Advertisement
০৭ নভেম্বর ২০২৪
Thalassemia Test

থ্যালাসেমিয়ায় পরীক্ষায় পরিবর্তন, উঠছে নানা প্রশ্ন

ত দিন থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় কেন্দ্রগুলিতে সিবিসি ও এইচপিএলসি দুই যন্ত্রের সাহায্যে ওই পরীক্ষা করা হত। তার পর বার হত রিপোর্ট।

থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা।

থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা। —প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।

সুদেব দাস
রানাঘাট শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২৪ ০৫:৩০
Share: Save:

থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়ক পরীক্ষার ক্ষেত্রে নতুন নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর। তাতে রক্তের নমুনা সংগ্রহের পর পরীক্ষার ক্ষেত্রে পদ্ধতিগত পরিবর্তন আনা হয়েছে। বলা হয়েছে, এখন থেকে সব নমুনা পরীক্ষার ক্ষেত্রে ‘কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট’ (সিবিসি)-র পাশাপাশি ‘হাই পারফরম্যান্স লিকুইড ক্রোমাটোগ্রাফি’ (এইচপিএলসি) পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। এত দিন থ্যালাসেমিয়া নির্ণয় কেন্দ্রগুলিতে সিবিসি ও এইচপিএলসি দুই যন্ত্রের সাহায্যে ওই পরীক্ষা করা হত। তার পর বার হত রিপোর্ট। তবে নতুন নিয়ম অনুযায়ী সব ক্ষেত্রে এইচপিএলসি পরীক্ষা না-হলে প্রকৃত অর্থে থ্যালাসেমিয়ার বাহকদের চিহ্নিত করা কী ভাবে সম্ভব হবে, তা নিয়ে চিকিৎসক মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসের শেষের দিকে রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর একটি নির্দেশিকা জারি করেছে। তাতে কী ভাবে সরকারি হাসপাতাল বা প্রতিষ্ঠানগুলোতে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা হবে, তার রূপরেখা উল্লেখ করে দেওয়া হয়েছে। কেন এই নিয়মের পরিবর্তন? রাজ্যের হেলথ সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ) চিকিৎসক সোমনাথ মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বছরে কয়েক কোটি টাকা ব্যয় করে সমস্ত নমুনার ক্ষেত্রে এইচপিএলসি পরীক্ষা করা হত। অহেতুক খরচ কমাতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।’’

তবে রাজ্যের এই সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হতে পারেননি জেলায় জেলায় থাকা থ্যালাসেমিয়া নির্ণায়ক কেন্দ্রের চিকিৎসক ও কর্মীরা। তাঁদের দাবি, কখনোই সিবিসি যন্ত্রের সাহায্যে রক্তের নমুনা পরীক্ষা করে কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা তা নির্দিষ্ট করে বলা সম্ভব নয়। জানা গিয়েছে, সিবিসি যন্ত্রের রিপোর্ট শুধুমাত্র ‘বিটা‘ ক্যাটাগরির থ্যালাসেমিয়ার ইঙ্গিত দেয়। তা ছাড়া ওই সিবিসি মেশিন থেকে সাধারণত ‘ই‘, ‘এস‘ এবং ‘ডি‘ ক্যাটাগরির থ্যালাসেমিয়া ইঙ্গিত পাওয়া যায় না। নতুন নির্দেশিকায় বলা হয়েছে সিবিসি রিপোর্টে অস্বাভাবিকতা না-থাকলে কোনও ভাবেই এইচপিএলসি যন্ত্রে পরীক্ষা করানোর প্রয়োজন নেই। ফলে ‘বিটা‘ ক্যাটাগরির থ্যালাসেমিয়ার বাহকদের চিহ্নিত করা গেলেও অন্যান্য ক্যাটাগরির থ্যালাসেমিয়ার বাহকদের চিহ্নিতকরণ কী ভাবে হবে, তা নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, শেষ এক বছরে রাজ্যে যে পরিমাণ নমুনা পরীক্ষা হয়েছে তার প্রায় ১০ শতাংশ থ্যালাসেমিয়ার বাহক। আবার ২০১১ সাল নাগাদ থ্যালাসেমিয়া রোগীর সংখ্যা কমাতে রাজ্যের কলেজগুলিতে ছাত্র-ছাত্রীদের (বিশেষ করে ১৮-২৪ বছর বয়সের) এই পরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা হয়। ওয়াকিবহুল মহলের অনেকেই বলছেন, সিবিসি যন্ত্রে রক্তের পরীক্ষা হয়। এইচপিএলসি যন্ত্রে হয় জিন পরীক্ষা। ফলে, কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা তা নিশ্চিত ভাবে জানতে অবশ্যই এইচপিএলসি যন্ত্রের রিপোর্ট আবশ্যক।

এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের হেমাটোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান চিকিৎসক তুফানকান্তি দলুই বলেন, ‘‘এটা ঠিক, শুধুমাত্র সিবিসি যন্ত্রের দেওয়া রিপোর্টে কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহকে কিনা তা কখনই সম্পূর্ণ ভাবে প্রমাণিত নয়।’’ রাজ্যের থ্যালাসেমিয়া প্রোগ্রামের মেন্টর শিক্ষক চিকিৎসক নীলাঞ্জন সিনহা বলেন, ‘‘পলিসি নিয়ে সিদ্ধান্তের বিষয়ে আমার তেমন ভূমিকা নেই। থ্যালাসেমিয়া কন্ট্রোল ইউনিটের দায়িত্বে যাঁরা আছেন, তাঁরা এটা ভাল বলতে পারবেন।’’ আর রাজ্যের হেলথ সার্ভিসের ডেপুটি ডিরেক্টর (অসংক্রামক রোগ) চিকিৎসক সোমনাথ মুখোপাধ্যায়ের যুক্তি, ‘‘আমাদের দেশে ‘বিটা’ থ্যালাসেমিয়ার উপর বেশি নজর দেওয়া হচ্ছে। ‘ই’, ‘এস’, ‘ডি’ ক্যাটাগরি থ্যালাসেমিয়া নিয়ে ভাবনার কিছু নেই। সিবিসি যন্ত্রের রিপোর্টে অস্বাভাবিকতা দেখা দিলে তবেই নমুনা এইচপিএলসি যন্ত্রে পরীক্ষা হবে।’’চিকিৎসকদের একাংশের পাল্টা যুক্তি, পশ্চিমবঙ্গে যে ১০ শতাংশ থ্যালাসেমিয়া বাহক শেষ এক বছরে চিহ্নিত হয়েছে, তাঁদের বেশির ভাগই ‘ই’ ক্যাটাগরির। অথচ সেই পরীক্ষার রিপোর্ট কোনও ভাবেই এইচপিএলসি ছাড়া সম্ভব নয়। অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, রাজ্যে মেলা, খেলা, ক্লাবের জন্য নির্দ্বিধায় অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে। অথচ থ্যালাসেমিয়া নির্ণয়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষার ক্ষেত্রে কেন খরচ কমাতে চাইছে সরকার?উত্তর অজানা।

অন্য বিষয়গুলি:

Health Medical
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE