Advertisement
E-Paper

পর্যটনে ভারতসেরা গ্রাম, মুসলিমদের দান করা জমিতেই অধিষ্ঠান দেবী কিরীটেশ্বরীর

বর্তমানে মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ ও শ্রীবৃদ্ধির দায়িত্ব রয়েছে মন্দির কমিটির উপর। কমিটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্যই মুসলিম। মন্দিরের জন্য জমিও দান করেছেন মুসলিম গ্রামবাসীরা।

Villagers of Kiriteswari of Murshidabad district are happy as selected by the Ministry of Tourism as the best tourism village of India

নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী। ছবি: সংগৃহীত।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:৩৫
Share
Save

ভাগীরথীর পশ্চিম পারে জঙ্গলাকীর্ণ নানা মন্দির অধ্যুষিত গ্রাম কিরীটকণা। বেশ কিছু প্রাচীন মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ মনে করিয়ে দেয় পূর্ব গৌরবের স্মৃতিকথা। ধর্মীয় বিশ্বাস মতে, দক্ষযজ্ঞে সতীর কিরীট (মুকুট) পতিত হয়েছিল এই স্থানে। তাই এই গ্রাম শাক্ত সাধনার অন্যতম স্থল। প্রতিষ্ঠিত দেবী কিরীটেশ্বরী হিসেবে সমাদৃত। বৈষ্ণব ধর্মের অন্যতম পীঠস্থান ডহপাড়ার কয়েক কিলোমিটার দূরে কিরীটকণা গ্রামের অবস্থান। লোকমুখে যার পরিচিতি কিরীটেশ্বরী গ্রাম নামেই।

গ্রামের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম বাসিন্দাদের সাহচর্যে রক্ষিত হচ্ছে হিন্দু ধর্মের শক্তিপীঠ। এর পরিচালন কমিটিতেও রয়েছেন একাধিক মুসলিম সদস্য। আর সেই সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গ্রামের মুকুটে এসেছে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা। ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রকের তরফ থেকে মিলেছে ‘বেস্ট ট্যুরিজ়ম ভিলেজ অফ ইন্ডিয়া’ খেতাব। দেশের ৭৯৫টি আবেদনের মধ্য থেকে ভারত সেরার শিরোপা চিনিয়ে নিয়েছে মুর্শিদাবাদের প্রান্তিক গ্রাম কিরীটেশ্বরী। আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর দিল্লি থেকে মিলবে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গ্রামের বাসিন্দাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তাঁর এক্স হ্যান্ডলে (সাবেক টুইটার) বৃহস্পতিবার লিখেছেন, ‘‘আনন্দের সঙ্গে জানাচ্ছি, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলার কিরীটেশ্বরীকে ভারত সরকারের পর্যটন মন্ত্রক ভারতের সেরা পর্যটন গ্রাম হিসেবে নির্বাচিত করেছে। দেশের ৩১টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল থেকে প্রাপ্ত ৭৯৫টি আবেদনের মধ্যে ২০২৩ সালের ‘সেরা পর্যটন গ্রাম প্রতিযোগিতা’ হয়েছিল। সেখানেই এই নির্বাচন হয়েছে৷ আগামী ২৭ সেপ্টেম্বর নয়াদিল্লিতে হবে পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠান। আমি ওই গ্রামের বাসিন্দাদের অভিনন্দন জানাই। জয় বাংলা!’’

জনশ্রুতি, পলাশির যুদ্ধের পর যখন মিরজাফর তাঁর অন্যতম সঙ্গী রাজা রাজবল্লভকে ডুবিয়ে মারেন, সে দিন এই মন্দিরের এক শিবলিঙ্গ নাকি নিজে থেকেই ফেটে গিয়েছিল। মিরজাফর শেষ বয়সে কুষ্ঠ রোগাক্রান্ত হন। তিনি তখন নাকি অনুশোচনায় দগ্ধ হচ্ছেন। তাঁর বিশ্বাস জন্মায়, দেবীর চরণামৃত পান করলে তিনি রোগমুক্ত হবেন। দেবীর চরণামৃত যখন তাঁর কাছে পৌঁছয়, তখন সুবে বাংলার নবাব শেষ নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। দেবীর চরণামৃত মুখে নিয়েই নাকি প্রয়াত হন বাংলার ইতিহাসের অন্যতম বিতর্কিত চরিত্র মিরজাফর। ইতিহাস বলছে, ১৪০৫ সালে দেবীর প্রাচীন মন্দিরটি ভেঙে পড়ে। তার পরে ১৯ শতকে লালগোলার রাজা দর্পনারায়ণ রায় নতুন মন্দির নির্মাণ করান। ভাগীরথীর তীরে এই দেবস্থানে কালীপুজোর দিন হাজার হাজার শাক্ত-বিশ্বাসীর সমাগম হয়।

ইতিহাস থেকে আরও জানা যায়, লালগোলার রাজা ভগবান রায়, মুঘল সম্রাট আকবরের থেকে এই মন্দির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব পান। ভগবান রায়েরই বংশধর ছিলেন দর্পনারায়ণ। দুর্গাপুজো, কালীপুজো ছাড়াও এখানে দেবীর বিশেষ পুজো হয় মাঘ মাসের রটন্তী অমাবস্যায়। পৌষ মাসের প্রতি মঙ্গলবার এখানে একটি বিশেষ মেলা বসে। সেই মেলার সূচনা রাজা দর্পনারায়ণের আমল থেকেই।

নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী মন্দির।

নবগ্রামের কিরীটেশ্বরী মন্দির। ছবি: সংগৃহীত।

বর্তমানে মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ এবং শ্রীবৃদ্ধির দায়িত্ব রয়েছে মন্দির কমিটির উপর। কমিটিতে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক সদস্য মুসলিম। আদপে হিন্দু শাক্ত পীঠস্থান হলেও সর্ব ধর্মের সমন্বয়ের অন্যতম দৃষ্টান্ত এই কিরীটেশ্বরী। যে সৌভ্রাতৃত্বের ধারা ঐতিহাসিক সময় থেকে শুরু হয়েছিল, ভাগীরথীর স্রোতের সাথে আজও তা বহমান। মন্দিরের সেবাইত সূত্রে জানা গিয়েছে, মুকুন্দবাগ গ্রাম পঞ্চায়েতের বাসিন্দা প্রয়াত আব্দুল হাকিম মণ্ডলের ইচ্ছা অনুসারে তার পুত্রেরা মন্দির সংলগ্ন জমিটি দান করেছিলেন। দান করা সেই জমির একাংশেও গড়ে উঠেছে একটি মন্দির। গঙ্গার পূর্ব পারের নহবত আর সানাইয়ের সুরের সঙ্গে পশ্চিমপারের ঘণ্টা-কাঁসরের শব্দ মিশে সম্প্রীতির এক অনন্য সুর তৈরি করেছে। সেই গ্রাম ভারতসেরা শ্রেষ্ঠ পর্যটন গ্রামের স্বীকৃতি মেলায় খুশির হাওয়া হিন্দু-মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মধ্যে।

স্থানীয় বাসিন্দা হালিম মণ্ডল বলেন, ‘‘মন্দিরগুলির সংস্কার দ্রুত প্রয়োজন। যে পর্যটকেরা আসেন, তাঁদের থাকার জন্য পর্যাপ্ত আবাস নেই। যোগাযোগের রাস্তাও খুব একটা ভাল না। সরকারি স্বীকৃতি মেলার ফলে এ বার হয়তো হাল ফিরবে।’’ মন্দিরের সেবাইত নেপাল বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘যে ভাবে ভক্ত এবং পর্যটকেরা আসেন, সেই অর্থে এই স্থানের মাহাত্ম্য এবং গুরুত্ব সরকারি স্বীকৃতি পায়নি। দীর্ঘ দিন ধরে সুদিন ফেরার আশায় ছিলাম, আজ খুব খুশি।’’ স্থানীয় ব্যবসায়ী আরমান মণ্ডল বলেন, ‘‘কিরীটেশ্বরী সেরা গ্রামীণ পর্যটনকেন্দ্র হিসেবে কেন্দ্রের স্বীকৃতি পাওয়ায় আমরা খুব আশাবাদী। মন্দির সংস্কার এবং সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি স্তরে পদক্ষেপ করা হলে এলাকার আর্থিক উন্নয়ন হবে।’’

tourism Murshidabad Nabagram

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।