Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
শীতল পদ্মা ১
fish

পদ্মাপাড়ের পাত থেকেও হারাচ্ছে পিউলি, ট্যাংরা

বিকেলের পরে তাকে চেনাই যায় না, কুয়াশা আর কুয়াশা। সেই শীতল পদ্মায় মাছের স্বাদ যেমন বদলে যায় তেমনই ওপারের ধীবরের নৌকা নিঃশব্দে এসে ভেড়ে এ পারের ঘাটে। খোঁজ নিল আনন্দবাজারমৎস্য বিশেষজ্ঞ সূর্য্যেন্দু দে বলছেন, ‘‘শীতের মাছ ভীষণ সুস্বাদু হয়। পদ্মার মাছ হলে তো কথাই নেই।

পদ্মা নদী। —ফাইল চিত্র।

পদ্মা নদী। —ফাইল চিত্র।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
 জলঙ্গি শেষ আপডেট: ১০ জানুয়ারি ২০২০ ০৩:৪৪
Share: Save:

রোজই সকালে উঠে বাজারের লিস্টি করতে গিয়ে ‘পিউলি’ লিখেও কেটে দেন সাগরপাড়ার বিমলা মণ্ডল। বাড়ির কাছে পদ্মা। মাছের বাজারও বেশি দূরে নয়। পদ্মায় কোনও মাছ উঠলে আগে তা এই বাজারেই আসে। অথচ পৌষে যে পিউলি, রায়খয়রা, ট্যাংরা মিলত বছর কয়েক আগেও, এখন সে সবের দেখা নেই। ধীবরেরা বেজার মুখে বলছেন, ‘‘পদ্মায় আগের মতো নিশ্চিন্তে মাছ ধরতে পারলে তবেই না জালে ও সব মাছ উঠবে!’’

মাছ নিয়ে সাহিত্য, কাব্যে কত কথাই না আছে! প্রাচীন বাংলায় যাঁর ভাতের পাতে ‘মোইলি মচ্ছা’ পড়ত, তাঁকে ‘পুণ্যবন্তা’ বলে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। বৃহদ্ধর্মপুরাণে উল্লেখ রয়েছে, রোহিত বা রুই, শফর বা পুঁটি, শোল মাছের কথা। জীমূতবাহন ইলিশ মাছের তেলের বহুল ব্যবহারের কথা বলেছেন। বাঙালির ইতিহাস, আদি পর্বে নীহাররঞ্জন রায় লিখেছেন, ‘‘বারিবহুল, নদনদী-খালবিল বহুল... বাংলায় মৎস্য অন্যতম প্রধান খাদ্যবস্তু রূপে পরিগণিত হইবে, ইহা কিছু আশ্চর্য নয়।...বাংলাদেশের এই মৎস্যপ্রীতি আর্য সভ্যতা ও সংস্কৃতি কোনদিনই প্রীতির চক্ষে দেখিত না, আজও দেখে না, অবজ্ঞার দৃষ্টিটাই বরং সুস্পষ্ট।”

তবে পদ্মাপাড়ের এই অবজ্ঞা যতটা না ধীবরদের, তার চেয়েও বেশি সীমান্তের প্রহরীদের। তাঁদের অঙ্গুলিহেলনেই ওঠাপড়া করে সীমান্তের ভাগ্য। আর সেটাই মুখ বুজে মেনে নিতে হচ্ছে পদ্মাপাড়ের ধীবরদের।

পৌষের পদ্মায় কনকনে ঠান্ডায় কাঁপতে কাঁপতে পদ্মায় ডিঙি ভাসান প্রশান্ত মণ্ডল। জলঙ্গির কাকমারি পদ্মায় মাছ ধরার ফাঁকে তিনি বলছেন, ‘‘সেই কাকভোরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছি। কিন্তু মাছ ধরতে নামার অনুমতি মিলল রোদ ওঠার পরে। এখন আর কী মাছ পাব, বলুন তো!’’ আর এক মৎস্যজীবী বলছেন, ‘‘দিন কয়েক থেকে আর পদ্মামুখো হচ্ছি না। বিএসএফের মর্জি মতো তো আর জালে মাছ উঠবে না। তাই পদ্মায় মাছ থাকলেও আমরা সব সময় সেই মাছ ধরতে পারছি না।’’ মাস কয়েক থেকে নানা জটিলতায় উত্তাল হয়েছে পদ্মা। সেই কারণে এখন মাঝপদ্মায় যাওয়া বারণ। ফলে মন খুলে মাছ ধরার দিন ফুরিয়েছে।

মৎস্য বিশেষজ্ঞ সূর্য্যেন্দু দে বলছেন, ‘‘শীতের মাছ ভীষণ সুস্বাদু হয়। পদ্মার মাছ হলে তো কথাই নেই। এই সময় পদ্মার পিউলি, রায়খয়রা, ট্যাংরা, ছোট ইলিশ মেলে। কিন্তু পদ্মাপাড়ের মৎস্যজীবীরা সব সময় সেই মাছ ধরার অনুমতি পান না। ফলে স্থানীয় বাজারে শীতের মাছের চাহিদা থাকলেও তা সবসময় মিলছে না।’’

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy