Advertisement
০৯ জানুয়ারি ২০২৫
Sukanta Majumder

সুকান্তের কটাক্ষ,  তৃণমূলে বীতরাগ কংগ্রেস কর্মীদের

ঘটনাচক্রে, এ দিনই ফেসবুক পোস্টে মহুয়া তাঁর পাশে থাকার জন্য কৃষ্ণনগরের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতি সদস্যা দের প্রশিক্ষণ শিবিরে সুকান্ত মজুমদার। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে।

নির্বাচিত পঞ্চায়েত সমিতি সদস্যা দের প্রশিক্ষণ শিবিরে সুকান্ত মজুমদার। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে। ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১১ ডিসেম্বর ২০২৩ ০৮:২৯
Share: Save:

টাকার বিনিময়ে প্রশ্ন বিতর্কের জেরে কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বহিষ্কারের পরেই তাঁর প্রতি আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়িয়েছে বিজেপি। সেই সঙ্গে ‘ইন্ডিয়া’ জোটের কথা মাথায় রেখে কংগ্রেসকেও নিশানা করছেন তাদের নেতারা। এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলের সঙ্গে জোটের সম্ভাবনা তৈরি হলে কংগ্রেসের নিচুতলার কর্মীরা তা মেনে নেবেন কি না, সেই প্রশ্নও উঠতে শুরু করেছে।

রবিবার ধুবুলিয়ায় দলীয় প্রশিক্ষণ শিবিরে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার দাবি করেন, “মহুয়া মৈত্র যে অপরাধ করেছেন, সেটা প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে। এই অপরাধের শাস্তি হওয়া উচিত কি উচিত নয়, সেটা অধীরদা (অধীর চৌধুরী) ও তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা ঠিক করে বলুন।” যা শুনে তৃণমূল বিধায়ক তথা দলের কৃষ্ণনগর জেলা চেয়ারম্যান রুকবানুর রহমান পাল্টা দাবি করেন, “মহুয়া মৈত্রের অপরাধ প্রমাণ হওয়া তো দূরের কথা, এখনও কোনও তদন্তই শুরু হয়নি। মানুষের রায় তাদের বিরুদ্ধে যাবে বুঝতে পেরে বিজেপি এ সব নোংরা রাজনীতি করছে।

ঘটনাচক্রে, এ দিনই ফেসবুক পোস্টে মহুয়া তাঁর পাশে থাকার জন্য কৃষ্ণনগরের তৃণমূল নেতাকর্মীদের ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তাঁদের সমর্থন পেলে তিনি কৃষ্ণনগরের মানুষের সঙ্গেই থাকতে চান বলে মহুয়া জানিয়েছেন। কিন্তু দলীয় অন্তর্দ্বন্দ্বের জেরে তাঁর জয় সুগম না-ও হতে পারে নদিয়ার তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকেরই আশঙ্কা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে, কংগ্রেসের হাতে থাকা ভোট মূল্যবান হয়ে উঠতে পারে বলে তাঁদের ধারণা।

সুকান্ত এ দিন আরও দাবি করেন, “অধীরদা নিজেই কনফিউজ়ড। তাঁর কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তৃণমূলের সঙ্গে জোট করতে চান। কিন্তু অধীর চৌধুরী জানেন, এখানে যেহেতু তৃণমূলের মারে নিচুতলার কংগ্রেস কর্মীদের পিঠের চামড়া উঠছে, তাঁরা এই জোট মেনে নেবেন না।” এই দাবি কিন্তু কংগ্রেস নেতারা পুরোপুরি উড়িয়ে দিতে পারছেন না। ‘ইন্ডিয়া’ জোটের আবহে দিল্লিতে মহুয়ার পাশে দাঁড়িয়েছে কংগ্রেস। মহুয়ার সাংবাদিক সম্মেলনে তাঁর পাশেই দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে সনিয়া গান্ধীকে। কিন্তু জোটের স্বার্থে যদি কৃষ্ণনগর কেন্দ্রটি তাঁরা তৃণমূলকে ছেড়ে দিতে চান বা তাদের প্রার্থীকে সমর্থন করতে বলেন, জেলা কংগ্রেস নেতৃত্ব কী ভাবে নিচুতলাকে রাজি করাবেন, তা নিয়ে প্রশ্ন থাকছেই।

২০১৪ সালে কৃষ্ণনগর কেন্দ্রে কংগ্রেস প্রার্থী প্রায় ৮০ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। গত লোকসভা নির্বাচনে অবশ্য সেটা কমে প্রায় ৩৪ হাজারে দাঁড়ায়। তার জন্য অবশ্য ‘বহিরাগত প্রার্থী’র যুক্তি দেখিয়েছিলেন কংগ্রেস নেতারা। তাঁরা সে ভাবে প্রচারই করেননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। তবে জেলা নেতৃত্বের দাবি, প্রার্থী নিজেও সে ভাবে প্রচার না করায় স্থানীয় নেতারা অনেকটা নিষ্ক্রিয় হয়ে গিয়েছিলেন। কংগ্রেসের এক জেলা নেতার দাবি, “আমরা এই আসনে জেতার মত অবস্থায় না থাকলেও আমাদের ভোটের উপরে ফলাফল অনেকটাই নির্ভর করবে।”

সেই সম্ভাবনা কিন্তু একেবারেই উড়িয়ে দিচ্ছেন না তৃণমূল নেতাদের অনেকেই। গত বার প্রায় ৬৩ হাজার ভোটে জয়ী হয়েছিলেন মহুয়া। কিন্তু এ বার লড়াইটা কঠিনতর বলে তাঁরা মনে করছেন। ফলে কংগ্রেসের হাতে থাকা অন্তত ৩৫-৪০ হাজার ভোট পাওয়াও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে। কিন্তু বাস্তবে তা কতটা সম্ভব তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। গত পঞ্চায়েত ভোটে রুকবানুরের নিজের কেন্দ্র চাপড়ায় কংগ্রেস কর্মীরা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। চাপড়া ব্লকের বৃত্তিহুদা অঞ্চল সভাপতি আবদুল হামিদ মণ্ডলের মতে, “শীর্ষ নেতৃত্ব জোটের নির্দেশ দিলেও বেশির ভাগ কর্মী তৃণমূলের হয়ে খাটবেন না। তাঁরা বসে যাবেন বলে জানিয়ে দিয়েছেন। কারণ পঞ্চায়েত ভোটের মারের দাগ এখনও মুছে যায়নি।” একই কথা জানাচ্ছেন দলের চাপড়া ব্লক সভাপতি নাসিরুদ্দিন শেখও। তিনি বলেন, “কর্মীরা পরিষ্কার বলে দিচ্ছেন যে তাঁরা তৃণমূলের হয়ে খাটবেন না। আমরা সবাইকে বোঝাতেও পারব না।”

অঞ্চল ও ব্লক স্তরের নেতারা কর্মীদের এই ‘মনের কথা’ পৌঁছে দিয়েছেন জেলা নেতৃত্বর কানে। নদিয়া জেলা কংগ্রেস সভাপতি অসীম সাহা বলেন, “কর্মীরা আমাদের কাছে ক্ষোভ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। তাঁরা পঞ্চায়েত ভোটের দুর্বিসহ স্মৃতি এখনও ভুলতে পারেননি।”

হাইকমান্ড জোটের নির্দেশ দিলে কর্মীদের কী ভাবে রাজি করাবেন?

একটু চুপ করে থেকে অসীম বলেন, “দেখা যাক, শেষ পর্যন্ত কী দাঁড়ায়।” রুকবানুরও বলছেন, “সদ্য পঞ্চায়েত ভোট মিটেছে। শত্রুতা ভুলে দুই দলের কর্মীরা কতটা কাছাকাছি আসতে পারে, সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দুই দলের নেতাদের যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Mahua Moitra
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy