নিজস্ব চিত্র।
কয়েক দিন ধরেই কৃষ্ণনগর গেট রোডের জিতেন বিশ্বাসের মেজাজ সপ্তমে চড়ে আছে। সারা দিন দাবদাহের পর সন্ধ্যায় ফুরফুরে হাওয়ায় বসে জনাকয়েক বন্ধু মিলে যে একটু বিয়ার খাবেন সে উপায় নেই।
বিয়ার মিলছে না প্রায় কোনও দোকানেই। এ-দিক ও-দিক যাও বা মিলছে, পছন্দের ব্র্যান্ড নেই, তার উপর বোতল পিছু ৫০-৬০ টাকা বেশি দিতে হচ্ছে বলে অভিযোগ সুরারসিকদের। জিতেন বলেন, “দেখুন তো কী ঝামেলা, আমরা নিয়মিত কাস্টমার, আমাদেরই ফিরিয়ে দিচ্ছে, রাগ হওয়াটা কি অন্যায়?" একই অভিযোগ করছেন আরও অনেকেই। শান্তিপুরের এক যুবক খেপে বললেন, “এ বার তো পয়লা বৈশাখটাই মাটি হয়ে গেল। ঠান্ডা তো দুর অস্ত্, হাতে-পায়ে ধরেও একটা গরম বিয়ারের বোতল পেলাম না কোনও দোকানে।”
কল্যাণী থেকে কালীগঞ্জ, কৃষ্ণগঞ্জ থেকে নবদ্বীপ গোটা নদিয়া জুড়ে মদের দোকান বা ‘অফ শপ’ থেকে পানশালা বা ‘অন শপ’ সর্বত্র এখন বিয়ারের আকাল। সমাজমাধ্যমে এই নিয়ে আক্ষেপ, গজরানি, রসিকতা শুরু হয়ে গিয়েছে। কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের বিখ্যাত কবিতার প্যারডি করে এক জন লিখেছেন, ‘প্রখর দাবদাহে হাঁসফাঁস করছে পাড়া/ কেবল শুনি ভরদুপুরের কড়া নাড়া/ অবনী ফ্রিজে বিয়ার আছে?’
জেলার বিভিন্ন দোকানে-পানশালায় খোঁজ নিয়ে জানা গেল, বিয়ার না মেলার সমস্যা অন্তত মাসখানেকের বেশি চলছে। দোকানিদের আক্ষেপ, গত বেশ কয়েক বছরের মধ্যে এ বারই নাকি গরমে বিয়ারের চাহিদা ও আকাল দুটোই সবচেয়ে বেশি। এক দিকে মাত্রাতিরিক্ত গরম, অন্যদিকে বিয়ারের দাম কিছুটা কমে যাওয়াকেই এ বছর বিয়ারের চাহিদা বাড়ার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন দোকানিরা। চাহিদা আকাশছোঁয়া, এ দিকে দোকানে মাল নেই। হতাশ ক্রেতা ক্ষোভ উগরে দিচ্ছে দোকানির উপরেই। রোজই এই নিয়ে ছোটখাটো গোলমাল হচ্ছে বলে দোকানিরা জানান।
পায়রাডাঙার এক অফ-শপের মালিক সুখেন্দুশেখর পাল জানান, এই গরমে প্রতি দিন যেখানে প্রায় ৩০০ বোতল (অর্থাৎ মাসে ন’হাজার বোতল) বিয়ারের চাহিদা রয়েছে সেই জায়গায় গত এক মাসে তিনি পেয়েছেন মাত্র ৩২৪০টি বোতল। প্রায় একই আক্ষেপ পলাশি অফ-শপ মালিক পিন্টু সাহারও। কৃষ্ণনগরের এক বার কাম রেস্তরাঁর মালিক সঞ্জয় চাকি বলেন, “বিয়ার পাওয়া এখন লটারির টিকিট কাটার মতো হয়ে গিয়েছে। আমরা সরকারি পোর্টালে বুকিং করে বিয়ার পাই। ভাগ্য ভাল থাকলে কোনও দিন পাচ্ছি, আবার কোনও দিন বুকিং করতে গিয়ে দেখছি, স্টক শেষ।” ব্যপক চাহিদাই সমস্যার অন্যতম কারণ বলে মনে করছেন সঞ্জয়। তাঁর আক্ষেপ, বিয়ার জোগান দিতে না পারায় ক্ষতি হচ্ছে রেস্তরাঁ ব্যবসার। অনেকেই বিয়ার না পেলে শুধু শুধু খাবার খেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। বেরিয়ে চলে যাচ্ছেন।
সুখেন্দুর মতো অনেক দোকানি আবার বিয়ারের এই আকালের জন্য ডিস্ট্রিবিউটরদের গাফিলতিকেই দায়ী করছেন। নদিয়া ডিস্ট্রিক্ট লিকার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সৌভিক সরকার বলেন, “জেলার কোন দোকান প্রতি দিন কত বিয়ার পাবে, তার একটা বেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল সরকারি তরফে। তার পরেও দেখা যাচ্ছে, কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নানা ভাবে অতিরিক্ত বিয়ার মজুত করছেন ও কালোবাজারি করছেন। সমবণ্টন হচ্ছে না। এর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা আগেও সরকারের কাছে আবেদন করেছি, আবারও করব।”
তত দিন বৈশাখী সন্ধ্যায় চায়ের ভাঁড়ই ভরসা জিতেনদের!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy