জঙ্গিপুরে উন্নয়ন।
গত পাঁচ বছরে জঙ্গিপুর বিধানসভা এলাকায় উন্নয়নে ৪০০ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে এমনটাই দাবি রাজ্যের শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের। এলাকার তৃণমূল বিধায়কের এই দাবি শুনে বিরোধীরা তো বটেই, কিছুটা চমকে উঠেছেন এলাকার সাধারণ মানুষও।
কংগ্রেস নেতা হাসানুজ্জামান বাপ্পা বলছেন, “তার মানে বছরে ৮০ কোটি টাকার উন্নয়ন? ভোট তো আসছে, শ্বেতপত্র প্রকাশ করে মানুষকে জানান কোথায় কত টাকা খরচ করেছেন তিনি। হিসেবটা দেখি।” আর সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সোমনাথ সিংহরায় বলছেন, “উন্নয়নের এই ফিরিস্তিতে ঘোড়াতেও হাসবে। একটা চোখে পড়ার মত কাজ দেখাতে বলুন তো ? তবে বিড়ি মালিক হিসেবে জাকির হোসেন বিভিন্ন সময়ে প্রচুর বস্ত্র দান করেন। সেগুলিকেও উন্নয়ন হিসেবে ধরা হলে অন্য কথা।”
জঙ্গিপুর পুরসভা ও রঘুনাথগঞ্জ ১ ও সুতি ১ ব্লকের ৮টি পঞ্চায়েত নিয়ে জঙ্গিপুর বিধানসভা। সুতির অরঙ্গাবাদ থেকে এসে জঙ্গিপুরে জীবনে প্রথম নির্বাচনে লড়েছেন পেশায় বিড়ি মালিক জাকির হোসেন ২০১৬ সালে। প্রথম ভোটে জিতেই মন্ত্রী। এখানেই প্রশ্ন উঠছে গত ৫ বছরে জঙ্গিপুরের জন্য জাকিরের উন্নয়ন কোথায়?
এক প্রবীণ তৃণমূল নেতার কথায়, “বর্তমান রাজ্য সরকারের আমলে জঙ্গিপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল পেয়েছে, আইটিআই কলেজ পেয়েছে, জঙ্গিপুর পুলিশ জেলা পেয়েছে,হয়েছে কিষান মান্ডিও। কিন্তু সবই তৈরি হয়েছে ২০১৬ সালের আগে জাকির যখন রাজনীতিতে আসেননি। তৃণমূলের রাজ্য সরকার তার কৃতিত্ব দাবি করতেই পারেন, জাকির হোসেন সেই সরকারের মন্ত্রী হয়ে গর্বিত হতে পারেন, কিন্তু এসব নিয়ে নিজের কৃতিত্ব দাবি করতে পারেন না।”
মন্ত্রী জাকির হোসেনের অবশ্য দাবি, “রাস্তাঘাট নির্মাণ, সেতু তৈরি, ভাঙন রোধ সব মিলিয়ে ৪০০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে জঙ্গিপুর বিধানসভা এলাকায়, যা এতদিন কখনও হয়নি। যে এলাকায় মানুষ যা দাবি করেছে তাই মেটানো হয়েছে। জরুরের মত গ্রাম পঞ্চায়েতে উন্নয়নে ৩৫ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। কয়েক হাজার আবাসন তৈরি হচ্ছে।”
জেলার তৃণমূল মুখপাত্র গৌতম ঘোষ বলছেন, “বিভিন্ন স্কুল, মাদ্রাসার জন্য প্রচুর ঘর দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের উন্নয়নে প্রচুর টাকা দেওয়া হয়েছে। পুলিশ জেলা তো গড়ে উঠেছে জাকিরদার দাবি মেনেই। তিনি থাকলে জঙ্গিপুর জেলাও হবে।”
মন্ত্রীর এই দাবিকে অবশ্য জঙ্গিপুরের লোকজনের সঙ্গে উপহাস বলে বর্ণনা করেছেন সিপিএম নেতা সোমনাথ সিংহরায়। তাঁর কথায়, “৪০০ কোটি টাকার কাজ হয়ে থাকলে তার বিবরণটা প্রকাশ করুন তিনি। কাগজে বিজ্ঞাপন দিন। মানুষ দেখুক।”
কংগ্রেস নেতা হাসানুজ্জামান বাপ্পা বলেন,“ উন্নয়ন কি আকাশে হয়েছে ? ৫ বছর সময়টা তো কম নয়? নিজের কেন্দ্রে একটি দমকল কেন্দ্র পর্যন্ত গড়তে পারেন নি তিনি। বরং কংগ্রেস গড়েছে আলিগড়, এমডিআই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মিঞাপুরের উড়ালপুল।”
বিজেপির জেলা সভাপতি সুজিত দাসের কথা, “ ঘুরে আসুন বংশবাটী মোড় থেকে পারাইপুরের রাস্তা। দেখবেন উন্নয়নের বহর। গত ৫ বছরে জঙ্গিপুর পুরসভাকে কানাকড়িও দেন নি তিনি উন্নয়ন খাতে। আজ ভোটের মুখে ৪০০কোটির হিসেব দিচ্ছেন?”
জঙ্গিপুরের পুরপ্রশাসক মোজাহারুল ইসলাম বলছেন, “জঙ্গিপুর পুরসভা আম্রুত ও নমামী গঙ্গে প্রকল্পে প্রায় ২০০ কোটি টাকা পেয়েছে উন্নয়নে। কাজটা তারাই করছেন। রাজ্য সরকার এর অর্ধেক টাকা দিয়েছেন। বিধায়ক টাকা না দিলেও আমাদের রাজ্য সরকার তো দিয়েছে?”
গণকরের বাসিন্দা দুলালী চিত্রকর বলছেন, “৪০০ কোটির মধ্যে আমার গণকরের রাস্তাটি কিন্তু নেই। মন্ত্রীকে বলেও মাটির রাস্তায় না পড়েছে মোরাম, না পড়েছে ইট।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy