Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
HS

HS test: টেস্ট দিল না বহু পড়ুয়াই, শঙ্কা স্কুলছুটের

মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ে হয়ে যাওয়া এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে রোজগারের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাওয়া এর জন্য মূলত দায়ী বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় 
নদিয়া শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৫৯
Share: Save:

আশঙ্কা ছিলই। শেষ পর্যন্ত পরীক্ষার দিনে ঘটলও তাই।

করোনা পরবর্তী সময়ে স্কুলের প্রথম অফলাইন পরীক্ষায় পড়ুয়াদের একাংশের অনুপস্থিতির আশঙ্কা ছিল। বাস্তবে দেখা গেল, জেলার গ্রামপ্রধান অঞ্চলের স্কুলগুলিতে পাঁচ থেকে পঁচিশ শতাংশ পর্যন্ত পড়ুয়া হাজির হল না মাধ্যমিক উচ্চমাধ্যমিকের টেস্ট দিতে। মেয়েদের ক্ষেত্রে বিয়ে হয়ে যাওয়া এবং ছেলেদের ক্ষেত্রে রোজগারের সন্ধানে অন্যত্র চলে যাওয়া এর জন্য মূলত দায়ী বলে মনে করছেন শিক্ষকেরা।

সীমান্ত-ঘেঁষা করিমপুর কিংবা কলকাতার কাছাকাছি চাকদহ, কল্যাণী ছবিটা সর্বত্র কম-বেশি একই রকম জানাচ্ছে পরিসংখ্যান। মাধ্যমিকে টেস্টের প্রথম দিনেই ভাগীরথী বিদ্যাপীঠের বিপুল সংখ্যক পড়ুয়ার অনুপস্থিতি নজরে পড়েছে। মাধ্যমিকে ২৮৯ জনের মধ্যে ৬৪ জন অনুপস্থিত ছিল। উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে ১৭৪ জনের মধ্যে ১৯ জন অনুপস্থিত ছিল। ওই স্কুলে তিওরখালি, ট্যংরা, মুকুন্দপুর, মহেশগঞ্জ, মাজদিয়া প্রভৃতি গ্রামাঞ্চল থেকে পড়ুয়ারা আসে। স্থানীয় মানুষের বেশির ভাগ চাষাবাদ অথবা রাজমিস্ত্রির কাজ করেন।

প্রধানশিক্ষক নিখিলকুমার নাথ বলেন “নবদ্বীপের গঙ্গার পূর্ব পাড়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের গ্রাম থেকে আমাদের স্কুলের পড়ুয়ারা আসে। স্কুল খোলার পর থেকে একটা বড় অংশই অনুপস্থিত ছিল। আমরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজ নিয়ে দেখেছি, বড় অংশই কাজের খোঁজে চলে গিয়েছে ভিন্ রাজ্যে বা শহরে। অভিভাবকদের অনেকে কথা দিয়েছিলেন পড়ুয়ারা যাতে পরীক্ষাটা দেয়, সেটা তাঁরা দেখবেন। কিন্তু পরীক্ষার দিনে বোঝা গেল শেষ পর্যন্ত পড়ুয়াদের বড় একটা অংশ আর ফিরল না।”

স্কুলছুটদের নিয়ে প্রথম থেকেই দুশ্চিন্তায় ছিলেন চাকদহ বাপুজি বালিকা বিদ্যাপীঠ কর্তৃপক্ষ। স্কুলখোলা থেকে টেস্টের আগে পর্যন্ত অর্ধেকের কম ছাত্রী এসেছে স্কুলে। গ্রামীণ চাকদহের প্রত্যন্ত গ্রামের মেয়েরা ওই স্কুলের পড়ুয়া। প্রধান শিক্ষিকা কবিতা সিংহ রায় বলেন, “মাধ্যমিকে ৬৫ জনের মধ্যে ৫ জন এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ৮৯ জনের মধ্যে ১২ জন পরীক্ষা দিচ্ছে না। খবর পেয়েছি ওদের প্রত্যেকের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। যদিও বিয়ে হয়ে যাওয়ার পরে পরীক্ষা দিচ্ছে এমন পড়ুয়ার সংখ্যা জনা আটেক রয়েছে এ বার।”

শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, যারা টেস্টে আসেনি তাদের খোঁজে গিয়ে কোনও হদিস মেলেনি। বাবা-মায়েরা ইচ্ছে করেই ভুল ঠিকানা দিয়েছেন।

দে পাড়া বিষ্ণুপুর হাইস্কুলের পড়ুয়াদের অর্ধেকের বেশি এ দিন টেস্টে অনুপস্থিত ছিল। তাদের তালিকা তৈরি করে শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিলেন। প্রধান শিক্ষক অজিত ভট্টাচার্য জানিয়েছেন, মাধ্যমিকে ১৬৯ জনের মধ্যে ২৩ জন এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ১২৩ জনের মধ্যে অনুপস্থিত ছিল ৭ জন। তিনি বলেন, “আমরা এখনও চেষ্টা করছি যাতে বাকি পরীক্ষার মধ্যে অনুপস্থিত পড়ুয়াদের হাজির করতে পারি। জানি না, কতটা পারব।’’

তিনি আরও বলেন, ‘‘এক অভিভাবক কথা দিয়েছিলেন মেয়ে বোরখা পরে পরীক্ষা দিতে আসবে। তাতেও আমরা আপত্তি করিনি। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সে আসেনি।”

করিমপুর জগন্নাথ হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক প্রিয়তোষ সরকার বলেন, “আমাদের মাধ্যমিকে ২৬৭ জনের মধ্যে ২৬ জন এবং উচ্চ মাধ্যমিকে ২৬৪ জনের মধ্যে ২৭ জন টেস্ট দিচ্ছে না। আমরা পরীক্ষা দিতে আসা পড়ুয়াদের কাছ থেকে এখনও চেষ্টা করে চলেছি, যাতে বাকিদের খোঁজ পাওয়া যায়।”

তবে অনেকেই মনে করছেন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের টেস্ট শুরু হয়ে যাওয়ার পরেও যারা স্কুলে আসেনি, তাদের আর স্কুলে ফেরার সম্ভাবনা কম। করোনা-পূর্ব পর্বেও স্কুলছুটেরা গ্রাম বা শহর সব জায়গায় ছিল। তবে তাদের সংখ্যা ছিল কম। অনেকে বছরভর স্কুলে না এলেও টেস্ট বা ফাইনালে ঠিক হাজির হয়ে যেত। তখন স্কুলছুটের পিছনে দায়ী ছিল মূলত আর্থিক কারণ। কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে পুরো ব্যবস্থাই পাল্টে গিয়েছে। যার জেরে নবদ্বীপ শহর ঘেঁষা স্কুলে মোট পড়ুয়ার ২২ শতাংশ মাধ্যমিকের টেস্টে অনুপস্থিত থাকছে।
স্কুলছুটের শঙ্কা তাই কমছে না।

অন্য বিষয়গুলি:

HS test examination School students
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy