কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে আনিস-মৃত্যুর প্রতিবাদ। সোমবার। নিজস্ব চিত্র।
বন্ধুর অপমৃত্যুর খবর পেয়ে ধক করে উঠেছিল বুকটা। আনিসের বহু দিনের বন্ধু মামন খান। একসঙ্গে ব্রিগেডে যাওয়া, ভর্তি হওয়ার জন্য টাকা জোগাড় করে দেওয়া, কম খরচে কল্যাণীতে মেস খুঁজে দেওয়ার মতো নানা বিষয়ে কথা হত আনিসের সঙ্গে।
সেই আনিস আর নেই!
কথাটা বিশ্বাস করতে মামনের অনেক ক্ষণ সময় লেগেছিল সে দিন। বন্ধুর মৃত্যুর সুবিচারের আশায় রাস্তায় নামতে একটুও ভাবতে হয়নি তাঁকে।
সোমবার কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রছাত্রী, গবেষক, আধিকারিক ও অধ্যাপকেরা তাঁদের বিশ্ববিদ্যালয়ের রাস্তায় ছাত্র আনিস-মৃত্যুর বিচারের জন্য প্রতিবাদ মিছিল বের করে। সেখানে হাজির ছিলেন বাংলা বিভাগের গবেষক তথা আনিসের অনেক দিনের বন্ধু মামনও। ছাত্র-নেতা আনিস খানের মৃত্যুর পর থেকেই তাঁর পরিবারের অভিযোগ, রাতের অন্ধকারে কারা যেন আনিস খানকে ছাদ থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে ‘খুন’ করে। সোমবার যখন সেই বন্ধু অপমৃত্যুর সুবিচারের দাবিতে রাস্তার মিছিলে হাঁটছিলেন মামন, টুকরো-টুকরো অনেক কথাই মনে পড়ছিল তাঁর। এমন মিছিলেই তো প্রতিবাদী আনিসের দেখা মিলত!
আনিসের বয়েস ছিল ২৮ বছর। তাই এ দিন একটি অস্থায়ী শহিদ বেদি করে সেখানে এ দিন ২৮টি মোমবাতি জ্বালানো হয়। মামনও সেখানে মোমবাতি জ্বালান। হাওয়ায় মোমবাতিগুলো যেন নিভে না যায়, তাই যত্ন করে হাত দিয়ে আড়াল করছিলেন মোমবাতির শিখা।
বন্ধু মামনের স্মৃতিচারণায় বার বার ফিরে এল সংগ্রামী ছাত্র-নেতা আনিস খানের কথা। বললেন, ‘‘ছেলেটা রাজনৈতিক ভাবে সচেতন ছিল। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও কথা বলত। বামপন্থী আদর্শেই বিশ্বাসী ও। আনিস সব সময় অন্যদের নিয়ে ভাবত। বিশেষ করে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিদের নিয়ে কথা বলত।’’
এই তো সে দিনও দেখা হয়েছিল ব্রিগেডে! সংযুক্ত মোর্চার মিছিলে। সেই আনিসের মৃত্যুর বিচার চেয়েই আজ রাস্তায় নেমেছেন, বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় বন্ধুর। পরিচিত একজনের মাধ্যমেই আনিসের সঙ্গে মামনের পরিচয়। তার পর থেকে নিয়মিত যোগাযোগ। কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ে জার্নালিজ়ম অ্যান়্ মাস কমিউনিকেশন ২০১৯-এর ব্যাচে ভর্তিও হয়েছিলেন। অর্থের অভাবে সেই সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারছিলেন না আনিস। মামনকেই বলেছিলেন, টাকা জোগাড়ের কথা। সেই মতো বন্ধুর জন্য টাকাও জোগাড় করছিলেন মামন। যদিও পরে আনিস নিজেই টাকা জোগাড় করেন।
কল্যাণীতে থাকার জন্য কম খরচে মেসও খুঁজে দিতে বলেছিলেন আনিস, জানালেন মামন। পরে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যাওয়ায় আর তাঁর থাকার প্রয়োজন হয়নি কল্যাণীতে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের চত্বরে যখন প্রতিবাদী মিছিল ঘুরছে, মামনের সেখানে হাঁটা হল না। চুপচাপ ফিরে গেলেন বাংলা বিভাগে। যাওয়ার আগে শুধু বলে গেলেন, “আনিস মানে একটা প্রতিবাদী মুখ। সব সময়েই।”
প্রতিবাদী মুখের মৃত্যুর সুবিচার চেয়ে তাই হয়তো আজ এত প্রতিবাদ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy