দেবী কাত্যায়নী। ছবি: প্রণব দেবনাথ
কয়েকশো বছরের প্রাচীন পারিবারিক বিগ্রহ। যার ঐতিহাসিক গুরুত্বও কম নয়। পরিবারের লোকজন একদিন দেখলেন, সেই বিগ্রহ উধাও হয়েছে দেবালয় থেকে। বিগ্রহ ফিরে পাওয়ার আশায় কাত্যায়নীর ব্রত শুরু করেন পরিবারের মেয়েরা। এর পর পরে স্বপ্নাদেশ পেয়ে বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে পরিবারের লোকজন উদ্ধার করেন সেই বিগ্রহ। সেই থেকে শান্তিপুরের বড় গোস্বামী বাড়িতে দুর্গাপুজোর সময়ে কাত্যায়নীর আরাধনা হয়ে আসছে। যার বয়সও নেহাত কম নয়। প্রায় সাড়ে তিনশো বছর।
বড় গোস্বামী পরিবার অদ্বৈতাচার্যের বংশধর। তাঁদের কুলদেবতা রাধারমণ জিউ। পরিবার সূত্রে জানা গেল, কষ্টিপাথরে তৈরি এই কৃষ্ণমূর্তি এক সময়ে পূজিত হত পুরীতে ‘দোলগোবিন্দ’ নামে। সেই মূর্তিই পরে বাংলার বারো ভুঁইয়াদের অন্যতম বসন্ত রায় নিয়ে যান যশোরে। মানসিংহের বাংলা আক্রমণের সময়ে পাছে পাঠান সেনারা বিগ্রহ নষ্ট করে দেয় সেই ভয়ে বসন্ত রায় এই বিগ্রহ রাখতে দেন অদ্বৈতাচার্যের প্রপৌত্র তথা বড় গোস্বামী বাড়ির পূর্বপুরুষ মথুরেশ গোস্বামীকে। তিনি সেটি নিয়ে আসেন শান্তিপুরের বাড়িতে। কথিত আছে, তাও প্রায় সাড়ে চারশো বছর আগের কথা। সেখানেই পূজিত হতে থাকে মূর্তি। এর মধ্যেই ঘটে যায় অঘটন। একদিন পরিবারের সদস্যরা দেখেন মন্দির থেকে উধাও বিগ্রহ। বিগ্রহ ফিরে পাওয়ার আশায় বড় গোস্বামী পরিবারের সদস্যেরা দেবী কাত্যায়নীর ব্রত শুরু করেন। পরে পরিবারের এক মহিলা স্বপ্নাদেশ পান রাধারমণের। শান্তিপুরের অদূরে দিগনগরে একটি দিঘিতে পুঁতে রাখা আছে তাঁকে। সেখানে গিয়ে খোঁড়াখুঁড়ির পরে মূর্তি উদ্ধার হয়। নিয়ে এসে ফের মন্দিরে সেই বিগ্রহ প্রতিষ্ঠা করা হয়। বিগ্রহ ফিরে পাওয়ার পরে কাত্যায়নীর পুজো শুরু করেন বড় গোস্বামী পরিবার। সেই থেকে দুর্গাপুজার সময় পরিবারে কাত্যায়নীর পুজো হয়ে আসছে।
পরিবারের সদস্য সত্যনারায়ণ গোস্বামী বলেন, “দেবী দুর্গার আরেক রূপ কাত্যায়নী। আমাদের পরিবারে সেই রূপই পূজিত হয়।’’ জানালেন, তাঁদের এই পুজোর আলাদা কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এখানে দেবীর বাহন ঘোড়ামুখের সিংহ। প্রতিমার দশ হাতের মধ্যে দুটি হাত বড়, আটটি ছোট। দেবীর ডানদিকে থাকেন কার্তিক ও লক্ষ্মী এবং বাঁদিকে গণেশ ও সরস্বতী। পূজো হয় পূর্বপুরুষদের তৈরি পুথি এবং নিয়ম মেনে। সপ্তমী, অষ্টমী, নবমীর দিন ৩৬ রকমের ব্যঞ্জন সহ ভোগ নিবেদন করা হয়। থাকে লাল শাক, কচুশাক সহ মরসুমি বিভিন্ন পদ। ছোলার ডাল থেকে শুরু করে তিন রকমের ডাল, সাদা ভাত, পুষ্পান্ন, পরমান্ন, রসগোল্লা, সন্দেশ ইত্যাদি। পুজোয় নবমীর দিন হয় বিশেষ প্রার্থনা। সেখানে সকলের মঙ্গল কামনা করা হয়। ভোগ রান্না করেন পরিবারের দীক্ষিত বধূরাই। দশমীর সকালে হয় বিসর্জন। বিসর্জনের পর পারিবারিক বিগ্রহ রাধারমনের ভোগ হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy