Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

সব আমলেই অন্যায় দেখলে সরব সাহেবনগর

গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই পেশা চাষবাস, কেউ বা গঞ্জে ব্যবসা করেন।

 অপেক্ষায়: গুলিতে আহত হয়েছেন আলাউদ্দিন। চিকিৎসা চলছে বহরমপুরে। বাড়িতে তাঁর কিশোর পুত্র। নিজস্ব চিত্র।

অপেক্ষায়: গুলিতে আহত হয়েছেন আলাউদ্দিন। চিকিৎসা চলছে বহরমপুরে। বাড়িতে তাঁর কিশোর পুত্র। নিজস্ব চিত্র।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস  
জলঙ্গি শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০১:৪০
Share: Save:

স্বাধীনতার সময় থেকে একাত্তরের যুদ্ধ, অনেক ইতিহাসের সাক্ষী সাহেবনগর আবার যেন ইতিহাস লিখতে চলেছে এক নতুন আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে। বুধবার গুলি কাণ্ডের পর থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন থামছে না সীমান্তের এই জনপদে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, কেবল ইংরেজ আমলে নয়, যে সময়ে অন্যায় লাগামছাড়া হয়েছে সেই সময়ে সাহেবনগর গর্জে উঠেছে। গোটা রাজ্য জুড়ে বামেদের দাপটে জেলায় কংগ্রেস নেতা কর্মীদের লুকোবার জায়গা যখন ছিল না, সেই সময় সাহেবনগর মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল রাজনৈতিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে।

গ্রামের অধিকাংশ মানুষেরই পেশা চাষবাস, কেউ বা গঞ্জে ব্যবসা করেন। আর পাঁচটা গ্রামের তুলনায় শিক্ষায় এগিয়ে সাহেবনগর। ফলে বরাবরই অন্যায়ের প্রতিবাদে সামনে এসেছে তাদের নাম। মাস দেড়েক আগে জাতীয় নাগরিকপঞ্জি ও নয়া নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে মুখর হয়েছিল সীমান্তের এই ছোট্ট গঞ্জ। কিন্তু প্রথম থেকেই বাধা হয়েছিল বিভিন্ন রাজনৈতিক দল। কংগ্রেসের নেতারা সামনে এলে সিপিএম আসছিল না, আর সিপিএম কংগ্রেসকে দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিল। এমনকি তৃণমূলের একটা অংশও দাবি করেছিল অরাজনৈতিক কোনও সংগঠন তৈরি হলে তারা সেখানে শামিল হবে, নচেৎ নয়।

আর সকলকে মেলাতেই তৈরি হয়েছিল স্থানীয় নাগরিক মঞ্চ, কংগ্রেস সিপিএম এবং তৃণমূলের একাংশ যোগ দিয়েছিল মঞ্চে। ফলে মজবুত হচ্ছিল আন্দোলন, একদিকে যখন আন্দোলন মজবুত হচ্ছিল, তেমনই এই সংগঠনের উপরে ক্ষোভ বাড়ছিল শাসকদল এবং পুলিশের। কারণ উভয় পক্ষের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছিল নাগরিক মঞ্চের নামে এই সংগঠনটি। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ভারি হচ্ছিল মঞ্চ। ফলে তাদের উচিৎ শিক্ষা দিতেই একেবারে সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে বুধবার সকালে সাহেবনগর গঞ্জে হাজির হয়েছিল শাসকদলের ব্লক সভাপতি তহিরুদ্দিন মণ্ডল ও তার দলবল। আর সেই দিনই ঘটে যায় বড় বিপত্তি, তহিরুদ্দিন বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াই নাগরিক মঞ্চ, চলে মুড়ি-মুড়কির মতো গুলি ও বোমা। জখম হয় তিনজন, মৃত্যু হয় দুই নিরীহ মানুষের।

ঘটনার পর দিন থেকেই শুরু হয় আন্দোলন। রাজপথে মৃতদেহ রেখে আন্দোলনের সূচনা করে সাহেবনগর নাগরিক মঞ্চ। তারপরে এই কদিনে চলেছে বিভিন্ন গাড়ি-ঘোড়া থেকে দেয়ালে পোস্টার লাগিয়ে প্রচার, হয়েছে মিছিল। এমনকি এলাকার মহিলারাও পথে নেমেছে ওই ঘটনায় অভিযুক্ত তহিরুদ্দিন-সহ তার ডান হাত মিল্টনকে গ্রেফতারের দাবি তোলে। ঘটনার পর একটু একটু করে স্বাভাবিক হলেও আন্দোলন থেকে সরতে রাজি নয় সাহেবনগর। তাদের দাবি, যতক্ষণ পর্যন্ত অভিযুক্তরা গ্রেফতার হবে আন্দোলন চলবে। ৭০ বছরের বৃদ্ধা রওশনারা বেওয়া বলছেন, ‘‘এর আগে কখনও ঘর থেকে বের হইনি, কিন্তু যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে সাহেবনগরে তাতে আর পারলাম না ঘরে থাকতে। পুলিশ যদি এখনও আড়াল করতে চায় তাহিরকে তাহলে মস্ত বড় ভুল করবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Violence Sahebnagar TMC CPM
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE