দুর্ঘটনার পরদিন বাড়ির সামনে বসে রয়েছেন সজনী। ফাইল চিত্র
দিনটা এখনও ভোলেননি তিনি। ভোরের আলো তখন সবে একটু একটু করে ফুটছে। এমন সময় পাশের গ্রামের এক যুবকের ফোনে কান্নার রোল উঠেছিল তাঁদের বাড়িতে। সেই আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় সজনী টুডুর। সে দিনের সেই ফোনে স্বামী-সন্তান নিয়ে সুখে ঘরকন্যার স্বপ্ন খানখান হয়ে গিয়েছিল মধ্য কুড়ির তরুণীর।
গত বছর ২ জুন ওড়িশার বাহানাগা বাজার স্টেশনে করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছিলেন ২৯৩ জন। তাঁদের মধ্যে সজনীর স্বামী মুন্সিও ছিলেন। সাগরদিঘির পাটকেলডাঙা অঞ্চলের মাদারগাছি গ্রামের বাড়ি থেকে ২ তারিখ সকাল সকাল বেরিয়ে পড়েছিলেন মুন্সি। আশপাশের গ্রামের মোট ছ’জন মিলে যাচ্ছিলেন বিশাখাপত্তনমে কাজের খোঁজে। স্বামীকে খাইয়ে-দাইয়ে বাড়ি থেকে রওনা করিয়ে দিয়েছিলেন সজনী। পরের দিন ভোরে এসেছিল সেই ফোন। তাঁর জীবনটা অন্য খাতে এনে ফেলে দিয়েছিল দুর্ঘটনার দিনটা।
গত এক বছরে সজনীর জীবন অনেক বদলে গিয়েছে। অক্ষরজ্ঞান না থাকা গ্রামীণ এক তরুণী এখন সিভিক ভলান্টিয়ারের দায়িত্ব সামলান। রবিবার সজনী ফোনে বললেন, ‘‘৯ এবং ৭ বছরের মেয়ে ও ছেলেকে নিয়ে সেদিন চোখে অন্ধকার দেখেছিলাম। কী করে ওদের বড় করব, কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। রাজ্য সরকার ও রেল মন্ত্রকের কাছ থেকে আট লক্ষ ক্ষতিপূরণের টাকা পাই। মুখ্যমন্ত্রী সেই সময় সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। দুর্ঘটনার কয়েক মাস পরে সেই চাকরিও পাই। তাতে সংসারটা বেঁচে গিয়েছে। কিন্তু প্রিয় মানুষটা চলে যাওয়ার দুঃখ আজও রয়ে গিয়েছে। এখনও চোখ বুজলে ওঁকে
দেখতে পাই।’’সাগরদিঘির নিমগাছিয়ার শিলবানুস টুডুও ওই ট্রেনে ছিলেন। মুন্সির সঙ্গে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল তাঁরও। রাজ্য সরকারের দেওয়া সিভিক ভলান্টিয়ারের চাকরি পেয়েছেন শিলবানুসের ২২ বছরের ছেলে সুশান্ত। নবগ্রামের পলসন্ডায় থাকেন শিলবানুসের বড় মেয়ে অঞ্জলি মুর্মু ও জামাই চন্দন। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘ট্রেন দুর্ঘটনার খবর পেয়ে পরদিন সকালে বাবাকে ফোন করি। কিন্তু ফোন বন্ধ ছিল। তখনই আমার মনটা কেমন করতে শুরু করেছিল। তারপর সারাদিন ধরে ফোন করে গিয়েছি। সাড়া মেলেনি। বাবার কোনও খোঁজও পাইনি।’’ বাবার খোঁজ করতে মুন্সির দাদা সাগরের সঙ্গে স্বামীকে ওড়িশা পাঠান অঞ্জলি। ভুবনেশ্বরের হাসপাতালের মর্গে তাঁরা শিলবানুসের দেহ খুঁজে পান।
ওই এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য, তৃণমূলের ভারতী হাঁসদা এ দিন বললেন, ‘‘জনজাতি সম্প্রদায়ের অনেকে কাজের জন্য ভিন রাজ্যে যান। এমন দুর্ঘটনায় তারা আগে কেউ পড়েনি। সরকার আর্থিক ক্ষতিপূরণ এবং চাকরি দেওয়ায় দু’টি পরিবারই বেঁচে গিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy