Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

অমল-রোদ্দুরে ছুটে এল গুলি 

তাঁদের দেওয়ালে কখনও মাথা কুটে মরেনি রোগী, বরং দুঃস্থ পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফিজ দিতে গেলে পাল্টা ধমক খেতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে, ‘ওষুধটা আমিই কিনে দেব’, সেই সব হারানো ‘দেবতা’দের স্মৃতি হাতড়াল আনন্দবাজারতাঁদের দেওয়ালে কখনও মাথা কুটে মরেনি রোগী, বরং দুঃস্থ পাঞ্জাবির পকেটে হাত ঢুকিয়ে ফিজ দিতে গেলে পাল্টা ধমক খেতে হয়েছে। শুনতে হয়েছে, ‘ওষুধটা আমিই কিনে দেব’, সেই সব হারানো ‘দেবতা’দের স্মৃতি হাতড়াল আনন্দবাজার

অনল আবেদিন
বহরমপুর শেষ আপডেট: ০৫ জুলাই ২০১৯ ০১:০৬
Share: Save:

অমল রোদ্দুর হতে চাননি, প্রয়োজনও ছিল না। তিনি তো রোদ্দুরই ছিলেন। তাই দালালচক্র নির্মূল করতে বছর দুয়েকের কর্মস্থল ফরাক্কার অর্জুনপুর হাসপাতাল থেকে তাঁকে বদলি করা হয়েছিল সুতির মহিশাইল ব্লক হাসপাতালে। সততার তেজে হাসপাতালের দালালচক্রের গাঁটছড়া ক্রমে পুড়তে শুরু করেছিল। লোভনীয় টোপ তাঁকে দমাতে পারেনি। প্রাণনাশের হুমকিতেও ভয় না পাওয়ায় ঝুঁকি নেয়নি দুষ্টুচক্র। ১৯৯২ সালে এক হাজার টাকার ভাড়াটে দুষ্কৃতীর গুলিতে ঝাঁঝরা হয়ে যান অমল। মহিশাইল ব্লক হাসপাতাল প্রাঙ্গণের সরকারি আবাসনের মেঝেয় লুটিয়ে পড়েন বছর তিরিশের তরুণ ডাক্তারের দেহ।

ডাক্তার অমল সর্দারের বাড়ি ছিল সুন্দরবনের হিজলগঞ্জে। ডাক্তারি পড়েছেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে। ১৯৮৬ সালে তাঁর সহপাঠী ছিলেন বহরমপুরের চিকিৎসক নির্মল সাহা। তিনি বলছেন, ‘‘অমল বরাবরই ছিল নীতিনিষ্ঠ, সৎ, দরদী এবং জেদি। অর্জুনপুরে থাকার সময় স্বাস্থ্য দফতরের অন্দরে ও রোগী মহলে তাঁর সততা, নিষ্ঠা গ্রামের মানুষের কাছে তাঁকে প্রবল জনপ্রিয় করে তুলেছিল।’’

ওই সময়ে মহিশাইল হাসপাতালে রোগী গেলেই জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে ‘রেফার’ করা ছিল অবধারিত। স্থানীয় বাসিন্দারা বলতেন, ডাক্তারেরা ‘রেফার’ রোগে ভুগছেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের অবরসরপ্রাপ্ত এক আধিকারিক বলেন, ‘‘তখন ওই হাসপাতালে সরকারি চিকিৎসা পরিষেবা শিকেয় তুলে দিয়ে অনেক চিকিৎসকই সরকারি আবাসনে টাকার বিনিময়ে রোগী দেখতেন। জেলা স্বাস্থ্য দফতর থেকে পাঠানো ওষুধের ছিটেফোঁটাও রোগীর কাছে পৌঁছত না।’’

মহিশাইল হাসপাতালের এক কর্তাও বলছেন, ‘‘সেই সময়ে কলকাতার বাগড়ি মার্কেট থেকে নকল ওষুধ কেনা হত।’’ সেই ঘুঘুর বাসা ভাঙতে মুর্শিদাবাদ জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক শক্তিপদ মণ্ডল দুষ্টুচক্রের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে অমলকেই দায়িত্ব দেন। দুষ্টচাকে ঘা পড়তেই দলে টানতে অমলকে লোভনীয় টোপ দেওয়া হয়। টোপ বিফল হলে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়। অমলের জেদ আরও বেড়ে যায়। উপায় নেই দেখে এ বার তাঁকে গুলি করে খুন করা হয়।

নির্মল সাহা বলেন, ‘‘অভিযুক্তদের গ্রেফতার করা হলেও ৯০ দিনের মধ্যে পুলিশ আদালতে চার্জশিট জমা দিতে পারেনি। ফলে ধৃতেরা জামিন পেয়ে যায়।’’ বহরমপুরে অনুষ্ঠিত স্মরণসভায় তৎকালীন মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার অসীম চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ডক্টর অমল সর্দার ইজ নট কিল্ড, বাট অনেস্টি ইজ কিল্ড!’’

(চলবে)

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy