Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Bamandanga Toll

টোলট্যাক্সে ছাড় নিয়েই যত ঝামেলা

কোনও লরির চালক জানলার ফাঁক দিয়ে নগদ টাকা বের করে দিতেই কর্মীরা হাতে রসিদ ধরিয়ে দিচ্ছে, কেউ আবার ফাস্ট ট্র্যাক টাকা কাটিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সন্দীপ পাল
নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০৯:২৩
Share: Save:

সন্ধ্যা থেকেই কখনও জোরে বৃষ্টি, কখনও ঝিরিঝিরি। তার মধ্যেও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে বেথুয়াডহরি বামনডাঙা টোলগেটে লরি আর অন্য গাড়ির ভিড়।

কোনও লরির চালক জানলার ফাঁক দিয়ে নগদ টাকা বের করে দিতেই কর্মীরা হাতে রসিদ ধরিয়ে দিচ্ছে, কেউ আবার ফাস্ট ট্র্যাক টাকা কাটিয়ে দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে। টাকার অঙ্ক নিয়েও ট্রাক চালকদের সঙ্গে তর্কাতর্কি হচ্ছে কর্মীদের।

গত রবিবার রাতে এই বামনডাঙা টোলগেটেই টাকার অঙ্ক নিয়ে লরি ড্রাইভার ও টোলের কর্মীদের হাতাহাতি শুরু হয়। নিরাপত্তা জন্য টোলের রক্ষী শূন্যে দুই রাউন্ড গুলিও ছোড়েন। পরে নাকাশিপাড়া থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও টোলের কর্মীদের কথায় জানা যায়, শুধু ওই দিন নয়, প্রায়ই এমন পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। কারণ কি?

টোলের কর্মীদের সূত্রে জানা যায়, টোল গেট পেরনোর জন্য লরি পিছু ৪২০ টাকা করে দিতে হয়। ‘ওভারলোড’ অর্থাৎ নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে বাড়তি পণ্য থাকলে তার উপরে দুই থেকে তিন গুণ টোলট্যাক্স ধার্য হয়। কিন্তু স্থানীয় গাড়ির ক্ষেত্রে অর্ধেক ছাড় আছে। তাদের এমনিতে ২১০ টাকা করে দিতে, বাড়তি পণ্য নিলেও সেই হারেই দুই বা তিন গুণ বাড়ে। এই রাস্তায় কলকাতা থেকে উত্তরবঙ্গের পথে নিয়মিত যাতায়াত করা অনেক ট্রাক চালকই এই ‘বৈষম্য’ নিয়ে প্রতিবাদ করেন। স্থানীয়দের মতো কম হারে টাকা দিতে চান। তা নিয়েই গোলমাল বাধে। রবিবার রাতেও তা-ই বেধেছিল।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দুই রকম রেট করার পিছনে আছে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা। এমনিতেই এই টোল গেট চালুর সময়ে দুই তৃণমূল নেতার শিবিরের ছেলেদের মধ্যে কারা কাজ পাবে, তা নিয়ে অশান্তি হয়েছিল। পরে তা মিটলেও স্থানীয় লরির মালিকেরা টোলের পুরো টাকা দিতে বেঁকে বসেন। তাতে ফের অশান্তি শুরু হয়। তার পরেই টোলের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থা স্থানীয় মালিকদের সঙ্গে বসে অর্ধেক টাকা নেওয়ার ব্যাপারে সমঝোতা করেন। বাইরে থেকে আসা লরির ক্ষেত্রে যেখানে ৪২০ টাকার সঙ্গে ওভারলোড নিয়ে ১৮৬০ টাকা দিতে হয়, স্থানীয় মালিকদের দিতে হয় তার অর্ধেক। কিন্তু এখন আবার দূরপাল্লার ট্রাকচালকেরা এই ‘বৈষম্য’ মানতে চাইছেন না। এই নিয়ে প্রায়ই গন্ডগোল বাধছে।

বুধবার সন্ধ্যায় ওই টোলগেটের সামনে দাঁড়িয়ে দূরপাল্লার লরির ড্রাইভার হামিদ শেখ বলেন, "আমরাও পাথর নিয়ে যাচ্ছি আর ওরাও পাথর নিয়ে যাচ্ছে। তবে আমাদের বেশি টাকা কেন দিতে হবে? অন্য টোলগেটে তো এই সমস্যা হয় না!" আবার স্থানীয় পলাশি এলাকার এক লরির মালিক সামিম মণ্ডল পাল্টা বলেন, "আমাদের তো এখান অনেক লরি চলে, তাই অত পরিমাণ টোলট্যাক্স দিলে খুব লোকসান হবে। টোলগেটের ম্যানেজারকে আমরা সেটাই জানিয়েছিলাম। তার পরেই উনি আমাদের ছাড় দেন।“

বেথুয়াডহরি বামনডাঙা টোলগেটের ম্যনেজার অনুপ বলের বক্তব্য, "আমাদের নিয়মেই স্থানীয় গাড়িকে ছাড় দেওয়ার কথা রয়েছে। ওরা তো এই টোলগেটের আওতায় থাকা সম্পূর্ণ রাস্তা সাধারণত ব্যবহার করে না, তাই স্থানীয়দের এই সুযোগ দিতেই হয়।"

অন্যত্রও কি তা-ই দেওয়া হয়?

নদিয়ার পরেই মুর্শিদাবাদের শিব টোলগেটের ম্যনেজার রবি দুবে জানান, তাঁদের ওখানে স্থানীয় লরির জন্য নগদ টাকায় কোনও ছাড় নেই। এক মাত্র ফাস্ট ট্র্যাকের মাধ্যমে টাকা কাটালে তবেই ছাড় পাওয়া যায়। তবে সেই ক্ষেত্রে আগে আবেদন করতে হয়। চাঁদের মোড় টোলে গেটের ম্যনেজার দিলীপ পান্ডেও বলেন, "কোনও ক্ষেত্রেই ছাড় দেওয়া হয় না। শুরুর কুড়ি কিলোমিটারের মধ্যে প্রাইভেট গাড়ির মাসোহারা করা হয়।“ অর্থাৎ টোলট্যাক্সে ছাড় দেওয়ার এই নীতি সর্বত্র অনুসৃত হয় না।

বেথুয়াডহরি টোলগেট এলাকার স্থানীয় লরি মালিকদেরও একাংশের সন্দেহ আছে, এইন ঠিকাদার পাল্টে গেলে এই ব্যবস্থা জারি থাকবে কি না। সামিমদের আশঙ্কা, “টোলের মালিক পরিবর্তন হলে এই নিয়ম পাল্টে যাবে কি না, তা জানা নেই।" বারবার গন্ডগোল হতে থাকলে নিয়ম বদলের দাবিটাও ক্রমশ বড় হয়ে দাঁড়াবে বইকি।

অন্য বিষয়গুলি:

Bamandanga Toll Toll Tax
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy