প্রতীকী ছবি।
নদিয়ার দক্ষিণে বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের ফল ভাল হয়নি। গয়েশপুর তার ব্যতিক্রম নয়। এই পরিস্থিতিতে আসন্ন পুরভোটের কথা মাথায় রেখেই পদে রদবদল হয়েছে গয়েশপুরে।
গয়েশপুরে পুর প্রশাসকের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এক সময়ের তফসিলি জাতি ও জনজাতি সেলের সভাপতি, পেশায় চিকিৎসক সুরজিৎ সরকারকে। পূর্বতন প্রশাসক মরণকুমার দে-কে কোনও পদেই রাখা হয়নি। তিনি অবশ্য বলছেন, “ক্ষমতায় থাকলাম কি না তাতে আমার কিছু যায় আসে না। দল যে কর্মসূচি দেবে, তা পালন করে যাব।” অন্য দিকে, সুকান্ত চট্টোপাধ্যায়কে তৃণমূলের শহর সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে সেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এত দিনের যুব সভাপতি কৌশিক ঘোষকে। অনেকেই মনে করছেন,গয়েশপুরের দুই যুযুধান শিবিরের হাত থেকে ক্ষমতা ছিনিয়ে নিয়ে তৃতীয় শিবিরের হাতেই ক্ষমতার ভরকেন্দ্র তুলে দেওয়া হয়েছে।
২০১১ সালে রাজ্যে পরিবর্তন হলেও গয়েশপুর বামেদের হাতেই ছিল। ২০১৫ সালে পুর নির্বাচনের পর তা তৃণমূলের হাতে আসে। প্রথম পুরপ্রধান হন তৃণমূলের তৎকালীন শহরের সভাপতি মরণকুমার। ২০১৮ সালের মার্চে তাঁকে সভাপতির পদ থেকে ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুকান্তকে সেই পদ দেওয়া হয়েছিল।
এক সময়ে অবিভক্ত নদিয়া জেলা তৃণমূল সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের সময়ে সুকান্ত গয়েশপুরে ক্ষমতার শীর্ষে চলে আসেন। তৃণমূল সূত্রের দাবি, তখন থেকেই মরণ ও সুকান্তের অনুগামীরা দু’টি শিবিরে ভাগ হয়ে যান। ২০১৯-এ লোকসভা ভোটের পর তৃণমূলের সংগঠন দু’টি জেলায় ভাগ হয়। রানাঘাট সংগঠনিক জেলার সভাপতি হন শংকর সিংহ। গয়েশপুরে শহর সভাপতির পদ পান মরণের ভাই মিন্টু দে। তত দিনে দুই শিবিরের সম্পর্ক একেবারে তলানিতে। মিন্টু দে কিছু দিন থাকার পর ফের সভাপতি পদে ফেরানো হয় সুকান্তকে।
এক দিকে তিনি তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য নেতা পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত ছিলেন। আবার মহুয়া মৈত্রের সঙ্গেও তাঁর সুসম্পর্ক ছিল, যদিও শেষ দিকে সেই সম্পর্কে জং ধরে। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দলের মধ্যেই তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। এ বারের সাংগঠনিক রদবদলে তারই প্রভাব পড়েছে বলে মনে করছেন দলের একাংশ। সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় অবশ্য এই বিষয়ে কোনও কথাই বলতে চাননি।
তৃণমূলের অন্দরের খবর, দুই শিবির যখন নিজেদের দ্বন্দ্ব নিয়ে ব্যস্ত তখন তৃতীয় শিবিরের তরুণ নেতা কৌশিক ঘোষ ধীরে ধীরে জায়গা পাকা করে নিচ্ছিলেন। এক সময়ে সুকান্তের হাত ধরেই ছাত্র রাজনীতি থেকে তাঁর উঠে আসা। কিন্তু সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সুকান্তের সঙ্গে তাঁর মতবিরোধ হচ্ছিল। ফলে সম্পর্কেরও অবনতি হয়। এখন কৌশিকের এই ক্ষমতা পাওয়া নিয়ে দুই শিবিরের অনেক নেতাকর্মীরই আপত্তি রয়েছে।
সুকান্ত-ঘনিষ্ঠ মানিক পাল হয়েছেন পুর প্রশাসনের বর্তমান ভাইস চেয়ারপার্সন। তিনি গয়েশপুর শহরের সহ-সভাপতি ও পুর প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। দলের মধ্যে কেউ কেউ ইতিমধ্যেই বলা শুরু করেছেন যে মানিক এখন সুকান্ত গোষ্ঠীর থেকে দূরত্ব রেখেই চলছেন। মানিক নিজে বলছেন, “দল সর্বাগ্রে। তবে সুকান্ত চট্টোপাধ্যায় আমার পছন্দের মানুষ। কাছের মানুষ।” সে দিক থেকে মরণ গোষ্ঠীর কেউই থাকলেন না পুর প্রশাসনে। তবে তাঁদের সাংগঠনিক শক্তি গয়েশপুরে অনেকটাই বেশি। তাই ভবিষ্যতে তাঁদের কোর্টে বল ফিরলেও ফিরতে পারে বলে মনে করছেন দলের একাংশ।
তবে এই পরিবর্তনের পরেও দুই শিবিরের দ্বন্দ্ব মিটবে না বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। বিধানসভা ভোটের আগে সাংগঠনিক বৈঠকে এসে অবিভক্ত নদিয়া জেলার প্রাক্তন সভানেত্রী মহুয়া মৈত্রও এই নিয়ে উষ্মা প্রকাশ করেছিলেন। বরং প্রকাশ্যে নেতাকর্মীদের অসম্মান, বকাঝকা করে তিনি ভারসাম্য বজায় রাখতে ব্যর্থ হয়েছিলেন বলে দলের অনেকেই মনে করেন।
দলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলার বর্তমান সভানেত্রী রত্না ঘোষ অবশ্য বলেন, “অবিভক্ত জেলার পূর্বতন সভানেত্রী যথেষ্ট দক্ষতার সঙ্গে সংগঠন সামলেছেন।” গোষ্ঠী কাজিয়া প্রসঙ্গে তাঁর , “গয়েশপুরে প্রত্যেকের সঙ্গে আমার আন্তরিক সম্পর্ক রয়েছে। সবাই মিলে এক সঙ্গে কাজ করব।”
নতুন পুর প্রশাসক সুরজিৎ সরকার এবং তৃণমূলের শহর সভাপতি কৌশিকও এখন সকলকে নিয়ে চলার মন্ত্রই আউড়াচ্ছেন। পুরভোট বলবে, মন্ত্রে কাজ হল কি না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy