নতুন-পুরনো ‘দ্বন্দ্ব’ ক্রমশ বাড়ছে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠন ‘পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতি’র বহরমপুর মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটিতে। শুরু হয়েছে তুমুল চাপান-উতোর। সম্প্রতি এই সংগঠনের জেলা সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে দিলীপ সিংহরায়কে। তাঁর জায়গায় আনা হয়েছে সুদীপ সিংহরায়কে। তারপর থেকেই নতুন-পুরনো দ্বন্দ্বে উত্তাল তৃণমূলের এই শাখা সংগঠন।
গত কয়েক দিন থেকে সংগঠনের ওয়টস্যাপ গ্রুপে কথার লড়াই চলছে নেতা-কর্মীদের মধ্যে। অনেকেই অভিযোগ তুলেছেন, এই সংগঠনের বর্তমান জেলা সভাপতি পুরনো দিনের নেতা-কর্মীদের সংগঠনে গুরুত্ব দিচ্ছেন না। এমনকি সংগঠনের প্রাক্তন জেলা সভাপতি দিলীপ সিংহরায় থেকে শুরু করে অনেককেই এই ওয়াটস্যাপ গ্রুপের অ্যাডমিন থেকে সরিয়ে দিয়েছেন। সূত্রের খবর, শুধু তাই নয়, গত সোমবার রাতে প্রায় এক হাজার শিক্ষককে গ্রুপ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে অভিযোগ তোলা হয়েছে, পুরনো দিনের নেতা-কর্মীদের গুরুত্ব না দিয়ে সিপিএম-কংগ্রেস থেকে আসা লোকজনকে জায়গা দেওয়া হচ্ছে।
সুদীপ সিংহরায় অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘সংগঠনের রাজ্য সভাপতি এবং দলের জেলার সভাপতির নির্দেশ— সংগঠনে একটি ওয়টস্যাপ গ্রুপ থাকবে। তাই নতুন গ্রুপ খোলা হয়েছে। পুরনো গ্রুপ থেকে সরিয়ে তাঁদের নতুন গ্রুপে আনা হচ্ছে। সেটা আমি ওয়টস্যাপ গ্রুপেও জানিয়েছি।’’
তবে কী কারণে সিপিএমের শিক্ষক সংগঠন ছেড়ে তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনে যোগ দেওয়া বহরমপুরের হিকমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়কে সংগঠনের রাজ্যের যুগ্ম সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়েছে, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে। এই ভাবে কথার লড়াইয়ে উত্তপ্ত হচ্ছে তৃণমূলের মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের ওয়টস্যাপ গ্রুপ। ওই গ্রুপে সংগঠনের রাজ্য সভাপতি বিজন সরকারও রয়েছেন। সংগঠনের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ সিংহরায় এ বিষয়ে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে বিস্তারিত জানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তার উত্তরে ব্রাত্য কী বলেছেন তা দিলীপ জানাতে চাননি।
পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির রাজ্য সভাপতি বিজন সরকার বলেন, ‘‘সমস্ত জেলার তৃণমূলের সভাপতিদের পক্ষ থেকে যে নাম এসেছে, তাঁদের সংগঠনের জেলা সভাপতি করা হয়েছে। এ ছাড়া সংগঠনের রাজ্য কমিটির পদাধিকারীদের নামও দলের কোনও না কোনও নেতৃত্বের কাছে থেকে এসেছে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘উনি (দিলীপ সিংহরায়) পাঁচ বছর হল অবসর নিয়েছেন। এখনও সভাপতি পদে থাকার জন্য আমাকে একাধিক বার ফোন করেছিলেন। কিন্তু অবসরের এত দিন পরেও তাঁকে সেই পদে রাখা যায় না।’’
যাঁরা এমন করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কী পদক্ষেপ করবেন? বিজন বলেন, ‘‘পরবর্তীতে কী হবে তা পরে দেখা যাবে।’’
তৃণমূলের শিক্ষক সংগঠনের রাজ্যের যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় অভিযোগ উড়িয়ে বলেন, ‘‘আমি অনেক আগেই নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি ছেড়েছি। যে দিলীপদা আমার বিরোধিতা করছেন, তাঁর হাত ধরেই এই সংগঠনে এসেছি। গত লোকসভা নির্বাচনেও তৃণমূলের প্রার্থীর হয়ে ভোট করেছি। সংগঠন আমাকে যে দায়িত্ব দিয়েছে তা পালন করব।’’
দিলীপ সিংহ রায় বলেন, ‘‘বহরমপুর শহরের কংগ্রেসের কাউন্সিলার গোপাল সিংহের (রঞ্জিত সিংহ) ভাগ্নে হলেন সুদীপ সিংহরায়। সুদীপ গত পুরভোটেও কংগ্রেসের হয়ে ভোট করেছেন।’’ তাঁর দাবি, ‘‘শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুকে পুরো ঘটনা জানিয়েছি।’’
যা শুনে সুদীপ বলেছেন, ‘‘উনি যখনই পদে থাকেন না, তখনই দলের সমালোচনা করেন। আমি যে তৃণমূলের হয়ে কাজ করি তা তৃণমূল নেতৃত্বকে জিজ্ঞেস করলেই জানতে পারবেন।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)