Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

অসুস্থ মহিলাকে তুলে নিলেন রিকশায়

তাঁদের দেওয়ালে কখনও মাথা কুটে মরেনি রোগী, বরং দুঃস্থ পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফিজ দিতে গেলে পাল্টা ধমক খেতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে, ‘ওষুধটা আমিই কিনে দেব’, সেই সব হারানো ‘দেবতা’দের স্মৃতি হাতড়াল আনন্দবাজার তাঁদের দেওয়ালে কখনও মাথা কুটে মরেনি রোগী, বরং দুঃস্থ পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফিজ দিতে গেলে পাল্টা ধমক খেতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে, ‘ওষুধটা আমিই কিনে দেব’, সেই সব হারানো ‘দেবতা’দের স্মৃতি হাতড়াল আনন্দবাজার

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৬ জুলাই ২০১৯ ০৬:৪০
Share: Save:

২৫ বছর আগের কথা। বহরমপুর স্টেশনের কাছে গৌতম বুদ্ধ মূর্তির তখনও প্রতিষ্ঠা হয়নি। ওই মোড়ের মাথায় কনকনে শীতের মধ্যে এক ভবঘুরে প্রৌঢ়া পড়ে কাতরাচ্ছিলেন। কলকাতা থেকে ফেরার পথে মৃতপ্রায় ওই মহিলার দিকে নজর পড়ে তাঁর। রিকশা থেকে নেমে মহিলাকে তুলে নিয়ে গিয়ে বহরমপুর স্টেট জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে তিনি চিকিৎসা শুরু করেন। তিনি তখন ওই হাসপাতালের সুপার। সে কথা এখনও মনে রেখেছেন বহরমপুর স্টেশন চত্বরের কয়েকজন প্রৌঢ় রিকশা চালক। সেই হাসপাতাল সুপারের নাম কী? বলছেন, ‘‘দু’টাকার ডাক্তার।’’ যদিও ডাক্তারের পুরো নাম জানেন না কেউই।

চার বছর আগে ২০১৫ সালের ৩ জুলাই প্রয়াত হন সেই চিকিৎসক বিনয়কুমার সরকার, যাঁকে বহরমপুরের অধিকাংশ মানুষ ‘দু টাকার ডাক্তার’ বলেই জানতেন। তাঁর শেষযাত্রায় শহরের বিভিন্ন স্তরের মানুষ শামিল হলেও রিকশা চালক-দিনমজুর-বিড়ি শ্রমিক-ইটভাটার মজুর-পরিচারিকাদের ঢল নেমেছিল। কারণ হিসেবে গোরাবাজারের চায়ের দোকানদার অনিল দাস বলছেন, ‘‘ডাক্তারবাবুর প্রথমে দু’ টাকা ফি ছিল। পরে অন্য ডাক্তারদের চাপে পড়ে ৫ টাকা, ১০ টাকা ও মারা যাওয়ার দু’বছর আগে ২০ টাকা ফি করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সেটা নামমাত্র। দু’টাকা, পাঁচ টাকা— যে যা পারতেন দিতেন। ডাক্তারবাবু তা-ই নিতেন।’’ কৃষ্ণনাথ কলেজের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষাকর্মী বীরেন রায়ের ছেলে দিলীপ রায় বলছেন, ‘‘জ্বরে ভুগছি আমরা তিন ভাইবোন। আমাদের নিয়ে মা গেলেন গরিবের ডাক্তারের কাছে। তিন জনের ৬ টাকা ফি হয়। মা পাঁচ টাকা দিলেন। আর টাকা ছিল না। ডাক্তারবাবু মায়ের হাতে পাঁচ টাকা ফিরিয়ে দেন। ওষুধও দেন তিনি।’’

অনেক চিকিৎসকের ‘চেম্বার’-এ ‘মেডিক্যাল রিপ্রেজন্টেটিভ’-এর ভিড়ে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন রোগীরা। সেখানে বিনয়বাবুকে দিয়ে কোন দিন কোনও প্রেসক্রিপশনে মেডিক্যাল রিপ্রেজন্টেটিভেরা বেশি দামের ও বেশি সংখ্যায় ওষুধ লেখাতে পারেননি কোনও দিন।

বিনয়বাবুর জন্ম রাজশাহিতে। রাজশাহিতে তাঁর ডাক্তারি পড়া। ছেলে অসিতকুমার সরকার বলেন, ‘‘১৯৬৩ সালে বাবা এ দেশে চলে আসেন। বর্তমান মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ১৯৬৭ সালে স্টেট জেনারেল হাসপাতাল হিসাবে চালু হয়। বাবা সেই হাসপাতালের প্রতিষ্ঠাতা সুপার ছিলেন।’’ ‘গরিবের ডাক্তার’-এর সেবাধর্মকে কুর্ণিশ জানাতে ‘ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’-সহ বিভিন্ন সংস্থা বিনয়কুমার সরকারকে পুরস্কৃত করেছে। (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy