তৃণমূলের হয়ে ভোটের প্রচারে সিনেমা পরিচালক রাজ চক্রবর্তী, অভিনেত্রী কৌশানী মুখোপাধ্যায়। ছবি: প্রণব দেবনাথ
লড়াই হয়তো হবে হাড্ডাহাড্ডি। কিন্তু প্রায় কার্নিভালের মেজাজেই শেষ হল করিমপুর উপ-নির্বাচনের প্রচার পর্ব।
এত দিন তাবড় নেতাদের হাজির করিয়েছে তিন পক্ষই। বিজেপি ছিল এই দৌড়ে সবচেয়ে এগিয়ে। কেন্দ্রীয় নেতা থেকে রাজ্য নেতা বা সভাপতি, কেউ বাদ যায়নি। তৃণমূল বুথ স্তরের সংগঠন ও প্রচারে বেশি জোর দিলেও ববি হাকিম-ব্রাত্য বসুরা এসেছেন। বাম-কংগ্রেস জোটও মহম্মদ সেলিম থেকে বিমান বসু, অধীর চৌধুরী থেকে সোমেন মিত্রকে হাজির করেছে।
কিন্তু শনিবার, প্রচারের শেষ দিনে তারকাদের এনে গ্ল্যামারের টেক্কা দেওয়াই হয়ে দাঁড়াল তৃণমূল ও বিজেপির রণকৌশল। যার জেরে প্রায় হারিয়েই গেল জোটের প্রচার। দলের রাজনীতিকে পিছনে ফেলে তারকাদের একটু কাছ থেকে দেখতে মাতামাতি চলল দিনভর।
যাদবপুর কাণ্ডের পরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী তথা গায়ক বাবুল সুপ্রিয় কলকাতা-সহ তামাম বাংলায় এক শ্রেণির মানুষের কাছে যতই রঙ্গ-রসের পাত্র হয়ে দাঁড়ান না কেন (যার ছাপ পড়েছিল সোশ্যাল মিডিয়াতেও), করিমপুরে তাঁকে দেখতেই ছিল ভিড়ের উচ্ছ্বাস। আবার তৃণমূলের হয়ে প্রচারে গিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক রাজ চক্রবর্তীও নজর টেনেছেন। সঙ্গে ছিলেন আরও দুই শিল্পী— প্রয়াত অভিনেতা সুখেন দাসের দৌহিত্র বনি সেনগুপ্ত এবং কৌশানী মুখোপাধ্যায়।
রোড-শোয়ে বেরিয়ে দোকানে ঢুকে সিদ্ধ ডিমে কামড় বিজেপির বাবুল সুপ্রিয়র। পাশে অগ্নিমিত্রা পাল। শনিবার করিমপুরে। ছবি: প্রণব দেবনাথ
এ দিন বিজেপির রোড শো শুরুর কথা ছিল সকাল ১০টায়। কিন্তু বাবুল এসে পৌঁছন অনেক পরে। জামতলা মোড়ে তাঁকে দেখতে ভিড় করেছিলেন প্রচুর মানুষ। বাবুল এসে নামতেই কেউ-কেউ তাঁর সঙ্গে সেলফি তুলতে মোবাইল হাতে ছুটে যান। পরে দুপুর প্রায় ১টা নাগাদ অগ্নিমিত্রা পাল ও বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে নিয়ে বাবুল চলে যান হোগলবেড়িয়ার দিকে। মহেশেরপাড়া থেকে রোড-শো করে সুন্দলপুর, দুর্লভপুর, জয়রামপুর, গোপালপুরঘাট, রাজাপুর ছুঁয়ে মুরুটিয়ার শিকারপুর ও বালিয়াডাঙা।
মুরুটিয়া থেকে ফিরে বিকেল ৫টায় মহিষবাথানে রোড-শো শেষ। সেখানে বাজারের একটি দোকানে ঘুগনি খান বাবুল। প্রায় সব জায়গাতেই সামনে থেকে তাঁকে দেখতে রাস্তার পাশে অনেকে দাঁড়িয়ে ছিলেন। নানা জায়গায় ফুল ছুড়তেও দেখা গিয়েছে। বাবুলও হাসি-মুখে হাত নেড়েছেন। কোথাও গাড়ি থামিয়ে ভক্তদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। হোগলবেড়িয়ার এক মহিলা বলেন, ‘‘খুব কাছ থেকে বাবুল সুপ্রিয়কে দেখলাম। আমি কোনও দলের সমর্থক নই। কিন্তু ওঁর গান শুনেছি, টিভিতেও দেখেছি। কাছ থেকে দেখার সাধ মিটল।”
ও দিকে, বিকেল ৪টে নাগাদ করিমপুর বাজারে তৃণমূল প্রার্থীর জন্য রোড-শো করেন রাজ চক্রবর্তী, বনি সেনগুপ্ত, কৌশানী মুখোপাধ্যায়েরা। মহামিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল দুপুর আড়াইটেয়। এলাকার মানুষ ভিড় তো করেই ছিলেন, প্রচুর কর্মী-সমর্থক গাড়ি বোঝাই হয়ে আসতে শুরু করেন। হুডখোলা গাড়িতে তারকাদের নিয়ে নতিডাঙা মোড় থেকে শোভাযাত্রা রওনা দেয়। রাস্তার দু’পাশে প্রচুর মানুষ রাজ-কৌশানিদের একটি বার চোখের দেখা দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন। রাস্তার পাশের বাড়ির ছাদ, বারান্দা ও দোকানের সামনে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে দেখা যায় তাঁদের। গাড়ি এসে পৌঁছতেই শুরু হয় হুড়োহুড়ি, হাত নাড়া, মোবাইলে ছবি তোলা। প্রায় দু’কিলোমিটার পথ গিয়ে নাটনা মোড়ে গিয়ে সেই মহামিছিল শেষ হয়।
এই ভোট কার্নিভালের পরে শেষ হাসি কে হাসবে?
বিজেপি প্রার্থীর এক ছায়াসঙ্গী আগেই আনন্দবাজারকে বলেছিলেন, ‘‘এক বার বাবুল সুপ্রিয়কে এনে ঘুরিয়ে দেব। খেলা শেষ।’’
তাই বুঝি?
বাবুল তো ঘুরে গেলেন। বাকিটা বলবে করিমপুরের নাটমঞ্চ!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy