আহিরণ থেকে পাওয়া সোনার মুদ্রাগুলিতে উপবিষ্ট অবস্থাতেও লক্ষ্মীর প্রতিকৃতি মিলেছে। গুপ্তযুগের মুদ্রায় এমন প্রচুর মিলেছে। ইতিহাসবিদেরা জানান, হাতে ধ্বজা বা রাজদণ্ড ধরা রাজার প্রতিকৃতি দেওয়া মুদ্রাগুলির সমুদ্রগুপ্তের সময় থেকে প্রচলন শুরু হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক সুরেশচন্দ্র ভট্টাচার্য জানিয়েছিলেন, ওই মুদ্রাগুলির একটিতে পরিষ্কার লেখা রয়েছে ‘কাচ’ বলে গুপ্ত রাজার নাম। কাচকে কেউ কেউ সমুদ্রগুপ্তের সঙ্গে অভিন্ন মনে করেন। সমুদ্রগুপ্তের আর একটি পরিচয় ‘সর্বরাজোচ্ছেত্তা’-ও ওই মুদ্রায় উৎকীর্ণ রয়েছে। তাতে মনে হচ্ছে মুদ্রা সমুদ্রগুপ্তেরই হতে পারে।
ভারতীয় ইতিহাসে গুপ্তযুগ সার্বিক ভাবেই সমৃদ্ধ যুগ ছিল। কেউ কেউ স্বর্ণযুগও বলেন। তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে এবং চলতেও থাকবে। কিন্তু সেই গুপ্তযুগের বিস্তারের প্রমাণ বাংলার মাটিতেও মেলা অত্যন্ত গৌরবের কথা। কুমারগুপ্ত, বুধগুপ্ত, বৈন্যগুপ্ত, দামোদরগুপ্তের মতো রাজাদের প্রভাব এই অঞ্চলে ছিল। প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রূপেন্দ্রকুমার চট্টোপাধ্যায় জানান, সমুদ্রগুপ্তের ইলাহাবাদ প্রশস্তি শিলালিপি থেকেও জানা যায়, এই অঞ্চল গুপ্ত সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল।
রাজ্য পুরাতত্ত্ব দফতরের আধিকারিকেরা জানান, আহিরণের যে স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গিয়েছিল সেগুলি গুপ্তযুগের। গণকরে খননের উদ্দেশ্য ছিল ওই সময়কার সমাজ-সংস্কৃতির পরিচয়ের সন্ধান খুঁজে দেখা, যাতে সেই সময় এখানে কি ধরণের মানুষের বসবাস ছিল সেটা জানা সম্ভব হয়।
শুধু তাই নয়, ইতিহাসবিদদের মতে, কত মুদ্রা পাওয়া গিয়েছে, তার একটি হিসেব থাকলে, এই এলাকার কী পরিচয় ছিল প্রাচীন কালে, তার একটা ধারণা পাওয়া যেত। যেমন, যদি প্রচুর স্বর্ণমুদ্রা মেলে, তা হলে এমনটা পর্যন্ত ধরে নেওয়া যায়, এখানে কোনও টাঁকশাল ছিল। আবার, এখানে কোনও ব্যবসায়িক লেনদেনের সুযোগ ছিল কিংবা কোনও প্রতিষ্ঠানে সেই মুদ্রাগুলো রাখা হত, এমনটাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ধরে নিতে হবে, এই এলাকা তখন দেশের রাজনীতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। আবার কোনও একটি কলসি বা ঘড়া থেকে মুদ্রাগুলো পাওয়া গেলে, তার অার এক রকম মানে হতে পারে।
কিন্তু তার জন্য দরকার ঠিক কত মুদ্রা এখানে পাওয়া গিয়েছে, তার হিসেব। ইতিহাসবিদদের মতে, কোন মুদ্রা কত ধরনের পাওয়া গিয়েছে, তা জানলে আরও সূক্ষ্ম হিসেব করা সম্ভব। তাতে উঠে আসত মুর্শিদাবাদ সহ বঙ্গদেশেরই ইতিহাসের এক উজ্জ্বল অধ্যায়।কিন্তু কত মূদ্রা হারিয়ে গিয়েছে, সেগুলো কারা হস্তগত করেছে এবং কোথায় বিক্রি করে দিয়েছে, প্রশাসনের কাছে তার তেমন কোনও উত্তর এখনও নেই। তাই প্রয়োজন আরও গভীর গবেষণা করা। বিশেষ করে আহিরণ, গণকরে সেই কাজ আরও গভীরে করা দরকার ছিল। গণকরে সমীক্ষায় মিলেছিল ৩০টি মৃৎপাত্র, বোঝা যায় এখানে সম্পন্ন গৃহস্থদেরই বসবাস ছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy