Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
UGC NET

পড়া নয় শুধুই শোনা! এমএ, সেটের পর নেটেও তাক লাগালেন তেহট্টের দৃষ্টিহীন রাখি

নদিয়ার তেহট্টের রাখি ঘোষের ঘোষের ইচ্ছা, বাংলা নিয়ে গবেষণা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করা। তবে সফর এখানেই শেষ নয়। আরও অনেক দূর যেতে চান তিনি। জানালেন আনন্দবাজার অনলাইনকে।

Rakhi Ghosh

রাখি ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
তেহট্ট শেষ আপডেট: ২৮ জুলাই ২০২৩ ২০:৫২
Share: Save:

মাথার উপরের ছাদ ফুটো। টিনের চাল দিয়ে চলে রোদ-বৃষ্টির খেলা। জীর্ণ পাটকাঠির বেড়া ঝুরঝুর করে ঝরে পড়ে যখন তখন। যদিও বাড়ির ভাঙাচোরা দশা নিজের চোখে কখনও দেখা হয়নি রাখি ঘোষের। জন্ম থেকে ১০০ শতাংশ দৃষ্টিহীন নদিয়ার তেহট্ট হাউলিয়া মোড়ের বাসিন্দা রাখি। তবে বাড়ির আর্থিক অনটন থেকে শারীরিক প্রতিবন্ধকতা— সব কিছুই রাখির প্রবল ইচ্ছাশক্তির কাছে ম্লান। বর্ণ না চেনা রাখি রাজ্য সরকারের কলেজ সার্ভিস কমিশনের প্রবেশিকা পরীক্ষা ‘সেট’ পাশ করেছেন আগেই। এ বার কলেজে অধ্যাপনার জন্য জাতীয় স্তরের যোগ্যতা নির্ণায়ক পরীক্ষা ‘নেট’ (ন্যাশনাল এলিজিবিটি টেস্ট) পাশ করলেন তিনি। রাখির এই সাফল্যে খুশির জোয়ারে ভাসছে পরিবার থেকে প্রতিবেশী— সবাই।

স্বপ্ন দেখতে ভালবাসেন দৃষ্টিহীন রাখি। স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিতে কী করতে হয়, জানেন সেটাও। নেটের ফল জানার পর রাখি বলেন, ‘‘পরীক্ষা দিতে যাওয়ার সময় গাড়িভাড়া ছিল না। হঠাৎ পাড়ার এক ড্রাইভার দাদা ফোন করে বলল, ‘‘রেডি (তৈরি) থেকো। কাল পরীক্ষা দিতে যেতে হবে।’’ উনি একটি টাকাও নেননি। ওঁকে ধন্যবাদ। আমার এই সাফল্যের পিছনে স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের অবদান সবচেয়ে বেশি। আর বাবা-মায়ের কথা নতুন করে কী বলব!’’

রাখি তেহট্টের শ্রীদামচন্দ্র বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন। সেখান থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশের পর বাংলা বিষয় নিয়ে কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজে ভর্তি হন। ২০২২ সালে সেখান থেকে স্নাতকোত্তর পাশ করে একটা সেটের প্রস্তুতি নেন। তার মাঝে নেটেও এল সাফল্য।

রাখির বাবা দয়াল ঘোষ চাষবাস করেন। মা মিনতি ঘোষ বাড়ির কাজকর্ম সামলান। রাখির দুই দাদা এবং দুই বৌদি আছেন। রাখির মায়ের কথায়, ‘‘ছোট থেকে অনেক কষ্ট করেছে ও। আমরা সবাই লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের না আছে অর্থবল, না আছে অন্য কোনও জোর। তবুও মেয়ের সঙ্গে এই লড়াইয়ে আছি। ও প্রতিষ্ঠিত হলে তবেই সব কিছু সার্থক হবে।’’ রাখির ইচ্ছা, বাংলা নিয়ে গবেষণা শেষ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করা। তবে সফর এখানেই শেষ নয়। তাঁর কথায়, ‘‘দৃষ্টিহীনদের নিয়ে সমাজে এখনও বৈষম্য আছে। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য অথবা কন্ট্রোলারের ভূমিকা থেকে সেই বৈষম্য কিঞ্চিত হলেও দূর করতে চাই।’’

অন্য বিষয়গুলি:

UGC NET Inspirational story
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy