Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
বোমা বাঁধার ওস্তাদদের চেনেন এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের চোখে সমীহ দেখে অনেক যুবক বাহাদুরির লোভে এই পেশায় চলে গিয়েছিল। সেই ওস্তাদদের কারও হাত উড়েছে, কারও চোখ। ভেঙেছে সংসার।
Domkal

Domkal: আগ্নেয়াস্ত্র শস্তা, বোমারও কদর কম

মাঝখানে এই কারবারে কিছুটা ভাটা পড়লেও বর্তমানে পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই আবার বাজার চাঙা হচ্ছে শিল্পের, দাবি করছেন এলাকার মানুষ।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০২২ ০৭:২৯
Share: Save:

বোমা তৈরি এক সময় ডোমকলের গ্রামে গ্রামে শিল্পের পর্যায়ে পৌঁছেছিল। আর সেই সুবাদে এলাকায় ‘ওস্তাদ’ বলেই পরিচিতি ছিল অনেকের। কেবল নিজেদের প্রয়োজনে নয়, এমন ওস্তাদেরা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গিয়েও বোমা বেঁধে দিয়ে আসত মোটা টাকার বিনিময়ে। তবে এমন দক্ষ ওস্তাদ ওরফে কারিগরেরাও যে জখম হয়নি এমনটা নয়। ডোমকলের রায়পুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার এমন দু’জন ওস্তাদের কারও চোখ উড়ে গিয়েছে, কারও আবার উড়ে গিয়েছে হাত। কিন্তু তারপরেও থেমে নেই এই শিল্প। ওস্তাদদের হাত ধরেই তৈরি হয়েছে নতুন কারিগর।

তবে মাঝখানে এই কারবারে কিছুটা ভাটা পড়লেও বর্তমানে গ্রাম পঞ্চায়েত নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই আবারও বাজার চাঙা হচ্ছে শিল্পের, এমনটাই দাবি করছেন এলাকার মানুষ।

‘ওস্তাদদের’ ভালই চেনেন এলাকার মানুষ। এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, সেই ওস্তাদেরা বছর কয়েক প্রায় চুপচাপ ছিল। কিছু দিন থেকেই তাদের দৌড়ঝাঁপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ওদের চলন বলন, দেখেই বোঝা যাচ্ছে তারা আবার নতুন করে কাজের সন্ধান পেয়েছে। বেশ কিছু দিন ঝিমিয়ে থাকার পরে আবার নতুন করে জেগে উঠেছে কারবার। আমদানি হচ্ছে বোমার মসলা থেকে অন্য সরঞ্জামের।

এলাকার এক সময়ের দক্ষ এক ওস্তাদ বলছে, ‘‘বয়স কম থাকার সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেক বোমা বেঁধেছি। একটা সময় এটাই নেশা এবং পেশা হয়ে দাঁড়িয়েছিল আমার। রাতের অন্ধকারে দূরের গ্রাম থেকে লোকজন এসে মোটর বাইকে করে তুলে নিয়ে যেত। ভাল খাওয়া দাওয়া ছাড়াও মোটা টাকাও জুটত কাজ করে। ফলে ভেবেছিলাম এই কাজটাকেই পেশা করে নেব। কিন্তু এক দিন বোমা বাধার সময় তা ফেটে জখম হলাম। এক পরিত্যাক্ত বাড়িতে প্রায় ১৫ দিন থাকতে হয়েছিল হাতুড়ে ডাক্তারের অধীনে। সে যে কী কষ্টের সেটা কেবল উপরওয়ালা আর আমি জানি।’’

কেউ কেউ এমন ঘটনা থেকে শিক্ষা নেয়। কেউ আবার জখম হওয়ার পারেও ওই কাজে পা বাড়ায়। অনেকেই বলছেন, অনেক সময় রাজনৈতিক দাদাদের ইন্ধনে বা অর্থের প্রলোভনে পড়ে ওই কাজে পা বাড়াই। ডোমকলের এমন এক দক্ষ ওস্তাদ বলছেন, ‘‘একটা সময় ওই কাজটা করে নিজেকে বড় বাহাদুর ভাবতাম। খুব বেশি টাকাপয়সা পেতাম তেমনটা নয়, কিন্তু বেশ খাতির যত্ন এবং ভাল খাওয়া দাওয়া জুটত ওই কাজ করতে গেলে। শেষের দিকে বেশ কয়েক জনকে শিখিয়ে দিয়েছিলাম হাতের কাজটা। কিন্তু এক দিন কাজ করতে গিয়ে চোখ উড়ে গেল। তার পরে বুঝলাম জীবনের মানে। ততদিনে সব শেষ হয়ে গিয়েছে আমার। সংসারটাও ভেসে গিয়েছে।’’

তবে আগের তুলনায় বোমার কদর কমেছে বাজারে। ওস্তাদদের দাবি, ‘‘বর্তমানে খুব কম দামে নানা ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র পাওয়া যাচ্ছে বাজারে, ফলে বোমার কদর অনেকটাই কমেছে। বোমা বাঁধার ক্ষেত্রে বড় ঝুঁকি থাকায় ওই কাজ আর তেমন কেউ করতেও চাইছে না।’’ জেলা পুলিশের এক কর্তা বলছেন, ‘‘আগের থেকে বোমা বাঁধার প্রবণতা অনেকটাই কমেছে। আমাদের অভিযানও চলছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Domkal Bombing
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy