ভগ্নপ্রায় রাস্তায় গাড়ি আর নড়ে না। কৃষ্ণনগরের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক।
রাস্তায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে পণ্যবাহী ট্রাক, বাস, ম্যাটাডোর। পিছনে অ্যাম্বুল্যান্স। নাগাড়ে বেজে চলেছে সাইরেন। ভিতরে ছটফট করছে রোগী। কিন্তু যাওয়ার পথ কোথায়?
বাসের ভিতরে বার বার ঘড়ি দেখছেন এক যুবক। এমনিতেই আধ ঘণ্টা দেরি। বাকি পথটা যেতে আরও কতটা সময় লাগবে ভাবতে গিয়েই কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম। চাকরির প্রথম দিনেই দেরি। কিন্তু উপায় কী?
এই নিয়ে চার বার ফোন এল ট্রাকের মালিকের। উত্তরবঙ্গে এতক্ষণ পণ্য নিয়ে পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। অথচ যন্ত্রাংশ ভেঙে ট্রাক আটকে আছে রেজিনগরে। চালক কখন পৌঁছবেন গন্তব্যে?
চাকদহ, শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর, পলাশি, রেজিনগর, বেলডাঙা-সহ নদিয়া ও মুর্শিদাবাদের একটি বড় অংশে জাতীয় সড়কের অবস্থা এতটাই খারাপ যে ভোগান্তি, যানজট কিংবা গাড়ির যন্ত্রাংশ ভাঙা রীতিমতো রোজনামচা।
বেহাল এই রাস্তার কারণে এখন অনেকেই বাস কিংবা গাড়ির পরিবর্তে ট্রেনকেই বেছে নিচ্ছেন। কিন্তু সড়ক পথ ছাড়া যাঁদের গতি নেই সেই বাসচালক ও যাত্রীরা বলছেন, ‘‘রাস্তা কোথায়? অন্যসময় গর্তের উপর দিয়ে যাতায়াত করি। বর্ষায় ডোবা দিয়ে!’’
সোমবার রাত থেকে মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত শান্তিপুর থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত চার জায়গায় গর্তে পড়ে সাতটি ট্রাকের যন্ত্রাংশ ভেঙে গিয়েছে। বিকল হয়ে রাস্তার উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে গাড়িগুলি। দীর্ঘ যানজটে আটকে পড়েন কয়েক হাজার মানুষ। আটকে পড়েন খোদ বিদ্যুৎমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ও। যানজট মুক্ত করতে হিমসিম খায় পুলিশ।
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষকে এমন বেহাল দশার কথা জানিয়েছেন দুই জেলা প্রশাসনেরই কর্তারা। কিন্তু এখনও পর্যন্ত রাস্তার কোনও উন্নতি হয়নি। নদিয়ার চাকদহ, শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর কিংবা মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, রেজিনগরের মতো এলাকার রাস্তার হাল ফিরবে কবে?
পুকুর নয়! রেজিনগরের কাছে রাস্তার হাল।— নিজস্ব চিত্র
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসাত থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত ৮৪ কিমি সড়ক সম্প্রসারণের কাজের দায়িত্ব পেয়েছিল একটি সংস্থা। কিন্তু মাঝ পথে তারা কাজ বন্ধ করে দেওয়ায় ওই সংস্থার চুক্তি বাতিল করে দেওয়া হয়। অন্য দিকে কৃষ্ণনগর থেকে বহরমপুর পর্যন্ত প্রায় ৭৮ কিমি রাস্তার কাজের দায়িত্ব পায় আর একটি সংস্থা। তারা প্রায় ৫২ শতাংশ কাজ করার পরে আর্থিক সঙ্কটে পড়ে। ঋণ চেয়ে বসে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে।
ওই সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার শরৎ মাথুর বলেন, “ঠিক সময়ে জমি না পাওয়ায় আমাদের সমস্যা হয়েছে। সেই কারণেই আমরা জাতীয় সড়ক কতৃপক্ষের কাছে ঋণ চেয়েছি। টাকা পেলেই কাজ শুরু করে দিতে পারব।”
জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জটিলতার কারণেই জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ পিছিয়ে গিয়েছে। তবে বেহাল রাস্তায় তাপ্পি মারার কাজ চলছিল। কিন্তু বর্ষার কারণে দ্রুত কাজ করা যাচ্ছে না বলেই এমন সমস্যা। তাছাড়া জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ ও সম্প্রসারণের বরাত পাওয়া সংস্থার দাবি, সময়মতো জমি না পাওয়াও এর একটা বড় কারণ।
যদিও জেলা প্রশাসনের পাল্টা দাবি, জমি নিয়ে কোনও সমস্যাই নেই। জাতীয় সড়কের বেহাল দশার কথা কবুল করে নদিয়ার জেলাশাসক সুমিত গুপ্তা বলেন, “জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের কাছে গোটা বিষয়টি জানতে চেয়েছি। সেই রিপোর্ট পেলেই পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
এ দিকে, রাস্তার এমন দশার কারণে পরিবহণ শিল্পের উপরে সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে। বহরমপুর থেকে কলকাতা রুটের বাসে যাত্রী সংখ্যা আগের তুলনায় অনেক কমে গিয়েছে বলে অভিযোগ মুর্শিদাবাদের বাস মালিক সংগঠনের সহ সম্পাদক রথীন মণ্ডলের। তিনি জানাচ্ছেন, রাস্তার বেহাল দশার কারণে যাত্রী সংখ্যাও দিন দিন কমছে।
বহরমপুর-কলকাতা রুটের এক বাস চালক আমানুল্লা শেখ বলছেন, ‘‘রাস্তার গর্তে জল জমে এমন অবস্থা হয়েছে যে রোজই গাড়ির যন্ত্রাংশ ভাঙছে। রাস্তায় মুখ থুবড়ে একাধিক গাড়ি পড়ে থাকছে।’’
৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের মালদহ ডিভিশনের প্রকল্প আধিকারিক দিনেশকুমার হাংসারিয়া বলেন, ‘‘বেহাল ওই রাস্তা দ্রুত মেরামত করা হবে।’’
বহু বার শোনা এমন আশ্বাসে অবশ্য ভরসা পাচ্ছেন না চালক ও নিত্যযাত্রীরা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy