তাপসের বিরুদ্ধে প্রতারণার বহু অভিযোগ
প্রাথমিক শিক্ষকের চাকরি দেওয়ার নামে টাকা তোলার অভিযোগ আগেই উঠেছিল তেহট্টের তৃণমূল বিধায়ক তাপস সাহার বিরুদ্ধে। একই সঙ্গে ভুয়ো নিয়োগপত্র দেওয়ার অভিযোগও ছিল। এ বার রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা পর্যদের ভুয়ো নিয়োগ তালিকা দেখিয়ে টাকা তোলার অভিযোগও উঠল। তাপসের বিরুদ্ধে ওই অভিযোগ এনেছেন ইউসুফ আলি শেখ নামে তাঁরই দলের এক পঞ্চায়েত সদস্য।
আত্মীয় থেকে শুরু করে বহু দিনের পরিচিত দলীয় কর্মীদের অনেকেই চাকরি দেওয়ার নামে কয়েক কোটি টাকা প্রতারণার অভিযোগ তুলেছেন তাপসের বিরুদ্ধে। কেউ প্রাইমারি শিক্ষক হতে চেয়ে ১২ লক্ষ টাকা নগদ দিয়েছেন। কেউ আবার উচ্চপ্রাথমিকের জন্য ১৫ লক্ষ টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করছেন। এক জনের অভিযোগ, ডব্লিউবিসিএস (এগজিকিউটিভ)-এ চাকরির জন্য ২৪ লক্ষ টাকা দিয়ে প্রতারিত হয়েছেন তিনি। নদিয়ার বিভিন্ন থানায় তাপসের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন বলে দাবি করলেন প্রতারিতদের একাংশ।
তেহট্টের শ্যামনগর পঞ্চায়েতের ফতাইপুর গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্য ইউসুফ আলি শেখ। দলীয় সূত্রেই বিধায়কের সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল প্রাক্তন এই সেনাকর্মীর। দীর্ঘ দিনের পরিচিত হওয়ার কারণেই ভরসা করে তাপসের কাছে ছেলে আজিজের চাকরির জন্য অনুরোধ করেছিলেন তিনি। ইউসুফ আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, ‘‘আমার সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে চাকরি দেওয়ার নাম করে সাত লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বিধায়ক। সঞ্চয় বলতে ওইটুকুই ছিল।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘দেশের স্বার্থে নিজের জীবন উৎসর্গ করেছি। আর এই দেশের সংবিধানের নামে শপথ নেওয়া বিধায়ক নিজের দলেরই কর্মীর সঙ্গে এ ভাবে প্রতারণা করবেন ভাবতেও পারিনি।’’
ইউসুফ দাবি করেন, গত বছর জুলাইয়ে তাপস তাঁকে বলেছিলেন যে, দশ লক্ষ টাকা দিলে ছেলের চাকরি করে দেবেন। বিধায়কের কার্যালয়ে গিয়ে দুই লক্ষ টাকা দিয়ে আসা হয়। পরে একটি নিয়োগ তালিকায় নাম দেখিয়ে আরও পাঁচ লক্ষ টাকা নেন তাপস। ওই তালিকায় আজিজের নাম থাকলেও প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগের অনলাইন সাইটে গিয়ে আজিজের নাম দেখা যায়নি। পরে খোঁজখবর নিয়ে জানা যায়, ওটা ভুয়ো তালিকা। ইউসুফের দাবি, জমিজমা ও স্ত্রীর গয়না বেচে টাকা দিয়েছিলেন। ছেলের চাকরি হয়নি, টাকাও ফেরত পাননি।
ইউসুফ জানান, দুর্নীতি দমন শাখা এবং তৃণমূলের শীর্ষ নেতৃত্বকে ইমেল করে অভিযোগপত্র পাঠিয়েছেন। তার প্রতিলিপি দেওয়া হয়েছে নদিয়ার তেহট্ট থানাকেও। অভিযোগপত্রের সঙ্গে কয়েকটি ফোনে কথোপকথনের অডিয়ো ক্লিপও জুড়ে দিয়েছেন ইউসুফ। যেখানে ‘তাপসদা’ এবং ‘প্রবীর’-এর নাম করে টাকা দেওয়ার কথা এবং উল্টো দিক থেকে নিয়োগ তালিকায় নাম ওঠার আশ্বাস শোনা যাচ্ছে। আনন্দবাজার অনলাইন যদিও ওই সব অডিয়ো ক্লিপের সত্যতা যাচাই করেনি।
অন্য দিকে, নিজের ও পাঁচ আত্মীয়ের জন্য চাকরি চেয়ে বিধায়ককে ৩৩ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করেন আলমগীর নামে এক ব্যক্তি। থানারপাড়া থানায় অভিযোগ দায়ের করার পর তিনি বলেন, ‘‘চাকরি তো দিতেই পারলেন না বিধায়ক, এখন টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না।’’
রাজ্য পুলিশের দুর্নীতি দমন শাখাকে মেল করে অভিযোগ করেছেন বিধানসভার চতুর্থ শ্রেণির এক কর্মীও। নিজের নাম প্রকাশ্যে আনতে চাননি তিনি। বিধানসভায় কাজের সূত্রেই বিধায়ক তাপসের সঙ্গে তাঁর পরিচয়। তিনি বলেন, ‘‘বিধানসভায় চতুর্থ শ্রেণির কর্মী হিসাবে কাজ করি। সেই সূত্রে পরিচয়। তবুও চাকরি দেওয়ার নাম করে আমার টাকা আত্মসাৎ করল!’’
পুলিশ বা দুর্নীতি দমন শাখার কর্তারা এ বিষয়ে মুখ না খুললেও তাপস দাবি করেছেন অভিযোগকারীদের অনেককেই তিনি চেনেন না। যাঁদের চেনেন, তাঁদের সঙ্গেও টাকাপয়সা সংক্রান্ত কোনও লেনদেন হয়নি বলে দাবি করেন তিনি। আনন্দবাজার অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘‘যারা অভিযোগ করছে, তাদের অনেককে আমি চিনি না। যাদের চিনি, তাদের কারও থেকেও টাকা নিইনি। ষড়যন্ত্র করে আমায় ফাঁসানো হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy