নজর: কী দিল রাজ্য বাজেট। আগ্রহ ভরে অপেক্ষা বহরমপুরে। নিজস্ব চিত্র
রাজ্য বাজেটে বুক বেঁধেছিল মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূল। সোমবার বাজের পেশের পরে জেলা নেতাদের সেই দম চাপা উদ্বেগ কিঞ্চিৎ হ্রাস পেয়েছে বলেই মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা। রাজ্য বাজেটে ঘোষণা করা এক গুচ্ছ প্রকল্প, জেলার প্রতিটি পুর এলাকায় পিছিয়ে থাকা দলকে খানিক অক্সিজেন জোগাবে বলে আশা করছেন তৃণমূলের মেজ-সেজ নেতারা।
লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে মুর্শিদাবাদের অধিকাংশ পুরসভায় পিছিয়ে রয়েছে তৃণমূল। জেলা সদর বহরমপুর পুরসভায় দ্বিতীয় স্থান দখলে তৃণমূলকে রীতিমত টক্কর দিতে হয়েছে গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে। ফলে পুরভোটের মুখে রাজ্য বাজেটে দু’হাত ভরে প্রকল্প চাইছিল শাসক দল। মুর্শিদাবাদের জন্য নির্দিষ্ট কোনও প্রকল্প না ঘোষণা করা না হলেও রাজ্যের প্রান্তিক মানুষের জন্য ঘোষমা করা প্রকল্পের ঝাঁক যে এই পিছিয়ে পড়া জেলায় আলো পেলছে তা বলাই বাহুল্য। যা একই সঙ্গে স্বস্তি দিয়েছে শাসকদলের জেলা নেতাদের।
চলতি বাজেটে শ্রমিক, ব্যবসায়ী, ক্ষুদ্র কুটির শিল্পের উদ্যোগীদের জন্য প্রকল্প ঘোষিত হওয়ার পাশাপাশি প্রান্তিক মানুষকে নিখরচায় বিদ্যুৎ দেওয়ার মতো প্রকল্প সত্যিই বুঝি ‘হাসির আলো’ হয়ে উঠেছে জেলা নেতাদের কাছে। পুরভোটের প্রচারে এই প্রকল্পগুলিই যে দলীয় প্রচারের ইউনিক সেলিং পয়েন্ট হয়ে উঠবে, বলাই বাহুল্য। সোমবার রাজ্য বাজেট শেষে জেলা তৃণমূল সভাপতি তথা মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান বলছেন, ‘‘আমরা দেখেছি কেন্দ্রীয় বাজেটে এ রাজ্যের বঞ্চনা। রাজ্য বাজেটে একের পর নতুন প্রকল্প সেই কষ্ট মুছে দিয়েছে। এই জনমুখী বাজেটে মানুষের উপকার হবেই, দেখবেন। দলেরও উপকার হবে।’’ তাঁর দাবি, আসন্ন পুর-নির্বাচনে রাজ্য সরকারের দু’হাত ভরে প্রকল্প দেওয়ার কথাও বলবেন তাঁরা। তিনি বলছেন, ‘‘আমরা আশাবাদী, আসন্ন পুরসভা নির্বাচনে সুফলও পাব।’’ জেলা কংগ্রেস অবশ্য মনে করছে পুরভোটের আগে এ বাজেট নিছক ‘ধোঁকা’। বহরমপুরের কংগ্রেস বিধায়ক মনোজ চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘বাজেটে আয় ব্যয়ের সমতা নেই। পুরভোটের আগের রাজ্য সরকার ধোঁকাবাজির বাজেট পেশ করেছে।’’ তাঁর প্রশ্ন, ‘‘এত দিন পরে কেন আদিবাসী ও তপশিলী জাতির লোকজনকে পেনশন দেওয়া হচ্ছে, আমরা তো অনেক আগেই পেনশন দেওয়ার কথা বলেছি।’’ বিজেপি’র জেলা সাধারণ সম্পাদক তপন চন্দ্রের দাবি, ‘‘তৃণমূল ভোটের রাজনীতি করে। তাই ভোট এলেই বাজেটে নানা ঘোষণা করে। কিন্তু বাস্তবে কোনও প্রকল্প দেখা যায় না।’’ বেকারত্ব দূরীকরণ থেকে শিল্পায়নের প্রশ্নে রাজ্য বাজেটের সিপিএম সমালোচনা করেছে। সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তুষার দে বলছেন, ‘‘সার্বিক উন্নয়নের প্রশ্নে, বেকারত্ব দূরীকরণ থেকে শিল্পায়ণ, জীবনের মানোন্নয়নের প্রশ্নে এ দিনের বাজেট দিশা দেখাতে পারল কই!’’
চলতি বছরে মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে পঠনপাঠন শুরু হওয়ার কথা। জেলার লোকজন তাকিয়ে ছিল বিশ্ববিদ্যালয় চালু করা নিয়ে কী বলে রাজ্য সরকার। রাজ্যের অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ে কথা বলেননি। তবে বাজেট শেষে সাংবাদিক বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, মুর্শিদাবাদে বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে। বাজেট বক্তৃতায় মুর্শিদাবাদে পর্যটনের উন্নয়নের জন্যও কোনও বার্তা নেই।
পেঁয়াজ সংরক্ষণ কেন্দ্রের আশ্বাস থাকলেও বাজেট বক্তৃতায় তেমন কথা শোনা যায়নি। ফলে দিন কয়েক আগে জেলায় প্রশাসনিক বৈঠকে যে আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী দিয়ে গিয়েছিলেন তা নিয়ে ধোঁয়াশা থেকেই গেল বলে মনে করছেন বিরোধীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy