Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
TMC

Cheating: চাকরি দেওয়ার নামে সাড়ে ১২ লাখ টাকা নেন ‘এমএলএ মামা’! ভাগ্নের তোপেও তাপস সাহা

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা এমন অভিযোগ নিয়ে তাপস অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’

তাপস সাহা এবং প্রবীর কয়ালের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ সৌম্য নন্দীর।

তাপস সাহা এবং প্রবীর কয়ালের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ সৌম্য নন্দীর। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নাকাশিপাড়া শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২২ ১৪:৩৯
Share: Save:

চাকরি দেওয়ার নাম করে অনেকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার অভিযোগ আগেই উঠেছিল তেহট্টের বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে। এ বার প্রকাশ্যে এল, প্রতারিতদের তালিকায় রয়েছেন তাপসের এক ভাগ্নে। শুধু তাই নয়, চাকরি পেতে তাপসকে টাকা দিয়েছিলেন তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি কল্লোল খাঁর জামাইও। শুক্রবার রাতেই তাপসের আপ্তসহায়ক প্রবীর কয়াল-সহ তিন জন গ্রেফতার হয়েছেন আর্থিক প্রতারণার অভিযোগে। তার পরেই জানা যাচ্ছে, প্রতারিতদের তালিকায় রয়েছেন অনেক তৃণমূল নেতার আত্মীয়েরাও। তাপস যদিও শনিবার এই অভিযোগ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
নিজেকে তাপসের ভাগ্নে পরিচয় দিয়ে ‘মামা’র বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন নদিয়ার দইয়েরবাজার এলাকার বাসিন্দা শুভ সাহা। স্থানীয়দের দাবি, শুভর মা ঝর্না সাহা সম্পর্কে তাপসের খুড়তুতো বোন। ‘মামা’র বিরুদ্ধে খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে চিঠি লিখে অভিযোগ জানিয়েছেন শুভ। চিঠিতে তিনি লিখেছেন, ‘২০১৬ সালে তাপস সাহা পলাশিপাড়ার বিধায়ক থাকাকালীন চাকরি দেওয়ার নাম করে আমার কাছ থেকে সাড়ে ১২ লক্ষ টাকা নিয়েছিলেন। সাত বছর পেরিয়ে গেলেও চাকরি অথবা টাকা কোনওটাই পাইনি। এখন আমার নিদারুণ দারিদ্রে দিন কাটছে। বাবা এবং মা অসুস্থ। চিকিৎসাও করাতে পারছি না। আমাকে এবং আমার পরিবারকে বাঁচান।’

শুধু তাপসের ভাগ্নেই নয়, তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি কল্লোলের ভাই হিল্লোল খাঁর জামাই সৌম্য নন্দীও অভিযোগ করেছেন তাপস এবং তাঁর আপ্তসহায়কের বিরুদ্ধে। সৌম্য নদিয়া জেলার নাকাশিপাড়ার বারবোরা এলাকার বাসিন্দা। তাঁর মা চায়না নন্দী দীর্ঘ দিনের পঞ্চায়েত সদস্য। একই সঙ্গে কল্লোলের পরিবারের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কও হয়েছে সৌম্যের। সেই সূত্রেই তিনি তৃণমূলের কৃষ্ণনগর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তথা নাকাশিপাড়ার তৃণমূল বিধায়ক কল্লোলকে বরাবর ‘জেঠু’ বলেই ডাকেন। পাশাপাশি তিনি নিজেও দলের নানা দায়িত্ব পালন করে থাকেন। সৌম্যের দাবি, ‘জেঠু’র সঙ্গে মাঝেমাঝেই কলকাতার বিধায়ক হস্টেলে যেতেন তিনি। সেখানেই তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা হয় তেহট্টের বিধায়ক তাপসের। সেই সূত্রপাত।

বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তাঁর ভাগ্না শুভ সাহারও।

বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ তাঁর ভাগ্না শুভ সাহারও। নিজস্ব চিত্র।

বছর তিরিশের সৌম্যর অভিযোগ, ‘‘জেঠুর সঙ্গে এমএলএ হস্টেলে আমার আসা-যাওয়া ছিল। সেখানেই তাপসের সঙ্গে আমার দেখা হয়েছিল। এক দিন গল্প করতে করতে একটা চাকরির ব্যাপারে ওঁকে সাহায্যের জন্য বলি। তখন উনি প্রবীর কয়াল নামে এক যুবকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। তাঁর হাতে আমি প্রাথমিকে চাকরির পরীক্ষার অ্যাডমিট এবং অন্যান্য নথিপত্র তুলে দিই।’’

কিন্তু বিষয়টা এখানেই শেষ হয়নি বলে সৌম্যর দাবি। তাঁর কথায়, ‘‘এর পর এক দিন উনি (প্রবীর) চাকরির জন্য পাঁচ লাখ টাকা করে দাবি করে বসেন। আমার সেই টাকা ছিল না। তখন উনি বলেন, ‘না পারলে কিস্তিতে দিও।’ সেই মোতাবেক প্রথম কিস্তির ৫০ হাজার টাকা ওঁকে দিই ‘সাধন’ নামে এক ব্যক্তির অ্যাকাউন্টে। তার পর বার বার যোগাযোগ করা হলেও চাকরির ব্যাপারে কোনও সুরাহা হয়নি। টাকাও ফেরত পাইনি।’’ তাঁর আরও বক্তব্য, ‘‘আমি জেঠুকে না জানিয়েই টাকা দিয়েছিলাম। তাপস সাহা আমার পূর্ব পরিচিতও বটে। তাই অন্য কাউকে জানিয়ে ওঁর সম্মানহানি করতে চাইনি। আজ আমার সহ্যের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। আমি নিরুপায়। ভাবতে পারিনি, সব জেনেশুনেও উনি আমার সঙ্গে প্রতারণা করবেন।’’

সৌম্যের অভিযোগের কথা শুনে কল্লোল বলছেন, ‘‘সৌম্য টাকা দেওয়ার সময় আমাকে জানায়নি। এখন বলে আর কী হবে! এখন একের পর এক অভিযোগ উঠছে। তার কতটা সত্যতা আছে সে বিষয়ে আমি বলতে পারব না। তদন্ত চলছে। দল কোনও রকম আর্থিক প্রতারণাকেই সমর্থন করে না।’’

নিজের বিরুদ্ধে ওঠা এমন অভিযোগ নিয়ে তাপস অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘আমি এ নিয়ে কোনও কথা বলব না।’’

শুক্রবার রাতে দক্ষিণ ২৪ পরগনার রায়দিঘি থেকে তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপসের আপ্তসহায়ক প্রবীর এবং তাঁর দুই সঙ্গী শ্যামল কয়াল ও সুনীল মণ্ডলকে গ্রেফতার করেছে রাজ্য পুলিশের দুর্নীতিদমন শাখা। আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ ওঠার পর থেকেই গা-ঢাকা দিয়েছিলেন প্রবীর। শনিবার প্রবীরের গ্রেফতারের খবর প্রকাশ্যে আসার পর ঘটনাচক্রে তেহট্ট থানায় কিছু ক্ষণ কাটাতে দেখা গিয়েছে তাপসকে।

তেহট্ট বিধানসভার নাজিরপুরে বাড়ি অমৃত ব্যাপারীর। তিনিও চাকরির জন্য ‘বিধায়কের লোক’কে টাকা দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ। শুভ এবং সৌম্যের অভিযোগ জানতে পেরে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘আমার টাকা গিয়েছে। ও আর ফেরত পাব না বলেই মনে হচ্ছে। তবে এখন তো দেখছি, চোর নিজের ঘরেই সিঁদ কেটেছে!’’

প্রতারণার এই অভিযোগ নিয়ে চলতি সপ্তাহেই আনন্দবাজার অনলাইন প্রথম খবর করে। করিমপুর, তেহট্ট এবং পলাশিপাড়া বিধানসভা এলাকার অনেক বাসিন্দা তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে তিনটি চিঠি পাঠিয়ে জানান, বিধায়ক তাপস এবং তাঁর দলবল এলাকার মানুষের কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নাম করে প্রায় ১৬ কোটি টাকা নিয়েছেন। চাকরি এবং টাকা কোনওটাই পাননি তাঁরা। ঘটনাচক্রে শুক্রবার রাতেই গ্রেফতার হন তাপস-ঘনিষ্ঠ তিন জন।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC TMC MLA Tehatta cheating
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy