তাঁর নাম নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়ানোর পিছনে দলের একাংশকে দায়ী করে এসেছেন তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা। —ফাইল চিত্র।
দলীয় নেতৃত্ব তাঁর পাশে নেই। নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় নাম জড়ানো ইস্তক এ কথা একাধিক বার বলেছেন নদিয়ার তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহা। এ বার সরাসরি দলীয় সংগঠন এবং স্থানীয় নেতৃত্বকে নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করলেন তাপস। বিধায়কের দাবি, যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তার প্রভাব আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটেও পড়বে। তবে তাঁর কেন্দ্রে ভোটে কোনও বিরূপ প্রভাব পড়বে না। সেখানে তিনি একাই লড়ে নিতে পারবেন।
নিয়োগ দুর্নীতিতে যুক্ত থাকার অভিযোগে তাপসের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে সিবিআই। তাপসের প্রাক্তন আপ্তসহায়ক-সহ বেশ কয়েকজন ঘনিষ্ঠকে ইতিমধ্যেই জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা। সংগ্রহ করেছেন বেশ কিছু নথিপত্র। এর মধ্যেই তাপস ক্ষোভ উগরে দিয়ে মন্তব্য করেন, ‘‘এ দলে কেউ কারও কথা শোনে না।’’ বিধায়কের দাবি, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে এই অবস্থার পরিবর্তন না হলে জেলা জুড়ে দলের ভরাডুবির আশঙ্কা রয়েছে। রবিবার আনন্দবাজার অনলাইনকে তাপস বলেন, ‘‘দলের জেলা সভাপতি অসুস্থতার কারণে প্রায় নিষ্ক্রিয়। কো-অর্ডিনেটর সাংগঠনিক কোনও ব্যাপারে খোঁজখবর রাখেন না। জেলার অন্যান্য শীর্ষ নেতৃত্ব গ্রামীণ এলাকার সংগঠন সম্পর্কে বিন্দুমাত্র আগ্রহ দেখান না।’’
তাঁর নাম নিয়োগ দুর্নীতিতে জড়ানোর পিছনে দলের একাংশকে দায়ী করে এসেছেন তাপস। রবিবার তেহট্টের বিধায়ক বলেন, ‘‘আমাদের লড়াই বিজেপির বিরুদ্ধে। অথচ দলের একটা শ্রেণি বিজেপিকে সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার জন্য আমার বিরুদ্ধে লড়াই করছে! এ ভাবে কোনও দল চলতে পারে না। কর্মচারী দিয়ে সংগঠন চলে না। সংগঠন চালাতে গেলে প্রয়োজন মজবুত নেতৃত্বের।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দলে কেউ অপরিহার্য নন। কিন্তু দলে সংগঠন অপরিহার্য। সেই সংগঠনটাই (তৃণমূলের) শেষ হয়ে গিয়েছে নদিয়ায়।’’ তাপস এ-ও বলেন, তাঁর দলে কেউ কারও কথা শোনেন না। বলেন, ‘‘আমি দলের প্রতীকে জয়ী বিধায়ক। আমার বিরুদ্ধে যদি কোনও অভিযোগ থাকে তা বলার জন্য নির্দিষ্ট ফোরাম আছে। দলের শৃঙ্খলা রক্ষা কমিটি আছে। সে সব না করে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে আমার বিরুদ্ধে কাদা ছোড়া শুরু হলো! দলে যেমন খুশি তেমন সাজো চলছে।’’
উল্লেখ্য, রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ তাপস-কাণ্ড নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘অন্যায় না করলে বুকে বল নিয়ে পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে যে কোনও পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।’’ তাপসের মন্তব্য ওই প্রসঙ্গেই বলে মনে করা হচ্ছে। বার্তা ছিল তাঁর। সেই কথার প্রেক্ষিতেই জবাব দিলেন তাপস সাহা। তিনি বলেন, ‘‘আমি ৪০ বছরের বেশি দল করা লোক। আমাকে দলের গঠনতন্ত্র শেখাতে হবে না। দলে থেকেও দলীয় বিধায়কের বিরুদ্ধে যিনি সাংবাদিক বৈঠক করেছেন, তার বিরুদ্ধে কি পদক্ষেপ করল দল? তিনি তো দলের জেলা কমিটির সদস্য নন। কার প্রশ্রয়ে মন্তব্য করলেন?’’
অন্য দিকে, তাপসের মন্তব্যের পর আবার দলীয় নেতৃত্ব তাঁকে কটাক্ষ করেছেন। তৃণমূল কৃষ্ণনগর সংগঠনিক জেলা সভাপতি কল্লোল খাঁয়ের কথায়, ‘‘দলের ক্ষতি হতে পারে এমন কোনও মন্তব্য থেকে সবাইকে বিরত হওয়ার অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু কে শোনে কার কথা! আমরা উচ্চ নেতৃত্বকে সবটা জানিয়েছি। তাঁরা যা ভাল মনে করবেন সিদ্ধান্ত নেবেন।’’
বিধায়ক বনাম জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের এই আকচা-আকচিতে বিজেপির জেলা সভাপতি অর্জুন বিশ্বাসের কটাক্ষ, ‘‘এ বলছে এ চোর, ও বলছে ও চোর! আসলে সবাই চোর।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘তাপস সাহা সঠিক কথাই বলেছেন। কিছু দিনের মধ্যে ওই দল তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy