গ্রাফিক: আনন্দবাজার অনলাইন।
পশ্চিমবঙ্গের একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের ট্যাব কেনার টাকা ‘বেহাত’ হওয়ার ঘটনায় কি আন্তঃরাজ্য চক্রের যোগ রয়েছে? তদন্তে উঠে আসছে এমনই তথ্য। ধৃতদের জেরা করে এবং তাঁদের থেকে প্রাপ্ত নথি খতিয়ে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, আন্তঃরাজ্য অসাধু চক্র এই কাজের সঙ্গে জড়িয়ে থাকতে পারে। শুক্রবার ভবানী ভবন থেকে এমনই জানালেন এডিজি (দক্ষিণবঙ্গ) সুপ্রতিম সরকার। শুধু বাংলায় নয়, দেশের আরও তিন রাজ্যেও এই চক্র কাজ করেছে বলে অনুমান তদন্তকারীদের। সেই সব রাজ্যের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করেছে এই চক্র।
ট্যাব কেলেঙ্কারিতে ধৃতদের জেরা করে নানান তথ্য মিলেছে। পাশাপাশি, তাঁদের থেকে পাওয়া বিভিন্ন নথি খতিয়ে দেখা হয়েছে। সুপ্রতিম জানান, আন্তঃরাজ্য অসাধু চক্রের নেপথ্যে কাজ করার ইঙ্গিত মিলেছে। জেরায় ধৃতেরা স্বীকার করেছেন যে, তাঁরা মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং ঝাড়খণ্ডের বিভিন্ন জনকল্যাণমূলক প্রকল্পের টাকাও সাইবার প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করেছেন। প্রাথমিক ভাবে এই তিন রাজ্যের কথা জানা গিয়েছে। তবে দেশের আর অন্য কোনও রাজ্যেও সরকারি প্রকল্পের টাকা এ ভাবে আত্মসাৎ হয়েছে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আপাতত, ‘জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন মনিটরিং টিম’ মহারাষ্ট্র, রাজস্থান এবং ঝাড়খণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করছে। সেখান থেকে পাওয়া তথ্য তদন্তে কাজে লাগতে পারে বলে মনে করছেন তদন্তকারীরা।
একাদশ এবং দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়াদের পড়াশোনার সুবিধার্থে পশ্চিমবঙ্গ সরকার ‘তরুণের স্বপ্ন’ প্রকল্পের অধীনে এককালীন ১০ হাজার করে টাকা দেয়। আবেদনকারীদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি সেই টাকা ঢুকে যায়। অভিযোগ, রাজ্যের অনেক পড়ুয়ার অ্যাকাউন্টে সেই টাকা ঢুকছে না। শুধু তা-ই নয়, এক জনের জন্য বরাদ্দ টাকা অন্যের অ্যাকাউন্টে চলে যাওয়ার অভিযোগও মিলেছে। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে ইতিমধ্যেই ১১ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
সুপ্রতিম জানিয়েছেন, ট্যাব-কাণ্ডের তদন্তে নজরদারি চালাবে ‘জয়েন্ট ইনভেস্টিগেশন মনিটরিং টিম’। সেই দলে রয়েছেন এডিজি সিআইডি, এডিজি সাইবার, ডিআইজি সাইবার, ডিআইজি সিআইডি (অপারেশন)। এ ছাড়াও স্থানীয় পুলিশ সুপার এবং কমিশনারকেও রাখা হয়েছে নজরদারি দলে। সুপ্রতিম বলেন, ‘‘১৬ লক্ষ পড়ুয়াকে ট্যাব কেনার জন্য টাকা দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। বিভিন্ন জায়গায় দায়ের হওয়া এফআইআর এবং শিক্ষা দফতরের থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে জানা গিয়েছে, এক হাজার ৯১১ জন পড়ুয়ার টাকা ঢোকেনি। যারা প্রতারিত হয়েছে তারা টাকা পেয়ে যাবে।’’
ট্যাব-কাণ্ডে বৃহস্পতিবার তিন জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে দু’জন মালদহের বৈষ্ণবনগর এবং এক জন উত্তর দিনাজপুরের চোপড়ার বাসিন্দা। সাইবার প্রতারণা মামলায় আগেও এই তিন জনের যোগের প্রমাণ মিলেছে বলে জানান সুপ্রতিম। তিনি আরও জানান, ন্যাশনাল পোর্টালের টাকাও সাইবার প্রতারণার মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হয়েছে। নিচুতলায় কারও যোগাযোগ রয়েছে কি না, তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এখনও পর্যন্ত রাজ্যের অন্তত ১৫টি জেলা জড়িয়েছে ট্যাব কেলেঙ্কারিতে। পড়ুয়াদের জন্য রাজ্যের বরাদ্দ লক্ষ লক্ষ টাকা পৌঁছে গিয়েছে সাইবার অপরাধীদের হাতে। সেই তালিকায় আছে কলকাতাও। ইতিমধ্যেই কলকাতা এবং মালদহ পুলিশ বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে ট্যাব-কাণ্ডের তদন্ত শুরু করেছে। তদন্তে নেমে কলকাতা পুলিশের প্রাথমিক অনুমান, ট্যাব জালিয়াতিচক্রের আঁতুড়ঘর উত্তর দিনাজপুরের চোপড়া এবং তার আশপাশের এলাকা। শুধু তা-ই নয়, গোটা চক্রের মাথা এক জন বলেই আপাতত মনে করছেন লালবাজারের তদন্তকারীরা। কিন্তু সেই মাথা কোথাকার বাসিন্দা বা কোথা থেকে এবং কী ভাবে চক্র চালাচ্ছেন, তার প্রমাণ মেলেনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy