প্রতীকী ছবি।
সাকুল্যে ছিলেন দু’জন অস্থি চিকিৎসক। কাজের ‘চাপ’ সহ্য করতে না পেরে তাঁরা দু’জনই ইস্তফা দেওয়ায় কার্যত অচলাবস্থা সৃষ্টি হতে চলেছে নদিয়ার জেলাসদরে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। ফলে আজ, সোমবার থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বন্ধ থাকবে অস্থি বিভাগের আউটডোর।
শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের সুপার শচীন্দ্রনাথ সরকার রবিবার বলেন, “আমি ওঁদের ইস্তফাপত্র দু’টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার, তাঁরাই নেবেন।’’ এতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা রোগীরা হয়রান হবেন, সন্দেহ নেই। সুপার বলেন, ‘‘আমাদের কিছু করার নেই। যত ক্ষণ না অস্থি বিভাগে চিকিৎসক পাচ্ছি, আউটডোর বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি।”
শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের দুই হাড়ের চিকিৎসক অঞ্জন সেনগুপ্ত ও শঙ্কর রায় দীর্ঘ দিন ধরেই ডাক্তারের সংখ্যা বাড়ানোর দাবি তুলে আসছেন। তাঁদের বক্তব্য, ১৯৫২ সালের নির্দেশিকা অনুযায়ী এই হাসপাতালে দু’জন হাড়ের চিকিৎসক থাকার কথা। কিন্তু বর্তমানে রোগীর সংখ্যা বেড়েছে অনেক গুণ। রোজ শুধু আউটডোরে দেখতে হয় ছ’শোর কাছাকাছি রোগী। তার উপরে আছে ‘অন কল ডিউটি’। আছে জরুরি বিভাগে, কোল্ড ওটি, ময়নাতদন্ত, স্পুটাম পরীক্ষা। শুধু তা-ই নয়, প্রায় দিনই তাঁদের নানা মামলায় চিকিৎসক হিসেবে আদালতে সাক্ষ্য দিতে যেতে হয়।
অঞ্জন সেনগুপ্ত বলছেন, “সাত বছর ধরে এই হাসপাতালে আছি। একটা দিন ছুটি নিতে পারিনি। কারণ বাকি এক জনের পক্ষে কোনও ভাবেই সবটা সামাল দেওয়া সম্ভব নয়।” শঙ্কর রায়ের বক্তব্য, “শুধু আমাদের উপরেই শারীরিক ও মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে তা নয়, বঞ্চিত হচ্ছেন রোগীরাও। এ ভাবে রোগীদের প্রতি মনযোগ দেওয়া সম্ভব নয়”
গত ৯ জুলাই তাঁরা ইস্তফার কথা জানিয়ে যৌথ ভাবে হাসপাতালের সুপারকে চিঠি দেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ যৌথ চিঠি গ্রহণ না করায় ৩১ জুলাই ফের চিঠি দেন। কিন্তু মাসখানেক ঘুরে গেলেও পরিস্থিতি না পাল্টানোয় ২৯ অগস্ট ফের ইস্তফাপত্র দেন। এ দিন পর্যন্ত তা গৃহীত হয়নি, তবে সোমবার থেকে আর হাসপাতালে যাবেন না বলে দুই চিকিৎসক জানিয়ে দিয়েছেন।
এতে যে সাধারণ মানুষ হয়রান হবেন, তা তাঁরা ভাবছেন না? শঙ্কর বলেন, “মানুষকে সমস্যায় ফেলতে চাইনি বলেই আমরা অনেক আগে থেকে ডাক্তার বাড়ানোর কথা বলে আসছি। তাতে গুরুত্ব দিলে এমন হত না।” তাঁদের মতে, তেহট্ট ও রানাঘাট মহকুমা হাসপাতাল, শান্তিপুর ও নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে অস্থি চিকিৎসকদের উপরে তেমন চাপ নেই। সেখান থেকে ডাক্তার আনা হলে অনেকটা সুরাহা হত। চিকিৎসক বাড়লে তাঁরা চাকরিতে ফিরতে রাজি আছেন বলেও জানিয়েছেন।
জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রেও জানা গিয়েছে, অন্য হাসপাতাল থেকে অস্থি চিকিৎসক এনে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। তবে তার জন্য উপরমহলের অনুমতি প্রয়োজন। সুপার বলেন, “আউটডোর বন্ধ থাকলেও জরুরি ক্ষেত্রগুলি যথাসম্ভব সামলাবেন শল্য চিকিৎসকেরা। তেমন জটিল কিছু হলে অন্যত্র রেফার করে দেবেন।” তবে ওই হাসপাতালে শল্য চিকিৎসকও আছেন মোটে পাঁচ জন। তাঁরাও যথেষ্ট চাপে থাকেন। এঁদের এক জন বলেন, ‘‘নিজেদের কাজের উপরে একটা গোটা বিভাগের দায়িত্ব সামলাব কী করে, বুঝতে পারছি না।”
জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক তাপস রায় বলেন, “বিষয়টি স্বাস্থ্য ভবনকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে যা নির্দেশ দেওয়া হবে, সেই মতো পদক্ষেপ করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy