নিছক অর্থকরী ফসল নয়, পাটের পিছনে লুকিয়ে আছে অনেক অনর্থও।
সীমান্তের মানুষ তা জানেন। আর তাই লকলক করে পাটের চারা আকাশমুখো হলেই আবাদি মানুষের খুশির সঙ্গে কপালে কিঞ্চিৎ অখুশির মেঘও জমে।
পাটের আড়ালেই সীমান্তে নিঃসাড়ে তৈরি হয় পাচারের পথ। সীমানা ভেঙে চোরাই মাল পড়শি বাংলাদেশে পৌঁছে যায় এই পাটের ছায়ায়। সেই তালিকায়, গবাদি পশু থেকে ওষুধ, নুন থেকে মাদক— সবই জায়গা করে নেয়।
সীমান্তরক্ষীদের সঙ্গে স্থানীয় পুলিশের দাবি, দুষ্কৃতীদের নিরন্তর চলাচলে পাট বড় সহায়। পাটের মরসুমে দুষ্কৃতীরা সবথেকে স্বস্তি বোধ করে। বড় নিরাপদ হয়ে ওঠে তাদের চলাচল। পাটের আশ্রয়ে বোমা তৈরি থেকে অস্ত্র মজুত, পুলিশের চোখে ফাঁকি দেওয়ার কাজটিও বড় অনায়াসে করা যায়।
সাম্প্রতিক থেকে হারানো অতীত— পাটের খেতকে দুষ্কৃতীদের ব্যবহার করার ঘটনা নতুন নয়। মাসখানেক আগে ডোমকলের কুচিয়ামোড়া গ্রামে তিন জন খুনের পর সে প্রশ্ন ফের উঠেছে। পুলিশের অনুমান, ওই খুনের মূল অভিযুক্তেরা সীমান্তের বিস্তীর্ণ পাট খেতেই কোথাও আশ্রয় নিয়েছে। মাসখানেক কেটে গেলেও তাদের কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ। সেই ডেরায় পা দেওয়া সহজ কথা নয়। সেখানে পাটের ছায়ায় তাদের কার্যকলাপ, গতিবিধির উপরে নজর রাখাও প্রায় অসম্ভব।
এক দিকে চাষিদের অর্থকরী ফসল, অন্য দিকে অপরাধীদের নিরাপদ আশ্রয়। এই শাঁখের করাতে থমকে গিয়েছে পুলিশের অনুসন্ধান। ফলে সব জেনে বুঝেও পুলিশকে মাথা চুলকে ফিরতে হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন জেলা পুলিশের এক কর্তা।
পুলিশের ওই কর্তা বলছেন, ‘‘পাট খেতের মধ্যে যে অভিযুক্তরা লুকিয়ে আছে তা আমাদের কাছে খুব স্পষ্ট, কিন্তু সব জেনেও এই মুহূর্তে কিছু করার নেই আমাদের।’’
বুধবার ডোমকলের মোমিনপুর এলাকার বছর পঞ্চাশের হিটলার মণ্ডল পাট খেতের মধ্যে বসে বোমা বাঁধছিল। ঘটনার সময় বিস্ফোরণ হয়ে মৃত্যু হয়েছে তার, জখম হয়েছে আরও কয়েক জন, কিন্তু তাদের খোঁজ পায়নি পুলিশ।
তা হলে কি পাটের মরসুম শেষ না হলে দুষ্কৃতীদের ছায়া-স্বর্গ হিসেবেই থেকে যাবে পাট খেত! পুলিশের দাবি, দুষ্কৃতীদের চাপে কিংবা টাকার টোপের কাছে মাথা নুইয়ে অনেক সময়ে মরসুম শেষ হলেও পাট কাটেন না চাষিরা। এ অভিজ্ঞতা রয়েছে মুর্শিদাবাদের বিএসএফেরও। এক বিএসএফ কর্তা বলছেন, ‘‘সীমান্ত জুড়ে পাট চাষ করতে চাষিদের নিষেধ করলেও দুষ্কৃতী এবং পাচারকারীদের চাপে ওঁরা পাট চাষ থেকে সরতে পারছেন না। এ এক বড় সমস্যা।’’ তা হলে উপায়, পাটের ছায়ায় কি ড্রোনের চোখে ধরা পড়বে কিছু? সময়ই সে কথা বলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy