Advertisement
E-Paper

ঐক্যশ্রীতে চুরির ‘হাতেখড়ি’, লক্ষ্মীর ভান্ডারে ব্যর্থতা থেকে ‘শিক্ষা’ নিয়ে ট্যাবে সফল পাবজি খেলুড়েরা

ট্যাব-কাণ্ডে রাজ্য জুড়ে ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তবে নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কারও গ্রেফতারির খবর মেলেনি। ইসলামপুর এবং ফরাক্কায় পাঁচটি এফআইআর দায়ের হয়েছে।

Tab Case

‘তরুণের স্বপ্নে’ হানা দেওয়ার আগে রাজ্যের অন্যান্য প্রকল্প থেকে টাকা সরানোর চেষ্টায় ছিলেন সাইবার অপরাধীরা! গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০২৪ ০৯:৫৩
Share
Save

ট্যাব-কাণ্ডের নেপথ্যে রয়েছেন একদল ‘তরুণ সাইবার বিশেষজ্ঞ’! তাঁদের হাতেখড়ি পাবজির মতো অনলাইন গেমে। হাত মকশোর পরে সেই তাঁরাই অনলাইনে ছোঁ মারতে চেয়েছেন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকায়। সফলও হয়েছেন সামান্য। এ বার সেই ‘সাইবার বিশেষজ্ঞ’রাই ট্যাব-কাণ্ডের ‘খলনায়ক’! তদন্তে নেমে বেশ কয়েক জনকে গ্রেফতার করার পর প্রাথমিক ভাবে এমনটাই ধারণা তদন্তকারীদের একাংশের।

নেট দুনিয়ায় যাতায়াত শুরু পাবজি গেম দিয়ে। কখনও বাবার কাছে আবদার করে নেওয়া টাকায়, কখনও স্কুল থেকে পাওয়া স্কলারশিপের অর্থে কেনা প্রথম ‘টাচস্ক্রিন মোবাইল’-এ খেলা শুরু। তার পর টাকার নেশায় কখনও নেটমাধ্যমে জুয়া খেলা, কখনও বাজি ধরে মোবাইল গেম খেলতেন স্কুল পেরিয়ে কলেজে পৌঁছনো কিছু তরুণ। ধাপে ধাপে তাঁরাই জড়িয়েছেন সাইবার অপরাধের দুনিয়ায়। বস্তুত, ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের টাকা সরানোর কাজে অভিযুক্তদের বেশির ভাগই তরুণ এবং যুবক। তাঁদের কেউ কেউ ছোট্ট একটা ‘ডেস্কটপ’ নিয়ে ঘুপচি ঘরে তৈরি করেছিলেন ‘অনলাইন সার্ভিস সেন্টার’। কাজ বলতে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের আবেদনপত্রের ফর্ম পূরণ, নির্দিষ্ট পোর্টালে আবেদনপত্র জমা দেওয়া, ট্রেন এবং উড়ানের টিকিট বুকিং এবং সস্তায় মোবাইলের সিম কার্ড বিক্রি। এই সমস্ত কাজ করতে গিয়ে প্রচুর মানুষের ব্যক্তিগত তথ্য হাতে পেয়েছিলেন তাঁরা। এর পর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট এবং আধার কার্ডের সেই সব তথ্যকে হাতিয়ার করে সাইবার অপরাধের দুনিয়ার প্রবেশ করেন ওই ‘অনলাইন সার্ভিস সেন্টার’-এর মালিকেরা। প্রায় দু’হাজার পড়ুয়ার ট্যাবের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার নেপথ্যে এই ‘তরুণ সাইবার বিশেষজ্ঞ’দেরই হাত দেখছেন তদন্তকারীদের একাংশ। শুধু তা-ই নয়, তদন্তে উঠে আসছে, পড়ুয়াদের ট্যাবের টাকা সরানোর আগে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা হাতানোর কাজেও হাত দিয়েছিলেন অভিযুক্তেরা।

ট্যাব-কাণ্ডে রাজ্য জুড়ে এখনও পর্যন্ত ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ থেকে শুক্রবার রাত পর্যন্ত কারও গ্রেফতারির খবর না মিললেও ইসলামপুর এবং ফরাক্কায় মোট পাঁচটি এফআইআর দায়ের হয়েছে। অভিযুক্ত হিসাবে রয়েছে ১৭ জনের নাম। পুলিশের দাবি, তাঁরা সকলেই পলাতক। কী ভাবে ট্যাব-কাণ্ডে জড়ালেন তাঁরা? জানা যাচ্ছে, কিছু ‘পাবজি গেমার’ ২৫ থেকে ৩০ হাজারে আইডি বিক্রি করে ওই টাকা জমিয়ে মফস্‌সলে ‘সাইবার ক্যাফে’ বা গ্রামীণ এলাকায় ‘অনলাইন সার্ভিস সেন্টার’ খুলেছিলেন। সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রচুর মানুষের নানাবিধ কাজ অনলাইনে করে দেওয়ার ফলে তাঁদের আধার এবং ব্যাঙ্কের তথ্য এঁদের নাগালে চলে আসে। ব্যক্তিগত সব নথি জালিয়াতদের সরবরাহ করে মোটা টাকা আয় করেছেন ওই ক্যাফে মালিকেরা। এ ভাবেই ভিন্‌রাজ্যের জালিয়াতদের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয় এঁদের। ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা তুলতে আসা গ্রাহকদের বায়োমেট্রিক ক্লোনিং করে টাকা সরানোয় হাত পাকান এঁরা। সেখান থেকেই ‘বড় অপারেশন’-এ হাত দেন এই ‘সাইবার বিশেষজ্ঞেরা’।

কৃষ্ণনগর পুলিশ জেলার সাইবার থানার প্রাক্তন এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, ২০২৩ সালে নদিয়ার দু’টি কলেজে ‘ঐক্যশ্রী’ প্রকল্পের কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তদন্তে উঠে আসে, মূলচক্রীদের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কলেজের আশপাশে গজিয়ে ওঠা কয়েকটি সাইবার ক্যাফের মালিক। অভিযুক্তদের বয়স ২০ থেকে ২৪ বছরের মধ্যে। কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর ওই কাণ্ডে মুর্শিদাবাদের তিন যুবক গ্রেফতার হয়েছিলেন। পরে তাঁরা জামিনও পান। ঐক্যশ্রী-কাণ্ডে উঠে এসেছিল রাজস্থান গ্যাং-এর যোগ। জানা যাচ্ছে, ‘ঐক্যশ্রী’র টাকা হাতাতে ‘সফল হ্যাকারদের’ চিহ্নিত করেছিল দুঁদে অপরাধীরা। ‘সম্ভাবনা’ দেখে তাঁদের প্রশিক্ষণ দিয়ে বড় বড় সাইবার জালিয়াতির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। কিন্তু প্রশিক্ষিত ওই হ্যাকাররা প্রথম অপারেশনে ব্যর্থ হয়েছিলেন। তার পরে মহিলাদের প্রকল্প ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর টাকা হাতানোর পরিকল্পনা করেন অভিযুক্তেরা। কিন্তু ‘সাইবার সিকিউরিটি’ ভাঙতে ব্যর্থ হন। ‘লক্ষ্মীর ভান্ডার’-এর পর ওই হ্যাকারদের কাছে ‘বড় অ্যাসাইনমেন্ট’ ছিল ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পে ট্যাবের টাকা।

পুলিশের আরও একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজ্য সরকারের বড়সড় অর্থ হাতানোর ছক কষেছিলেন ওই সাইবার অপরাধীরা। উত্তর দিনাজপুর থেকে মুর্শিদাবাদের পাশাপাশি ট্যাব-কাণ্ডেও ভিন্‌রাজ্যের যোগসূত্র পাওয়া গিয়েছে। শুক্রবার রাত পর্যন্ত রাজ্য জুড়ে মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। বাকি অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। জানা যাচ্ছে, কম্পিউটারকে হাতিয়ার করে রাজ্য সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা হাতানোর তালে ছিলেন অভিযুক্তেরা। ‘তরুণের স্বপ্ন’ শুধু নয়, অপরাধীদের নজরে ছিল ‘কন্যাশ্রী’ও। তবে ওই প্রকল্পের সরকারি পোর্টালে তথ্য পরিবর্তন করতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়েন সাইবার হ্যাকাররা। তবে ব্যর্থ হলেও হাল ছাড়েননি। তাঁরা টার্গেট করেন ‘তরুণের স্বপ্ন’। এ ক্ষেত্রে বিহারের পূর্ণিয়া বা ঝাড়খণ্ডের জামতাড়ার যোগ মিলছে। পাড়ার কিছু সাইবার ক্যাফের মালিকের কাছ থেকে বিভিন্ন স্কুলের লগ ইন আইডি এবং পাসওয়ার্ড পেয়ে যাওয়ায় সাইবার জালিয়াতির কাজটা আরও সহজ হয়ে গিয়েছিল। কিছু ক্যাফে মালিককে হাত করা হয়। কোনও কোনও ক্ষেত্রে তাঁদের সঙ্গ দেন বেশ কয়েকটি স্কুলের কম্পিউটারের শিক্ষক। প্রচুর সিম কার্ড, ভুয়ো ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নম্বর, বিভিন্ন রাজ্যের রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের অ্যাকাউন্ট নম্বর, বিদেশের আইপি অ্যাড্রেস ইত্যাদি জোগাড় করে অপারেশন চালানো হয়। কিছু ক্ষেত্রে অ্যাকাউন্ট নম্বর একই রেখে বদলে দেওয়া হয় আইএফএসসি কোড। এ ভাবেই রাজ্য জুড়ে সাইবার জলিয়াতেরা হাতিয়ে নেন প্রায় আড়াই কোটি টাকা! সন্দেহভাজনদের গ্রেফতারের পর উঠে আসছে নতুন নতুন তথ্য।

আপাতত ‘পাবজি খেলোয়াড়’ থেকে সাইবার জগতের ‘কুখ্যাত’ হয়ে ওঠা ‘তরুণ সাইবার বিশেষজ্ঞ’দের খোঁজে রয়েছেন তদন্তকারীরা।

WB Tab Scam Taruner Swapna Scheme Cyber Crime Crime News West Bengal Police

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।