সুনসান আদালত চত্বর। নিজস্ব চিত্র।
টানা কর্মবিরতি চলছে। আর তার জেরে ভুগছেন ওঁরা।
হেলমেট না পরে মোটরবাইক চালানোয় পুলিশ মামলা রুজু করেছিল কান্দির হিজল আহেরি নগরের হাসিবুর শেখ। নির্ধারিত সময়ে আদালতে হাজিরা না দেওয়ায় গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি হয়।
শনিবার রাতে পুলিশ পাকড়াও করেছিল হাসিবুরকে। রবিবার কান্দি আদালতে তোলা হলে অতিরিক্ত বিচারবিভাগীয় বিচারক হৈমন্তিকা সুনদাস জামিন মঞ্জুর করেন। শর্ত ছিল, ২১০০ টাকা জমা দিতে হবে। কিন্তু আইনজীবীরা কাজ না করায় হাসিবুরের বাড়ির লোকেরা তা জমা দিতে পারছেন না। জামিনও হচ্ছে না। মঙ্গলবারও দিনভর আদালত চত্বরে ঘোরাফেরা করার পরে নিরাশ হয়ে বাড়ি ফিরে গেলেন তাঁরা।
জমির মামলায় প্রায় তিন মাস পরে শুনানির দিন পেয়ে সকাল-সকাল আদালত চত্বরে হাজির হয়েছিলেন কান্দি থানার গোকর্ণ গ্রামের চাষি বাবুলাল শেখ। সিভিল জজ (দ্বিতীয়) এজলাসে মামলা ওঠার কথা ছিল। আইনজীবীরা আদালত বয়কট করায় দিনভর হয়রান হয়েছেন তিনি। গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে খাওয়া সেরেছেন। তার পর ব্যাজার মুখেই বাড়ি ফিরেছেন। রাহা খরচ গিয়েছে দেড়শো টাকা।
জমি নিয়ে গোলমালে মারপিটে জড়িয়ে গত ২৩ সেপ্টেম্বর থেকে জেলে রয়েছেন হিজল গ্রাম পঞ্চায়েতের নতুন গ্রামের বাসিন্দা, বছর পঁয়ষট্টির আব্দুল সাত্তার। ওই দিন কান্দিতে জেলার অতিরিক্ত মুখ্য বিচারবিভাগীয় এজলাসে আব্দুল সাত্তারকে তোলা হয়। খেত থেকে আমন ধান ঘরে তোলার কাজ ফেলে রেখে বাবাকে জামিন করিয়ে বাড়ি নিয়ে যেতে এসেছিল ছেলে জিম্বু শেখ। কিন্তু দিনভর আদালতে ঘোরাফেরা করে বাড়ি ফিরে যায়।
এই হয়রানির কারণ: বিচারক হৈমন্তিকা সুনদাসকে অপসারণের দাবিতে ১৫ দিন কর্মবিরতির পালন করছেন কান্দি আদালতের ২২০ জন আইনজীবী। তাঁদের অভিযোগ, ওই বিচারক মক্কেলদের সামনেই আইনজীবীদের অপমান করেন। তাঁকে সরানোর দাবি জানিয়ে কান্দি আদালতের দু’টি আইনজীবী সংগঠন প্লিডার্স অ্যান্ড অ্যাডভোকেটস বার অ্যাসোসিয়েশন এবং কান্দি বার অ্যাসোসিয়েশন একযোগে গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে ওই এজলাস বয়কট করার সিদ্ধান্ত নেয়। আইনজীবীরা হাইকোর্টেও আর্জি জানিয়েছেন। যদিও এখনও পর্যন্ত সেখান থেকে কোনও সাড়াশব্দ মেলেনি।
এই পরিস্থিতিতেই সম্প্রতি কান্দি আদালতের ন’টি এজলাস টানা ১৫ দিন বয়কট করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনজীবীরা। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তে বিচারপ্রার্থীরা নাজেহাল হচ্ছেন। মোটরবাইক মামলায় অভিযুক্ত হাসিবুরের বাবা মুরসালিম শেখ বলেন, “ছেলের জামিন হয়েছে। শুধু জরিমানার টাকা জমা দিতে না পারায় বাইরে আসতে পারছে না। নিজে টাকা জমা দিতে গেলাম। আইনজীবীরা বাধা দিচ্ছেন। কী করব বুঝে উঠতে পারছি না। আইনের মতো একটা গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবা নিয়ে বয়কটের রাস্তায় না হাঁটলেই ভাল করতেন আইনজীবীরা।”
মাস তিনেক বাদে শুনানির দিন পেয়ে গোকর্ণের বাবুলাল শেখ ভেবেছিলেন, আজ বোধহয় মামলার নিষ্পত্তি হবে। তিনি বলেন, “মাঠে না গিয়েই আদালতে চলে এসেছি। কিন্তু এখানে এসে দেখি, উকিলবাবুরা বয়কট করেছে। কাজের কাজ কিছুই হল না, অথচ আমার দেড়শো টাকা খরচ হয়ে গেল।”
জমি সংক্রান্ত গোলমালের জেরে জেলে আটকে থাকা আব্দুল সাত্তারের ছেলে জিম্বু শেখ বলেন, “বিঘা দুয়েক জমিই সম্বল। তা-ও আবার হিজল এলাকায় বাড়ি হওয়ায় বন্যাতেই ফসল নষ্ট হয়ে যায়। বাবা-ছেলে মিলে খেতে কাজ করে সংসার চালাই। কিন্তু আইনজীবীরা বয়কট করায় খরচ করে আদালতে এসেও ক্ষতি হয়ে গেল।”
দুই আইনজীবী সংগঠনের যৌথ মঞ্চের সভাপতি সত্যব্রত ঘোষ বলেন, “আমরা সাধারণ মানুষের জন্যই ওই বয়কট করেছি। অধিকাংশ সময়ে জামিন পাওয়ার পরেও শুধু মাত্র কাগজপত্র তৈরির অজুহাতে এক দিন অতিরিক্ত জেলে থাকতে হয়। হাইকোর্ট আমাদের দাবি মেনে ওই বিচারকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেই আমরা আন্দোলন প্রত্যাহার করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy