বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত নদিয়ার কোনও সিনেমা হলেই এই মর্মে কোনও নির্দেশিকা পৌঁছয়নি। রুপোলি পর্দার সাক্ষাৎ পেতে সিনেমামোদীদের অন্তত দু’তিন সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হবে।

মার্চে লকডাউনের শুরু থেকেই সমস্ত সিনেমা হল বন্ধ। টানা ছ’মাস হয়ে গেল। সিনেমা হলে গিয়ে দল বেঁধে ছবি দেখার বদলে কানে ইয়ারপ্লাগ গুঁজে মোবাইলের স্ক্রিনে একা-একা ওয়েব সিরিজ় বা ওয়েব ফিল্ম দেখাটাই এখন ‘নিউ নর্ম্যাল’। খুব জোর ফোন থেকে টিভিতে ‘স্ট্রিমিং’ করে কয়েক জন মিলে দেখা। তাতে অনেকে মিলে হইচই করে বা বড় পর্দায় সিনেমা দেখতে যাওয়ার আনন্দ যেমন নেই, প্রেক্ষাগৃহের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা বসে গিয়েছেন। মালিকদের লোকসান তো হচ্ছেই।

গত মাসের শেষ দিকে রাজ্য সরকার সিনেমা হল খোলার সিদ্ধান্তের কথা ঘোষণা করার পরেই বিভিন্ন হলে কর্মীরা ফিরে এসেছেন। ঝাড়পোঁছ শুরু হয়েছে। যন্ত্রপাতি মেরামত হচ্ছে। কিন্তু করোনাকালে পারস্পরিক দূরত্ববিধি বজায় রেখে কত জন দর্শককে কী ভাবে ঢুকতে দেওয়া যাবে, কম দর্শক ঢুকতে দিলে লোকসান এড়াতে টিকিটের দাম কী হবে— এ রকম নানা বিষয় এখনও অস্পষ্ট। তা ছাড়া শহরতলির ট্রেন এখনও চালু হয়নি। ফলে তড়িঘড়ি সিনেমা হল খোলার ব্যাপারে দ্বিধাগ্রস্ত অনেক হল মালিকও।

নবদ্বীপের ‘আলোছায়া’ হলের মালিক ত্রিলোচন ভট্টাচার্য বলেন, “ট্রেন চলছে না। ফলে পোস্টার বা অন্য জিনিসপত্র আনার জন্য কলকাতা যাওয়া সম্ভব নয়। তাই এই শুক্রবার থেকে হল খুলব না বলে আগেই ঠিক করেছিলাম। এখন কেন্দ্র নির্দেশ দিয়েছে, আগামী ১৫ অক্টোবর থেকে হল খোলা যাবে। পরিস্থিতি যদি শো চালানোর মতো হয়, যদি সব সহায়তা পাওয়া যায়, তা হলে সব হলের মতন আমার হলও চলবে।”

কৃষ্ণনগরের মাল্টিপ্লেক্স কর্তৃপক্ষ জানান, তাঁদের পুরোপুরি প্রস্তুত হতে আরও কিছুদিন লেগে যাবে। ঝাড়পোঁছ থেকে স্যানিটাইজ়ার ট্যানেল বসানো, কাজ তো কম নয়। তেহট্টের ‘প্রান্তিক’ সিনেমা হলের মালিক রাকেশ সিংহ বলেন, “বহুদিন বন্ধ থাকায় বিদ্যুৎ সংযোগ সংক্রান্ত কিছু সমস্যা হচ্ছে। মেরামতির জন্য কলকাতার মিস্ত্রি ডাকা হয়েছে। সারাই হলেই শো চালু হবে।” সিঙ্গল স্ক্রিন হলগুলির এমনিতেই খারাপ অবস্থা চলছে বহু দিন। রানাঘাটের ‘প্রামাণিক’, পায়রাডাঙার ‘সারদা’ এবং চাকদহের ‘লক্ষ্মী’ সিনেমা হল আগেই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। তবে রানাঘাটের ‘সুরেন্দ্র’, ‘রানাঘাট টকিজ’ এবং চাকদহের ‘ভারতী’ সিনেমা হল ফের খোলার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

‘সুরেন্দ্র’ সিনেমা হলের ম্যানেজার দেবকুমার ঘোষ বলেন, “আমাদের এখানে ১২০০ আসন। আগে রোজ গড়ে ৩০০ দর্শক হত। হিট হিন্দি সিনেমার ক্ষেত্রে কয়েক দিন হল প্রায় ভরে যেত। এ বার শোনা যাচ্ছে, অর্ধেক আসনে দর্শক বসানো যাবে। তাতে আমাদের খুব একটা অসুবিধা হবে না। তবে সিনেমা শো চালুর আগে ট্রেন চালু হলে ভাল হয়। আমাদের অনেক দর্শকই ট্রেনে আসেন।।”

‘ভারতী’ সিনেমা হলের কর্মী অনুপ বসাক বলছেন, “আমাদের এখানে প্রায় ৯০০ আসন রয়েছে। লকডাউনের আগে শতকরা ৩০ ভাগ আসনে দর্শক হত। এখন ৫০ শতাংশ আসন নিয়ে হল খুললে অসুবিধা নেই। দর্শকদেরও উৎসাহ রয়েছে।” সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন,“এতদিন পুরো বেকার বসে আছি। হল খুললে সংসারের অভাব কিছুটা ঘুচবে।” কল্যাণীর একমাত্র বড় সিনেমা হল ‘সঙ্গম’। শোনা যাচ্ছে, সব কিছু ঠিকঠাক চললে ১৬ অক্টোবর থেকে চালু হবে ওই হল। কর্মী বিশ্বজিৎ বাগ বলন, “কয়েক দিনের মধ্যেই হল পুরোপুরি সানিটাইজ় করা হবে।”

দর্শকদের অনেকেই কিন্তু দিন গুনছেন। শিমুরালির বাসিন্দা আসিত সিকদার বলেন, “ছোটবেলায় স্কুল পালিয়েও সিনেমা দেখেছি। সাতসকালে টিকিট কাউন্টারে লাইন দিয়েছি। ব্ল্যাকে টিকিট কেটেছি। সিনেমা বন্ধ থাকায় খুব খারাপ লাগছে।” কৃষ্ণনগরের বাসিন্দা, দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী তনুশ্রী দত্তের আক্ষেপ, “সিনেমা হল-টল না খুললে কিছুতেই জীবন স্বাভাবিক হচ্ছে না। কত দিন এমন দম বন্ধ করে বসে থাকব?” নবদ্বীপের ভাস্কর হালদারের প্রশ্ন, “সবই যখন বিধি মেনে খুলে দেওয়া হচ্ছে তখন সিনেমা হল খুলতে আপত্তি কেন?” কল্যাণীর কাকলি মজুমদার বলছেন, “সঙ্গম মাল্টিপ্লেক্সে মাসে অন্তত এক বার যেতাম। হল খুললে ফার্স্ট ডে ফার্স্ট শো অবশ্যই দেখব।”

অন্য বিষয়গুলি:

Unlock5 Cinema Hall
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE