Advertisement
২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

হিন্দু ব্যূহেও ঝড় ওঠেনি বিজেপির

এখন বিজেপির স্থানীয় নেতাদের অনেকেই একান্তে বলছেন, দলের রাজ্যস্তরের নেতা থেকে শুরু করে প্রার্থী নিজেও বিশ্বাস করছিলেন যে  করিমপুর ১ ব্লক হিন্দুপ্রধান এবং গত লোকসভা ভোটে দশ হাজারের মতো লি়ড দিয়েছে, সেখানেই রাখা আছে তুরুপের তাস। হিন্দুরা তাঁদের ভোট দেবেই। ফলে এই ব্লকে রম ঘাম ঝরিয়ে মুসলিম-প্রধান করিমপুর ২ ব্লক নিয়ে তাঁরা মাথা ঘামিয়েছে। 

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

সুস্মিত হালদার
করিমপুর শেষ আপডেট: ৩০ নভেম্বর ২০১৯ ০২:০৩
Share: Save:

নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়ে গিয়েছে। করিমপুরের পাট চুকিয়ে রাতে কলকাতায় ফিরছেন বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদার। আক্ষেপ ঝরে পড়ে তাঁর গলায়— “কংগ্রেস জোট করেছে সিপিএমের সঙ্গে, কিন্তু ভোট করেছে তৃণমূলের হয়ে।”

আপাতদৃষ্টিতে তেমনটা মনে হলেও বিজেপির অন্দরে কিন্তু শোনা যাচ্ছে অন্য কথাও। দলের অনেক নেতাই ব্যক্তিগত আলাপচারিতায় দাবি করছেন, এনআরসি-ভীতি যেমন একটা কারণ, আর একটি অন্যতম বড় কারণ হল হিন্দু ভোট নিয়ে বিজেপির অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস। তাতেই নাকি ভরাডুবির হয়েছে।

এখন বিজেপির স্থানীয় নেতাদের অনেকেই একান্তে বলছেন, দলের রাজ্যস্তরের নেতা থেকে শুরু করে প্রার্থী নিজেও বিশ্বাস করছিলেন যে করিমপুর ১ ব্লক হিন্দুপ্রধান এবং গত লোকসভা ভোটে দশ হাজারের মতো লি়ড দিয়েছে, সেখানেই রাখা আছে তুরুপের তাস। হিন্দুরা তাঁদের ভোট দেবেই। ফলে এই ব্লকে রম ঘাম ঝরিয়ে মুসলিম-প্রধান করিমপুর ২ ব্লক নিয়ে তাঁরা মাথা ঘামিয়েছে।

দলের এক স্থানীয় নেতার কথায়, “আমাদের দলের বড় নেতারা মনে করেছিলেন, কড়া পাকের হিন্দুত্ব সামনে রেখে ভোট করলে হিন্দু ভোট আপনা থেকেই আমাদের বাক্সে এসে পড়বে। তার জন্য বেশি পরিশ্রম করতে হবে না। বরং মুসলিম এলাকা অর্থাৎ করিমপুর ২ ব্লক থেকে কয়েক হাজার ভোট টেনে আনতে পারলেই কেল্লা ফতে হয়ে যাবে।” তাঁদের মতে, সেই হিসাব কষেই করিমপুর শহরে বসে মুকুল রায় করিমপুর ২ ব্লকের বিক্ষুব্ধ তৃণমূল মুসলিম নেতাদের কাছে টানতে চেয়েছিলেন। ভোটের দিন জয়প্রকাশও ৯২ শতাংশ মুসলিম অধ্যুষিত ২ নম্বর ব্লকে মাটি কামড়ে পড়েছিলেন সেই হিসেব কষেই। দলের এক জেলা নেতার আক্ষেপ, “হিন্দু ভোটটাকে আমাদের কিছু নেতা বাবার সম্পত্তি ভেবে বসেছিলেন। এই আত্মবিশ্বাসই শেষ পর্যন্ত আমাদের ডুবিয়ে দিল।”

ভোটের ফলাফলও অনেকটা সেই কথাই বলছে। করিমপুর ১ ব্লকের করিমপুর ১ ও ২ গ্রাম পঞ্চায়েত মূলত হিন্দুপ্রধান এলাকা। করিমপুর ২ পঞ্চায়েত এলাকায় গত লোকসভা নির্বাচনের তুলনায় ১৩৫৬টি ভোট বেড়েছে তৃণমূলের। সেখানে বিজেপির ভোট কমেছে ৪৪৯টি ভোট। একই ভাবে ব্লকের সব ক’টি পঞ্চায়েত এলাকায় উল্লেখযোগ্য ভোট বেড়েছে তৃণমূলের। মাত্র দু’টি পঞ্চায়েত, করিমপুর ১ এবং পিপুলবেড়িয়ায় প্রায় ১০ শতাংশ ভোট বাড়াতে পেরেছে বিজেপি। এই ব্লকে যেখানে তৃণমূল প্রায় সাত হাজার ভোট বাড়িয়েছে, সেখানে বিজেপি বাড়িয়েছে মাত্র প্রায় হাজারখানেক। ভোটবৃদ্ধির পার্থক্য প্রায় ছ’হাজারের মতো।

শুধু এনআরসি-র কারণেই হিন্দু ভোট সরে গিয়েছে, এমন ব্যাখ্যা বিজেপির নিচুতলার নেতাকর্মীদের অনেকেই মানতে নারাজ। তাঁরা বরং বেশি করে দলের রণকৌশলকেই দায়ী করছেন। বিজেপির আরএসএস-ঘনিষ্ঠ এক নেতার আক্ষেপ, উপ-নির্বাচনে তাঁদের পুরোপুরি এড়িয়ে গিয়ে ভোট করা হয়েছে। তাঁর মতে, দু’একটি কট্টর হিন্দু মুখ নিয়ে এসে জনসভা করিয়ে দিলেই হিন্দুরা অনেক বেশি সঙ্ঘবদ্ধ হত। কিন্তু আরএসএসের সংগঠনকে কাজেই লাগানো হয়নি। তার উপরে দলের গোষ্ঠী কোন্দলও বড় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। করিমপুরে বিজেপির অন্দরে কান পাতলেই শোনা যাবে সেই কোন্দলের কথা। সেখানে ৪ নম্বর জেলা পরিষদ কমিটির প্রাক্তন সভাপতি বুদ্ধদেব শীলের সঙ্গে বর্তমান সভাপতি অমল ঘোষদের সম্পর্ক যে কতটা ‘মধুর’ তা সকলেই জানেন। তার সঙ্গে আবার জুটেছে সদ্য বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক সমরেন্দ্রনাথ ঘোষের একটি গোষ্ঠী। এই কোন্দলের সরাসরি প্রভাব পরেছে করিমপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েত নিয়ে গঠিত ৪ নম্বর জেলা পরিষদ কমিটির এলাকায়। ঘটনা হল, এমন কোন্দল করিমপুর ১ ব্লকের প্রায় সমস্ত অঞ্চলেই রয়েছে।

নিচুতলার আর একটি অভিযোগ, জেলা নেতৃত্বের একটি অংশের সঙ্গে কোনও রকম যোগাযোগ না রেখেই নির্বাচনী রণকৌশল তৈরি করেছিলেন প্রার্থী। তিনি এবং মুকুল রায় নিজেদের মতো করে ভোট করেছেন। যে গোষ্ঠীকে ভোট করানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের বিরোধী গোষ্ঠী শুধু নিষ্ক্রিই থাকে নি, কেউ-কেউ নাকি তলায়-তলায় তৃণমূলকে সাহায্য করেছে বলেও অভিযোগ।

শুক্রবার রাতে জয়প্রকাশ অবশ্য পাল্টা বলেন, ‘‘এই সব কথা ঠিক নয়, সর্বশক্তি দিয়ে হিন্দু এলাকাতেও প্রচার করেছি। তবে ভোটের দিন তৃণমূলের রিগিং আটকাতে আমি করিমপুর ২ ব্লকে ছিলাম।’’ বিজেপির নদিয়া উত্তর সাংগঠনিক জেলা সভাপতি মহাদেব সরকারের বক্তব্য, “আমরা বুথভিত্তিক সমীক্ষা করে এই ফলাফলের কারণ বার করার চেষ্টা করছি। তার পরেই এই বিষয়ে কথা বলব।”

অন্য বিষয়গুলি:

NRC BJP KARIMPUR TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy