একুশে জুলাই ঘিরে মুকুল রায়ের সঙ্গে তৃণমূলের নেতাদের বাগ্যুদ্ধ তুঙ্গে উঠেছে।
সোমবার স্বরূপগঞ্জের এক অনুষ্ঠানে গিয়ে ২১-এর সমাবেশকে বিদ্রূপের স্বরে ‘জলসা’- বলে অভিহিত করেন বিজেপি নেতা মুকুল রায়। সোমবারই এর পাল্টা তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, ‘‘শহিদ দিবসকে যাঁরা ‘জলসা’ বলেন তাঁদের কতটা অধঃপতন হয়েছে তা বোঝা যায়।’’ আর মঙ্গলবার নদিয়ায় তৃণমূলের পর্যবেক্ষক রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় মুকুল রায়কে বিঁধে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়েছেন, ‘‘উনি তো তৃণমূলের বড় দায়িত্বে ছিলেন। তখন কেন প্রতিবাদ করেননি?’’
সোমবার কলকাতায় ২১-এর সভার মণ্ডপ তৈরির কাজ শুরু হয়েছে খুঁটিপুজো দিয়ে। তা নিয়ে কটাক্ষ করে মুকুল বলেছিলেন, “একুশের সভা এখন জলসায় পরিণত হয়েছে। টলিউডের লোকজন সামনে বসে থাকেন। ২০১১ সালে মঞ্চে পাগলু নাচ হয়েছে।” এর উত্তরে মুকুল আবার বলেছেন, ‘‘আমি সেই সময় পাগলু নাচের বিরুদ্ধে মত জানিয়েছিলাম কিনা সেটা রাজীববাবুর মনে নেই। আর সেই সমাবেশে মুখ্যমন্ত্রী আমার হাত থেকে মাইক্রোফোন নিয়ে অন্য এক জনের হাতে দিয়েছিলেন।’’
তবে তৃণমূলের অন্দরে অনেকেরই মত, গত বছর পর্যন্ত ২১ জুলাই নিয়ে নদিয়ায় তৃণমূলের অন্দরে যতটা উন্মাদনা ছিল এ বার তাতে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। বিভিন্ন জায়গায় প্রাক ২১ জুলাইয়ের সভাসমিতি হচ্ছে। রাস্তার মোড়ে বক্তব্য রাখছেন স্থানীয় নেতারা। কিন্তু কর্মীদের তেমন উৎসাহ চোখে পড়ছে না বলে অভিযোগ। ফুলিয়ার এক তৃণমূল-কর্মী যেমন বলেই ফেললেন, “প্রতিবার যেমন যাই এ বারও তেমনই যাব। আসলে নেতাদের মধ্যেই তেমন উত্তেজনা দেখছি না। কেমন যেন দম মেরে আছে চার দিকে।” রানাঘাটের এক তৃণমূল কর্মী আবার বলে বসলেন, “এখন হাওয়া ভাল না। আমি ব্রিডেগে গেলাম আর দু’দিন পরে দেখলাম যে, আমার নেতা বিজেপিতে চলে গেলেন। তখন আমার আমও যাবে ছালও যাবে।”
এত দিন নজরকাড়া শোভাযাত্রা করে নবদ্বীপ থেকে তৃণমূল কর্মীরা ব্রিগেডে যেতেন। তার প্রস্তুতি শুরু হয়ে যেত অনেক আগে থেকেই। অথচ, এ বার সেই প্রস্তুতি অদৃশ্য। সেখানে প্রাক শহীদ দিবসের প্রথম সভাটি হয়েছে সবে মঙ্গলবার, নবদ্বীপ স্টেশন ও প্রাচীন মায়াপুর এলাকায়। নদিয়া জেলা বাস মালিক সমিতি সূত্রে জানান হয়েছে, গত বছরও যেখানে প্রায় সাড়ে তিনশো বাস নেওয়া হয়েছিল। এ বছর এখনও পর্যন্ত সেখানে মাত্র একশো বাস বুক করা হয়েছে। হাতে মাত্র
ক’টা দিন।
চাপড়া থেকে শুরু করে রানাঘাট, চাকদহ, করিমপুর, কালীগঞ্জ— কোথাও ২১ জুলাই ঘিরে তেমন উন্মাদনা চোখে পড়ছে না। তৃণমূলের অনেকেই মনে করছেন এর অন্যতম কারণ, নেতৃত্বের সঙ্কট। গত বছরও সেই কাজের দায়িত্ব সামলেছেন গৌরীশঙ্কর দত্ত। এ বার তিনি পদে নেই। নিজেকে অনেকটা গুটিয়েও নিয়েছেন। কৃষ্ণনগরের সাংসদ তথা কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহুয়া মৈত্র ভোটের ফল বেরোনোর পর থেকে বেশির ভাগ সময়ে রয়েছেন দিল্লিতে। জেলার অন্যতম দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা শঙ্কর সিংহ অবশ্য সব আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, ‘‘২১ জুলাইয়ের সব প্রস্তুতি সভায় বিপুল জনসমাগম হচ্ছে। ২১ জুলাইয়ের জনসভায় মানুষ প্রমাণ দেবে যে তারা আমাদের সঙ্গেই আছে।’’
মঙ্গলবার কল্যাণীর সেন্ট্রাল পার্কে ছিল ২১ জুলাইয়ের প্রস্তুতি সভা। কিন্তু সেখানে তেমন গুরুত্ব পেলেন না কল্যাণী ব্লক তৃণমূলের সভাপতি তপন মণ্ডল। এ দিন মঞ্চে অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করার সময়ই শহর তৃণমূলের সভাপতি অরূপ মুখোপাধ্যায় ওরফে টিঙ্কু বলছিলেন, কিছু সাংগঠনিক রদবদল হতে পারে, সেটা ব্লক স্তরে। তার পরই রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শঙ্কর সিংহ কাঁচরাপাড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান পঙ্কজ সিংহের ঢালাও প্রশংসা করেন এবং পঙ্কজের উপরেই একুশে জুলাইয়ের লোক জড়ো করার দায়িত্ব দিয়ে যান। ব্লক তৃণমূলের অনেকেরই এর পর মনে হয়েছে, পরবর্তী ব্লক সভাপতি হবেন পঙ্কজ। এ ব্যাপারে পঙ্কজ বলেন, ‘‘গত লোকসভা ভোটেও আমি নিজের এলাকায় দলকে লিড দিয়েছি। দল যদি আমাকে বড় দায়িত্ব দেয় তা হলে তা-ও পালন করব।’’ আর তপন মন্তব্য করেন, ‘‘মাসখানেক আগেই আমি দায়িত্ব ছাড়তে চেয়ে আবেদন করেছি দলের কাছে। লোকসভা ভোটে দলের ব্যর্থতার দায় আমি নিয়েছি। পঙ্কজ খুব ভাল ছেলে। দল যদি ওঁকে দায়িত্ব দেয় তা হলে খুব ভাল সিদ্ধান্ত হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy