শহরে তো বটেই, এমনকী গঞ্জ এলাকাতে আজ সেই ঘটকের তেমন দেখা মেলে না।
ফাল্গুন মাস। পথের ধারে শিমূল ও কৃষ্ণচুড়া উপচে পড়ছে আগুন রঙা ফুলে। ধুলিধূসরিত গাঁয়ের মেঠো পথ। পরনে খেটো ধূতি। গায়ে সাদা ফতুয়া। কাঁধে গামছা। হাতে সরু লাঠি। গ্রামের নাম ছয়ঘরি বামুনপাড়া। সাবেক থানা বহরমপুর। অধুনা দৌলতাবাদ থানার সীমান্ত গ্রাম।
গৃহস্থ হাঁক পাড়েন, ‘‘ও ঘটকঠাকুর, আসুন গো, কথা আছে।’’ পান চিবাতে চিবাতে ঘটকমশাই হাজির। কথা শুরু হতেই ঘটক তাঁর ঝুলি থেকে বেড়াল বের করেন— ‘‘কত্তা! পয়মন্ত কন্যের হদিশ আছে গো। রূপে সরস্বতী, গুণে লক্ষ্মী।’’
দৌলতবাদ থানার অন্য প্রান্তের নিধিনগরের সেই কনের রূপ খেলিয়ে গায়ের রং, চুলের মেঘ-মেদুরতা বর্ণনা করেই চলেন তিনি। জানিয়ে দেন, কনের বাবার বিষয়আশয়, ভাইবোনের সংখ্যা লেখাপড়ার দৌড়, গানের এলেম আর বিভিন্ন বৈষয়িক বিষয়। মুগ্ধ বরকর্তা এগিয়ে যাওয়ার সম্মতি দেন। ঘটকঠাকুর এ বার কনের বাড়ি গিয়ে বর ও বরকর্তার বিষয-আশয় ও গুণাগুণ নিয়ে সাতকাহন জানান। দু’ পক্ষই ঘটক মশাইয়ের অতিকথনে মুগ্ধ। ঘটকের মধ্যস্থতায় দু’ পক্ষের বাড়িতে কয়েক বার যাতায়াত করে। লাখ কথা খরচ করার পর বিয়ের দিন স্থির হয়। বিয়ের পরে উভয় পক্ষই জানতে পারেন ঘটক তাঁদের যা বলে গিয়েছেন, সব অর্থেই তা অতিরঞ্জন।
এমনই এক অতিকথন নিয়ে মুর্শিদাবাদের ভগবানগোলার বিখ্যাত আলকাপ শিল্পী করুণাকান্ত হাজরা অলকাপ-পালা রচনা করেছেন। সেই হাস্যকৌতুক পালায় উঠে এসেছে ঘটকঠাকুরের কীর্তিকলাপ। করুণাকান্ত বলেন, ‘‘ঘটকের পাল্লায় পড়ে ক্ষীণ দৃষ্টির রোদ চশমা পরিয়ে দিয়ে কনে পছন্দ করানো হয়। আবার বেকার যুবককে সরকারি চাকুরে সাজিয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসানোর মতো ঘটনাও ঢের রয়েছে। ঘটক বর্ণিত দুধে আলতা রঙ বাস্তবে শ্যামলা রঙে পৌছে যায়।’’ উভয় পক্ষের থেকে সাম্মনিক টাকা ছাড়াও ঘটকের প্রাপ্তিযোগের পসরায় বাধ্যতামূলক ভাবে থাকে নতুন ধুতি, শাড়ি, ফতুয়া, গামছা ও অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণ।
শহরে তো বটেই, এমনকী গঞ্জ এলাকাতে আজ সেই ঘটকের তেমন দেখা মেলে না। হারিয়ে গিয়েছে, ঘটক বিদায়ের সেই ধুতি-গামছা-চাদর। প্রত্যন্ত গ্রামজীবনে অবশ্য এখনও ঘটক জরুরি।
তবে, এখন লুপ্তপ্রায় ঘটকের জায়গা নিয়েছে অনলাইন পোর্টাল ও কর্পোরেট হাউসের মতো অফিস খুলে বসে থাকা বিভিন্ন সংস্থা। এখন আধুনিক ঘটককে বিয়ের সম্পর্ক গড়তে ছেলেমেয়ের বাড়িতে ছুটতে হয় না। ছেলেমেয়ে ও তাঁদের পরিবারের লোকজন পরস্পরকে বাজিয়ে নিতে পারেন আধুনিক ঘটকালির ব্যবস্থায়। এখন সোশ্যল মিডিয়ার মাধ্যমেও অনেকে সঙ্গী বেছে নিচ্ছেন পছন্দ মতো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy