পদ্মার ইলিশ রফতানি প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দিলেন বাংলাদেশের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা (ডান দিকে)। —ফাইল চিত্র।
অভ্যন্তরীণ চাহিদার কথা মাথায় রেখে এ বার উৎসবের মুখে ভারতে ‘সৌজন্যের ইলিশ’ না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় বাংলাদেশ। যদিও শেষ মুহূর্তে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার পুজোর আগে ভারতে তিন টন ইলিশ পাঠানোর ছাড়পত্র দেয়। এ নিয়ে চাপানউতরের মধ্যে ভারতে ইলিশ পাঠানোর সিদ্ধান্তের ‘ব্যাখ্যা’ দিল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার। বাংলাদেশের জলসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান সাফ জানিয়েছেন ওই ইলিশ ‘উপহার’ হিসাবে পাঠানো হয়নি। বরং রাজস্ব ও বৈদেশিক মুদ্রার জন্যই ইলিশ রফতানি করেছেন তাঁরা।
গত শনিবার গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রক একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে ইলিশ রফতানির কথা জানায়। তার পরে সে দেশের অন্দরে শুরু হয় এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা। এর আগে ইউনূসের অন্তর্বর্তিকালীন সরকার দাবি করেছিল, ইলিশের মতো ‘ক্ষুদ্র ইস্যু’ ভারত-বাংলাদেশের কূটনৈতিক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্কে কোনও প্রভাব ফেলবে না। ভারত থেকে ডিম আমদানির পরে আলু এবং পেঁয়াজ রফতানি স্বাভাবিক রাখার আর্জিও জানিয়েছিল বাংলাদেশ। এই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের জলসম্পদ এবং পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা বলেন, ‘‘উপহার হিসাবে নয়, ভারতে ইলিশ রফতানি হচ্ছে।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমাদের এই মুহূর্তে ডলারের কেমন প্রয়োজন, সেটা আপনারা জানেন। সেটা ছোট করে দেখার মতো বিষয় নয়। পাশাপাশি যাঁরা ইলিশ চাইছেন, তারাও কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় অনেক সমর্থন করেছেন। সেটি আমরা সবাই দেখেছি।’’
অন্য দিকে, ইউনূস সরকারের উপদেষ্টার এই যুক্তি মানতে নারাজ বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ মাহমুদুল হাসান। ইলিশ রফতানির বিরোধিতা করে ইউনূস সরকারের কাছে একটি আইনি নোটিস পাঠিয়েছেন তিনি। ওই আইনজীবীর দাবি, ‘‘দেশীয় বাজারে ইলিশের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে। ভারতে যে দামে ইলিশ রফতানি করা হবে, তার থেকে অনেক বেশি দামে বাংলাদেশের বাজারে ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। তাই মুনাফার যুক্তি দেখিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে ভারতে ইলিশ পাঠানো যাবে না।’’
২০১৫ সালের ৬ সেপ্টেম্বর প্রকাশিত বাংলাদেশের জাতীয় রফতানি নীতি (২০১৫-১৮)-তে ইলিশকে শর্ত সাপেক্ষে রফতানি পণ্যের তালিকায় রাখা হয়। তবে বিদেশে ইলিশ রফতানির প্রথম অনুমতি দেওয়া হয় ২০১৯ সালে। তখন থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত পুজোর সময়ে ভারতে ইলিশ পাঠানো হত। শেখ হাসিনা সরকার ইলিশ রফতানির উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করলেও গত কয়েক বছরে দুর্গাপুজোর সময়ে ভারতে ইলিশ রফতানি হত। তবে সরকার পরিবর্তনের পর চলতি বছর অভ্যন্তরীণ চাহিদার কথা উল্লেখ করে উৎসবের মরসুমে ভারতে ইলিশ না পাঠানোর ঘোষণা করে ইউনূস সরকার। যদিও কলকাতার মাছ আমদানিকারকদের সংগঠন ‘ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’ বা এফআইএ-এর পক্ষ থেকে গত ৯ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশের বিদেশ মন্ত্রকের উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেনের কাছে একটি আবেদন যায়। তাতে বলা হয়েছিল দুর্গাপুজোর সময়ে বাংলাদেশ থেকে ইলিশ রফতানির অনুমোদনের বিষয়টি যেন বিবেচনা করা হয়। ওই নিয়ে মাসখানেক টালবাহানা চলে। গত সপ্তাহে বাংলাদেশের তরফে জানানো হয় দুর্গাপুজো উপলক্ষে দু’দেশের সৌহার্দ্য বজায় রাখতে ভারতে তিন হাজার টন ইলিশ মাছ রফতানির অনুমোদন দেওয়া হবে। আগামী মঙ্গলবার দুপুর ১২টার মধ্যেই বাংলাদেশের ‘ট্রেড অ্যান্ড কমার্স’ বিভাগের দফতরে সংশ্লিষ্ট রফতানিকারকদের আবেদনের জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy