বিডিও-র দফতরে নাবালিকা। নিজস্ব চিত্র।
সোয়েটার পরেও যেখানে শীত কাটে না, সেখানে গলগল করে ঘামছে বছর ষোলোর এক নাবালিকা। টোটোর হাওয়া শনশন করে লাগছে। কান-মাথা ঢেকেও যেন স্বস্তি নেই। তার মধ্যেই দাদার হাত ধরে রেখে ঘেমে নেয়ে একশা সেই কিশোরী। এই প্রথম যে সে পরিবারের লোকজনদের বিরুদ্ধে নিজের মত প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে। যে কারণে তাকে বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে যেতে হচ্ছে প্রশাসনের দরবারে। যাদের নামই সে শুনেছে এতকাল, কোনওদিন এমন কোনও প্রশাসনিক ভবনের ভিতরে পর্যন্ত ঢোকেনি। ভয়ে, শীতে কাবু হয়েও সে কিন্তু জেদ ছাড়েনি। সঙ্গে পেয়েছে দাদাকে। আর সে ভাবেই সেই কিশোরী নিজের বিয়ে রুখতে পেরেছে।
এর আগেও নিজের বিয়ে আটকাতে বিডিওর দ্বারস্থ হয়েছে মুর্শিদাবাদের নাবালিকারা। শুক্রবার সেই তালিকায় সংযোজন হরিহরপাড়ার চোঁয়া গ্রামের এক নাবালিকা। বাবা পেশায় রাজমিস্ত্রি। তাঁর নাবালিকা মেয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলেন। বছর ষোলোর ওই নাবালিকা স্থানীয় হাইস্কুলের ক্লাস টেনের পড়ুয়া। নাবালিকার দাবি, তার অমতেই পরিবারের লোকেরা বিয়ের বন্দোবস্ত করছিলেন। নদিয়ার বেতাইয়ে এক যুবকের সাথে তার বিয়ের পাকা কথা হয়েছিল। শুক্রবার ওই নাবালিকার পরিবারের লোকেরা পাত্রের বাড়িতে গিয়েছিলেন অাশীর্বাদ করতে।
সেই সুযোগেই এ দিন দুপুরে ওই নাবালিকা ও তার দাদা ক্লাস ইলেভেনের পড়ুয়া চলে আসে বাড়ি থেকে চার কিলোমিটার দূরে হরিহরপাড়া বিডিও অফিসে। ওই নাবালিকা বিডিওকে জানায়, ‘‘স্যার আমি পড়তে চাই। কিন্তু আমার অমতেই পরিবারের লোকেরা বিয়ের বন্দোবস্ত করছে।’’
নাবালিকার দাদাও বলে, ‘‘বোন কন্যাশ্রীর টাকা পায়। ও পড়তে চায়। আমিও বিয়ে দিতে বারণ করি। কিন্তু পরিবারের লোকেরা আমাদের কথা শোনেনি। তাই বিডিওর দ্বারস্থ হয়েছি।’’
এরপর হরিহরপাড়ার জয়েন্ট বিডিও বিধান মৃধা মোবাইলে কথা বলেন নাবালিকার বাবা-মায়ের সাথে। প্রথমে তাঁরা মেয়ের বিয়ের বন্দোবস্ত করার কথা অস্বীকার করলেও মেয়ে নিজেই বিডিও অফিসে গিয়েছিল, সে কথা জানতে পেরে বিয়ের আয়োজন করার কথা স্বীকার করেন। পরে ওই নাবালিকার বাবা-মা নদিয়া থেকে বাড়ি ফিরলে ওই নাবালিকার বাড়িতে যান ব্লক প্রশাসনের কর্তারা, হরিহরপাড়া থানার পুলিশ ও কন্যাশ্রী যোদ্ধারা। পরিবারের লোকেরা মুচলেকা দেন, মেয়ে সাবালিকা হলে তবেই মেয়ের বিয়ে দেবেন।
নাবালিকার বাবা-মা জানান, অভাবের সংসার তাই ভাল পাত্র পাচ্ছিলাম বলেই বিয়ে ঠিক করেছিলেন।
ব্লক প্রশাসনও ওই নাবালিকার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছে। বিডিও রাজা ভৌমিক বলেন, ‘‘নাবালিকার সাহসিকতাকে কুর্নিশ জানাই। ও যাতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারে তার বন্দোবস্ত করা হবে। আমরা তার পরিবারের লোকেদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তাকে আমাদের কন্যাশ্রী যোদ্ধা দলে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।’’ বিয়ে রদ হওয়ায় স্বস্তিতে নাবালিকা। নাবালিকা বলে, ‘‘যাক বাবা! পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে ভেবে ভাল লাগছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy