প্রতীকী ছবি।
মার্চ মাসে লকডাউন চালু হওয়া থেকে জুলাই মাসে আনলক ১ পর্বেও স্কুল-কলেজের পঠনপাঠন বন্ধ রয়েছে। এর পরেও করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে কবে ওই শিক্ষা কেন্দ্রের ক্লাসরুমের তালা খুলবে, তা কেউ জানে না। এই পরিস্থিতিতে পড়ুয়াদের পড়ায় এবং শেখায় বিস্তর ফাঁক থেকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকেই।
ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনা ও পরীক্ষার কথা ভেবে কয়েকটি কলেজ ও কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রছাত্রীদের জন্য অনলাইন ক্লাস শুরু করিয়েছেন। এ ছাড়াও টেলিভিশনে বিভিন্ন চ্যানেলের উদ্যোগে দ্বাদশ থেকে পঞ্চম শ্রেণির বিষয়গুলি নিয়ে আলোচনা উপস্থাপিত হচ্ছে। কিন্তু গ্রামবাংলার কচিকাঁচাদের অনলাইন ক্লাসের সুফল আদৌ মিলছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এখনও কিছু অভিভাবকের বাড়িতে স্মার্টফোন দূরের কথা, সাদা-কালো সাধারণ মোবাইল ফোনই নেই। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের ছেলেমেয়েরা বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছে।
গোয়াস গ্রামের এক অভিভাবক চন্দন মজুমদার বলেন, “মেয়ে স্থানীয় স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। লকডাউনে স্কুল ও টিউশন বন্ধ থাকায় গত প্রায় তিন মাস পড়াও বন্ধ হওয়ার জোগাড়। টিভিতে মাঝে মাঝে তার ক্লাস হয় শুনেছি। কিন্তু বাড়িতে টিভি বা স্মার্টফোন না থাকায় তা দেখতে পারে না। স্কুল চলাকালীন দুইবেলা বই নিয়ে বসার যে আগ্রহ ছিল, তার কিছুই নেই এখন।” করিমপুরের অপর এক অভিভাবক জানান, উচ্চ প্রাথমিক শিক্ষার্থীদের কাছে অনলাইন ক্লাস কতটা আকর্ষণীয় হচ্ছে, তা নিয়েও সংশয় আছে। কারণ গত কয়েক বছর থেকে সিলেবাস ও পাঠ্যপুস্তককে এমন ভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে, যাতে পুরনো মুখস্থ বিদ্যাকে বাদ দিয়ে ছাত্রছাত্রীরা তাদের পঞ্চ ইন্দ্রিয়কে কাজে লাগিয়ে নিজেরাই ক্লাস রুমে বিভিন্ন শিক্ষা সহায়ক উপকরণের সাহায্যে হাতে-কলমে শিক্ষা অর্জন করতে সক্ষম হবে। এতে শিশুর সার্বিক বিকাশ ঘটে। অনলাইনে সে সবের সুযোগ না থাকায় শিক্ষার্থীরা কতটা স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ক্লাসে অংশগ্রহণ করছে, সেটাও ভেবে দেখার। তবে প্রথম শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীদের পরের ক্লাসে তুলে দেওয়ার সরকারি ঘোষণায় তাদের যেটুকু আগ্রহ ছিল, সেটাও শেষ হতে বসেছে।
অনেক অভিভাবকের অভিযোগ, বিশেষ করে প্রাক্ প্রাথমিক, প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয়ের নিচু ক্লাসের পড়ুয়ারা পাশ করিয়ে দেওয়ার কথা জানার পরে অনেকেই বইপত্র গুছিয়ে রেখেছে। সকলকে পাশ করিয়ে দেওয়ায় কিছু ছাত্রছাত্রীর আনন্দ হলেও অনেক ছাত্রছাত্রী আছে যাদের পাঠ্যবইয়ের পড়া অসমাপ্ত থাকায় চিন্তায় রয়েছে। সপ্তম শ্রেণির পাঠ শেষ না করে কী ভাবে অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা শুরু করবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে তাদের। আবার, শিশু পড়ুয়ারা, যারা সদ্য বাংলা বা ইংরেজি বর্ণমালার সঙ্গে স্কুলে পরিচিত হয়েছিল, তারা সকলেই সব কিছু ভুলে গিয়েছে।
এক প্রাথমিক শিক্ষক প্রণব মিস্ত্রি বলেন, “প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়তে আসা ছেলেমেয়েদের মধ্যে অনেকেই নতুন প্রজন্মের শিক্ষার্থী। অনেকের বাড়ির আর্থিক অবস্থা শোচনীয়। বিদ্যালয়ের উপরেই তাদের পড়াশোনা নির্ভর করে। তাদের সমস্যা আরও বেশি।” করিমপুর পশ্চিম চক্রের অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) সোমদেব মজুমদার জানান, সারা বিশ্বব্যাপী এই করোনার প্রকোপ চলছে এবং সংক্রমণ রুখতেই স্কুল-কলেজের ক্লাস বন্ধ রয়েছে। পড়ুয়াদের পড়াশোনার ক্ষতির কথা ভেবে প্রাথমিক বিদ্যালয়েও অনলাইন ক্লাসের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু খুদে পড়ুয়াদের মোবাইল ব্যবহার ও সবার কাছে স্মার্টফোন না থাকার সমস্যায় তা এখনও কার্যকর করা যায়নি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy