Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
River Erosion

ভাঙন দুর্গতেরা এখনও স্কুলেই

এখন অষ্টম শ্রেণির ক্লাস চলছে। তাদের জন্য মিড ডে মিল রান্না ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে স্কুলের বাইরে।

স্কুলেই সংসার। নিজস্ব চিত্র

স্কুলেই সংসার। নিজস্ব চিত্র

বিমান হাজরা
নিমতিতা শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ০৮:২৬
Share: Save:

পাট্টা পেয়েছেন ৮ মাস আগে, সেই মতো বুঝে পেয়েছেন জমিও। তবু নিমতিতা হাইস্কুলের আশ্রয় শিবিরেই আটকে রয়েছেন শমসেরগঞ্জের ভাঙন দুর্গত ২৪টি পরিবার।

বুধবার স্কুল খোলার ঘোষণায় তাই বিপাকে পড়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। বহু অনুনয় বিনয়েও কাজ হয়নি। স্কুল কর্তৃপক্ষ পারছেন না তাঁদের স্কুল থেকে বের করে দিতে।

নিমতিতা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম বলেন, “সকলেই চলে গেছেন স্কুল ছেড়ে। যে ২৪টি পরিবার এখনও রয়েছে, তারা দখল করে রেখেছে মিড ডে মিলের জন্য বানানো গোটা চত্বর। এখন অষ্টম শ্রেণির ক্লাস চলছে। তাদের জন্য মিড ডে মিল রান্না ও খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে স্কুলের বাইরে। ছোট জায়গা। দেড় ঘণ্টা সময় লাগছে। বুধবার পঞ্চম শ্রেণি থেকে ক্লাস শুরু হবে। দীর্ঘ দিন স্কুল বন্ধ থাকার পর এখন স্কুলে আসার আগ্রহও যথেষ্ট বেড়েছে। এখন হাজিরা ৬০ শতাংশেরও বেশি। স্কুলের পরিস্থিতির কথা চিন্তা করে রান্না সম্ভব নয় বলে জানিয়েছিলাম সমস্ত প্রশাসনিক কর্তাকে। কিন্তু তারা রাজি হননি। ফলে রান্না করতেই হচ্ছে। ৫০ জনের বেশি বসানো যাচ্ছে না। ফলে দেড় ঘণ্টা পার। বর্তমানে স্কুলের মিড ডে মিলের যে ডাইনিং রুম রয়েছে তার আশ পাশে ১০টি ঘরের বারান্দাও নিতে হয় ছেলে মেয়েদের খাওয়ানোর জন্য।

বিড়ি শ্রমিক অধ্যুষিত এলাকা। প্রতিদিন ৯০০ ছাত্র খাবার খায়। ওই সব পরিবার ডাইনিং রুম দখল করে থাকায় সমস্ত বারান্দা সহ এলাকা নোংরা মলমূত্রে ভর্তি। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ বিডিওকে জানিয়েছেন পরিবারগুলিকে হয় সরিয়ে দিন, না হয় দোতলায় তুলে দিন। তা হলে পরিষ্কার ও স্যানিটাইজ় করে ডাইনিং হলে খাবার খাওয়াবার ব্যবস্থা করা যায়। প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘কিন্তু তা না হওয়ায় বেশ সমস্যায় পড়েছি।”

সংবাদ মাধ্যমের কাছে স্কুলের সমস্যার খবর পেয়ে মঙ্গলবার দুপুরেই ওই স্কুলে যান শমসেরগঞ্জের বিডিও কৃষ্ণচন্দ্র মুন্ডা।
তিনি বলেন, “আমি খবর পেয়েই গিয়েছিলাম ওই স্কুলে। ওই সব পরিবারের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারা জমিও পেয়েছে। প্রত্যেকের জমি নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ঘর করার জন্য। ৭০ হাজার টাকা করে তাদের দেওয়া হয়েছে আপাতত একটা মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নিতে। বেশ কয়েকটি পরিবার খুব শীঘ্র তাদের জায়গায় চলে যাবে বলে জানিয়েছে। কয়েকটি পরিবার নিজেদের থাকার ব্যবস্থা এখনও করতে পারেনি। যে জায়গায় ওরা রয়েছে সেটি ছাত্র ছাত্রীদের মিড ডে মিল খাওয়ার জায়গা। স্বভাবতই মঙ্গলবার রাতের মধ্যেই তাদের দোতলার একটি হল ঘরে সরিয়ে দেওয়ার হচ্ছে। যাতে স্কুলের কোনও ব্যাঘাত না ঘটে।”

দেড় বছর আগে শমসেরগঞ্জে গঙ্গা ভাঙনে ধুসরিপাড়া গ্রামটি তলিয়ে যায়। তাদেরই ২৪টি পরিবার সেই থেকেই রয়ে গেছে নিমতিতা স্কুলে।

বনেন্দ্র নাথ সরকার এই শিবিরে রয়েছেন ১৯ মাস। মা, স্ত্রী ও দুই ছেলের সংসারে রাজমিস্ত্রি বনেন্দ্র এখন বিড়ি শ্রমিক। স্বামী, স্ত্রী মিলে ৭০০ মতো বিড়ি বাঁধেন তারা।

দীপক সাহার পরিবার ৬ জনের। বলছেন, “এক কাঠা করে জমির পাট্টা দিয়েছে। জমি চিহ্নিত করেও দিয়েছে। পেয়েছি ৭০ হাজার টাকাও। কিন্তু তা দিয়ে ঘর করা যায়? শীতের সময় ত্রিপল খাটিয়ে থাকাও সমস্যা। তাই অনেকেই যেতে পারছে না নিজেদের পুনর্বাসনের জায়গায়।”

এবিটিএ’র জেলা সভাপতি জুলফিকার আলি এক সময় ওই স্কুলেই শিক্ষকতা করতেন। বলছেন, “বিড়ি শিল্পাঞ্চলে বহু ঘর রয়েছে দুর্গতদের রাখার জন্য। বহু দিন স্কুল বন্ধ। তাই দুর্গতদের অন্যত্র সরানোর ব্যবস্থা করা উচিত প্রশাসনের।”

অন্য বিষয়গুলি:

River Erosion school
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy