ট্রেনে ধরতে হুড়োহুড়ি। ডান দিকে, ঝুঁকি নিয়ে ট্রেনে ওঠা। রবিবার কৃষ্ণনগর স্টেশনে। নিজস্ব চিত্র
নতুন নাগরিক আইনের প্রতিবাদের জেরে মুর্শিদাবাদের লালগোলা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ। কৃষ্ণনগর থেকেই শিয়াদহমুখো হচ্ছে লালগোলাগামী ট্রেন। ফলে ভিড়ে উপচে পড়েছে কৃষ্ণনগরের প্লাটফর্ম। তিল ধারণের জায়গা থাকছে না ট্রেনে। অনেকে আবার ভিড় ঠেলে ট্রেনে উঠতে পারেননি। হকারদের অনেকে ভিড়ে ঠাসা ট্রেনে উঠতে না পেরে প্লাটফর্মেই হকারি করছেন। কৃষ্ণনগর স্টেশনে রবিবারের সারাদিনের ছবিটা মোটামুটি এ রকমই।
রবিবার কলকাতায় আসার জন্য পলাশিতে থেকে কৃষ্ণনগরে এসেছিলেন আব্দুস সালাম তরফদার। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ যখন কৃষ্ণনগর স্টেশনে পৌঁছালেন, তখনও তেমন ভিড় ছিল না। কিন্তু ট্রেন প্লাটফর্মে ঢুকতেই পড়িমড়ি করে ছুটে এলেন লোকজন। শেষে অবস্থা এমনই হল যে, ট্রেনে যাঁরা ছিলেন তাঁদের অনেকে প্লাটফর্মে নামতে পারলেন না। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে উল্টোদিকের দরজা দিয়ে নামতে হল। ১২টা ৭ মিনিটের কৃষ্ণনগর লোকাল ধরতে পারেননি আব্দুস সালাম। হতাশ সুরে বললেন, ‘‘চেষ্টা করেছিলাম, কিন্তু ধাক্কাধাক্কির জেরে উঠতেই পারলাম না।’’
ভিড় দেখে এক বছরের শিশুকে নিয়ে ট্রেনে ওঠার সাহস পাননি রত্না সরকারও। পরের ট্রেনের জন্য বসে রইলেন। রত্না বলছেন, ‘‘ট্রেনের এমন গোলমালের কথা জানা ছিল না। এখন পরের ট্রেনে এতটুকু বাচ্চাকে নিয়ে উঠতে পারব কি না সেটাই চিন্তার।’’
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, মুর্শিদাবাদে বহরমপুরের দিকে ট্রেন যাচ্ছে না। রানাঘাট থেকে লালগোলাগামী ট্রেনগুলো বাতিল করা হয়েছে। শিয়ালদহ থেকে লালগোলার ট্রেনগুলো কৃষ্ণনগর পর্যন্ত আসছে। ফলে, সারক্ষণ গমগম করছে কৃষ্ণনগর স্টেশন।
এ দিন প্লার্টফর্মে পা দিতে দেখা গেল, যাত্রীদের কেউ কেউ হিসেব করছেন কোথায় দাঁড়ালে ট্রেনের দরজা সামনে পড়বে। কেউ বা প্লাটফর্ম থেকে নেমে দুই লাইনের মাঝে দাঁড়িয়ে আছেন উল্টো দরজা দিয়ে ট্রেনে উঠবেন বলে। বাদুরঝোলা মতো যাত্রী নিয়ে প্লাটফর্মে ট্রেন ঢুকতেই পরিবেশ গেল পাল্টে। ট্রেনের ভিতরে যাঁরা আছেন, তাঁরা ভিড় ঠেলে বার হতে চান। আর প্লাটফর্মে যাঁরা আছেন তাঁরা ট্রেনে ঢুকতে চান। এই ধাক্কাধাক্কির মাঝে পড়ে কারও জুতো গেল হারিয়ে, কারও জামার বোতাম ছিঁড়ল। এক মহিলা দুই বাচ্চা নিয়ে ট্রেনে উঠতে গিয়ে হাত ফসকাতে ছোটছেলে প্লাটফর্মে পড়ে গেল। কয়েক জন তাকে ধরাধরি করে ট্রেনে তুলে দিলেন।
সপ্তাহ শেষে একদিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি ফেরেন বেথুয়াডহরি থেকে কলকাতায় রাজমিস্ত্রির কাজে যাওয়া মহম্মদ হাসান, ইনদাদুলেরা। ট্রেন থেকে নেমে বাস ধরতে যাওয়ার আগে হাসান বলেন, ‘‘সেই কলকাতা থেকে ঠায় দাঁড়িয়ে। ঠিক মতো দাঁড়াতেও পারিনি। কোমর ব্যথা হয়ে গিয়েছে।’’ বহরমপুরে যাচ্ছিলেন সাহাবুদ্দিন শেখ। তিনি বলেন, ‘‘কোনও মতে দাঁড়ানোর জায়গা পেয়েছি। কিন্তু নড়াচড়ার জায়গা ছিল না। সঙ্গের ব্যাগ পায়ের নীচে রেখে তার ওপর দাঁড়িয়ে এলাম কৃষ্ণনগর পর্যন্ত।’’
অনেক হকার ট্রেনে উঠতে না পেরে প্লাটফর্মেই হকারি করছেন। এক ফল বিক্রেতা সঞ্জিত বাধ্যকর বলেন, ‘‘ভিড় ট্রেনে ফল বেচতে গিয়ে মার খাব নাকি? তাই প্লাটফর্মে বেদানা বিক্রি করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy