Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus

প্রথম স্কুলে যাওয়া আটকে অনলাইনে

স্কুল মানে এই ছোট্ট পড়ুয়ারা জানছে শুধু কিছু নোটস, হোমওয়ার্কের পাতা আর সামনে খোলা কম্পিউটরে ফুটে ওঠা ‘এবিসিডি’ বা ‘অআকখ’-কে! জীবনের শুরুতেই স্কুল সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্য ধারণা তৈরি হচ্ছে তাদের।

জীবনের প্রথম ক্লাস অনলাইনে করছে আন্দ্রেয়া ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র

জীবনের প্রথম ক্লাস অনলাইনে করছে আন্দ্রেয়া ভট্টাচার্য। নিজস্ব চিত্র

সাগর হালদার
শেষ আপডেট: ০২ অগস্ট ২০২০ ০১:১১
Share: Save:

প্রথম স্কুল চিনতে পারা, স্কুলের ঘর, বারান্দা, মাঠ, পড়া, হইচই, গল্প—সবকিছু প্রথম অনুভব করা আর হয়ে উঠছে না একরত্তি ছেলেমেয়েগুলোর। চলতি বছরেই তারা জীবনে প্রথম স্কুলে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু ছোট্ট ব্যাগে বই, টিফিন বাক্স ভরে, জলের বোতল হাতে স্কুলে পা রাখা আর হয়ে ওঠেনি এদের অধিকাংশেরই। কারণ, করোনা।

স্কুল মানে এই ছোট্ট পড়ুয়ারা জানছে শুধু কিছু নোটস, হোমওয়ার্কের পাতা আর সামনে খোলা কম্পিউটরে ফুটে ওঠা ‘এবিসিডি’ বা ‘অআকখ’-কে! জীবনের শুরুতেই স্কুল সম্পর্কে সম্পূর্ণ অন্য ধারণা তৈরি হচ্ছে তাদের। স্ক্রিনেই দিদিমনি তাদের ছড়া বা গান শেখাচ্ছেন। সহপাঠীদের সঙ্গে গলা মিলিয়ে ছড়া বা নামতা পড়া, একসঙ্গে ছুটোছুটি, খুনসুটি, টিফিন ভাগ করে খাওয়া, সবকিছুর অভিজ্ঞতা থেকে বঞ্চিত এই শিশুরা। আর তাতে আফশোসের শেষ নেই এদের অভিভাবক এবং শিক্ষকদেরও। প্রত্যেকেই চাইছেন, দ্রুত স্বাভাবিক হোক সব কিছু। এই শিশুরা সত্যিকারের স্কুলে পা রাখুক।

তাহেরপুরের প্রসেনজিৎ ভট্টাচার্যের মেয়ে আন্দ্রেয়া ভট্টাচার্যকে কৃষ্ণনগরের একটি বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করা হয় লকডাউনের ঠিক আগে। প্রসেনজিৎ জানান, ১৬ ই মার্চ প্রথম স্কুলে যাওয়ার কথা ছিল আন্দ্রেয়ার। কিন্তু ১৪ ই মার্চ সিবিএসই বোর্ড একটি নির্দেশিকা জারি করে স্কুল বন্ধ রাখার কথা ঘোষণা করেন। প্রথম স্কুলে যাওয়া আটকে যায় আন্দ্রেয়ার। স্কুল কর্তৃপক্ষ ১ জুন সদ্য ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের অনলাইন ক্লাস শুরু করার কথা জানান। সেই মতো পরের দিন থেকে শুরু হয়ে যায় অনলাইন ক্লাস।

প্রসেনজিৎবাবুর কথায়, ‘‘স্কুলের ড্রেস পরে স্কুলে যাওয়ার বদলে আন্দ্রেয়ার কাছে স্কুল মানে এখন একটা কম্পিউটর! এর থেকে দুঃখের আর কী হতে পারে! স্কুলের দুঃখসুখ-বন্ধুত্ব-ভাবআড়ি কিছুই জানতে পারছে না। শিশুদের স্বাভাবিক শৈশবটাই হারিয়ে যাচ্ছে।’’

তেহট্টের একটি ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে সনিয়া মণ্ডলকে ভর্তি করেছিলেন মা-বাবা। তাঁদের মতে, অনলাইন ক্লাসের সবচেয়ে বড় অসুবিধা হল, ওইটুকু শিশুরা ধৈর্য রাখতে পারে না। তাদের পক্ষে টানা এতটা সময় এক জায়গায় বসে স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকা ও শেখা প্রায় অসম্ভব। এতে শিশুমনের বিকাশও ধাক্কা খায়, চোখেরও ক্ষতি হয়।।

নবদ্বীপের অপরাজিতা পালের মেয়ে সবে ওয়ানে উঠেছে। তিনি বলেন, ‘‘অনলাইন ক্লাস এইটুকু ছেলেমেয়েরা করতে পারে না। বুঝতেও পারে না। ফলে শিখতে ও পড়তে হচ্ছে মূলত অভিভাবকদের। স্কুল খোলা থাকলে শেখার পদ্ধতিটাই অন্য হত।’’

অনেকেই আবার ভয় পাচ্ছেন যে, জীবনের শুরু থেকেই এতে ছোটদের একটা আকর্ষণ ও নির্ভরতা তৈরি হবে ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র, বিশেষ করে কম্পিউটর ও মোবাইলে। তারা অনেকেই আর বই দেখতে বা পড়তে চাইবে না।

এ ব্যাপারে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান জ্যোতিপ্রকাশ ঘোষ বলেন, ‘‘অতিমারি পরিস্থিতিতে এইরকম একটা অস্বাভাবিক পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার বিকল্প পদ্ধতি হয়েছে বাড়িতে অনলাইন ক্লাস। আশা করি খুব তাড়াতাড়ি আবার স্কুলগুলি খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ছাত্রছাত্রীরা সমস্যা থেকে মুক্তি পাবে। আবার স্কুল গমগম করবে শিশুদের দুরন্তপনায়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy