বোমা বাঁধা কখনও একা একা শেখা যায় না। কাউকে না কাউকে হাতে ধরে শিখিয়ে দিতে হয়। নানা খুঁটিনাটি রয়েছে, একটু এ দিক সে দিক হলেই উড়ে যেতে পারে হাত, পা এমনকি মাথা। তাই নতুন যারা শিখছে, তাদের ‘শিক্ষক’ ডোমকলেই বেশ কয়েক জন রয়েছে বলেই পুলিশ মনে করছে।
শুধু বোমা বাঁধা শিখলেই কিন্তু হয় না। তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকে আরও অনেক স্তর। যেমন, খুব গোপনে আনতে হয় বোমার মশলা। তার পরে বোমা পুঁতে রাখতে গেলে তা আচমকা ফেটে যেতে পারে। তাতে জখম হলে তাদের লুকিয়ে কোথাও নিয়ে যেতে হবে। তখন তাদের নিয়ে যেতে গেলে লাগবে কোনও যান বাহন। তার ব্যবস্থা থাকা চাই। বিশ্বস্ত চালক ছাড়া তা সম্ভব নয়। তাই সে ক্ষেত্রেও দরকার পুরনো পরম্পরার উপরে ভরসা রাখা। নতুন লোককে নিলে কথা ফাঁস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
গোপনে নিয়ে যাওয়ার পরে, চিকিৎসার ক্ষেত্রেও সেই একই কথা। বিশ্বস্ততা এখানে সব থেকে বড় কথা। বিশ্বস্ততা আদায় করার জন্য রাজনৈতিক প্রভাব থেকে শুরু করে ভয় দেখানোর দস্তুর রয়েছে। ডোমকল এমন অনেক ঘটনার সাক্ষী। এমনকি দিন কয়েক আগে মেহেদি পাড়া এলাকায় বোমা বিস্ফোরণ কাণ্ডে জখম দু’জন এখনও বেপাত্তা।
ডোমকলের বাসিন্দা এক গ্রামীণ চিকিৎসক বলছেন, ‘‘আমরা যারা গ্রামীণ এলাকায় প্রাথমিক চিকিৎসা করি তাদের উপরে অনেক সময় প্রভাব খাটিয়ে জখমদের চিকিৎসা করিয়ে নেওয়া হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের কিছুই করার থাকে না।’’
নওদা এলাকার এক গ্রামীণ চিকিৎসকের দাবি, ‘‘বছর কয়েক আগে পাটের জমিতে বোমা বাঁধতে গিয়ে ডোমকলের একটি মাঠে জখম হয়েছিল বেশ কয়েক জন। আমার কাছে দু’জনকে নিয়ে আসা হয়েছিল। বাধ্য করা হয়েছিল তাদের চিকিৎসা করতে। যাবতীয় পরিকাঠামো বাড়িতে তৈরি করেই প্রায় সাত দিন চিকিৎসা চলেছিল তাদের এবং শেষে যাওয়ার সময় হুমকিও দেওয়া হয়েছিল, যদি কেউ ঘটনার সম্পর্কে জানতে পারে তা হলে পরিণতি খারাপ হবে।’’
আর এক গ্রামীণ চিকিৎসক বলছেন, ‘‘আমার সামনে যাঁকে আনা হল, দেখি সংজ্ঞাহীন সেই ব্যক্তি একটি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান। বোমা ফেটে গুরুতর আহত। আমার যতটা সাধ্য চিকিৎসা করছিলাম। কিন্তু হাসপাতালের পরিকাঠামো আমার কাছে কোথায়?’’ সেই পরিকাঠামোও না কি জোগাড় করে দেওয়া হয়।
একের পর এক গুলি ও বোমাকাণ্ডের পরে সাধারণ মানুষ প্রশ্ন তুলছেন রাজনৈতিক নেতাদের দিকেই। তাঁদের দাবি, রোদে বৃষ্টিতে যারা মিছিল মিটিংয়ে হাজির হয়ে যায় সেই কর্মীরা নেতাদের কথা শুনবেন না, এটা হতে পারে না। তাঁদের বক্তব্য, নেতাদের সদিচ্ছা থাকলে কখনওই এমন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটবে না।
তৃণমূলের ডোমকলের বিধায়ক জাফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘সত্যিই এক সময় ডোমকলে সকলের নজর লুকিয়ে দুষ্কৃতীদের সমান্তরাল রাজত্ব চলত। সেখানে সব কিছুই করা যেত। আহতকে রক্তও দেওয়া হত। ছোটখাট অস্ত্রোপচারও করা হত। কিন্তু এখন সব বিলকুল বন্ধ। পুলিশ গভীরে নেমে সব কোণে কড়া নজর রাখছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy