Advertisement
১৮ জানুয়ারি ২০২৫
Sugar

সীমান্ত পার হলেই লাভ দ্বিগুণ, চোরা পথে কুইন্টাল কুইন্টাল চিনি যাচ্ছে বাংলাদেশ! আকাল নদিয়ায়

জেলার বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে কেনা চিনি কাঁটাতার পেরোলেই বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। বিএসএফের নজর এড়িয়ে বস্তা দুয়েক পার করতে পারলেই মুনাফা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা।

boarder

—ফাইল চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৫৬
Share: Save:

গেদে থেকে করিমপুর, বানপুর কিংবা কৃষ্ণগঞ্জ— নদিয়ার সীমান্ত লাগোয়া বাজার গুলিতে হঠাৎ আকাল চিনির। চাহিদার তুলনায় জোগান কম। ইতিমধ্যে কালোবাজারের অভিযোগ তুলেছেন স্থানীয়েরা। ব্যাপারটা কী? জেলার প্রান্তিক জনপদগুলিতে চিনির অস্বাভাবিক চাহিদার কারণ নাকি ‘আন্তর্জাতিক’! পড়শি দেশ বাংলাদেশে চিনির মূল্য আকাশছোঁয়া হওয়ায় পাচারকারীদের ঝোঁক এখন চিনি পাচারে। তার ফলে কুইন্টাল কুইন্টাল চিনি পাচার হয়ে যাচ্ছে নদিয়া থেকে বাংলাদেশ।

জেলার বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি দরে কেনা চিনি কাঁটাতার পেরোলেই বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। বিএসএফের নজরদারি এড়িয়ে বস্তা দুয়েক পার করতে পারলেই মুনাফা তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা। স্বল্প সময়ে অধিক মুনাফার লোভে সীমান্তের চর এলাকা দিয়ে বাংলাদেশে চিনি পাচারের প্রবণতা বাড়ছে। হেরোইন, ইয়াবা, ব্রাউন সুগার, কাশির সিরাপ, পিপরোনালের মতো বহুমূল্য মাদককে এখন টেক্কা দিয়ে পাচারকারীদের নয়া বাজি ভারতীয় ‘মিষ্টি দানা’।

স্থানীয় সূত্রে খবর, সীমান্ত এলাকার ছোট বাজার এবং মফস্‌সলগুলিতে চিনির অস্বাভাবিক চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে। সাধারণ সময়ে ছোট দোকানগুলোতে মাসিক যা চাহিদা থাকে, গত কয়েক মাসের সেই চাহিদা তিন থেকে চার গুণ হয়েছে। কিলোগ্রামের বদলে কুইন্টালের হারে বিক্রি হচ্ছে চিনি। যার অন্যতম কারণ, বাংলাদেশে চিনির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি। ভারতীয় বাজারে বিক্রি হওয়া ৫০ কেজি বস্তার গড় মূল্য যেখানে ১,৭০০ থেকে ১,৮০০ টাকা, সীমান্ত পার করতে পারলেই সেই চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩,৮০০ টাকায়। পাচারকারীদের কাছ থেকে বাংলাদেশের পাইকারি ব্যবসায়ীরা চিনি কিনে নিচ্ছে ৬,০০০ থেকে ৬,৫০০ টাকায়। কয়েক হাত বদলে খুচরো বাজারে পৌঁছতে সেই চিনি হয়ে যাচ্ছে কেজি প্রতি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকা। তাই ভারত এবং বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এক শ্রেণির পাচারকারীরা অধিক লাভের আশায় চিনি চোরাচালানের দিকে ঝুঁকছেন।

বাংলাদেশ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে খবর, বাংলাদেশের খোলা বাজারে খুচরো চিনির দাম কেজি প্রতি ১২০ থেকে ১৩০ টাকা। বাংলাদেশে ফি বছর ২০ থেকে ২৫ লক্ষ মেট্রিক টন চিনির চাহিদা থাকে। সে দেশের চিনির মোট চাহিদার ৯৫ শতাংশই আমদানি নির্ভর। ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা এবং ভারতের মতো দেশ থেকে চিনির আমদানি করা হয় বাংলাদেশে। রফতানিকারক দেশের একাধিক নিষেধাজ্ঞার কারণে আমদানিতে টান পড়েছে। ফলে চিনির সঙ্কট তৈরি হয়েছে বাংলাদেশে। আর তাতেই পাচারকারীদের পোয়া বারো।

এ নিয়ে নদিয়া জেলা ব্যবসায়িক সংগঠনের প্রতিনিধি গোকুলচন্দ্র সাহা বলেন, ‘‘আমরা কোনও রকম বেআইনি মজুতদারি কিংবা চোরাচালানের পক্ষে নই। আবার ব্যবসায়ীদের নিয়ন্ত্রণে এমন কোনও পরিকাঠামো নেই, যা দিয়ে চোরাচালান আটকানো যায়।’’ বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সংগঠন ‘চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ়ের সহ-সভাপতি শঙ্কর সাহা বলেন, ‘‘ভারত থেকে চোরাপথে দেশে চিনি আসায় দেশের রাজস্ব মার খাচ্ছে। চিনি ব্যবসার ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আমরা চাই, নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে প্রথাগত ভাবে চিনি আমদানি হোক।’’

আর এই চোরাচালান নিয়ে দক্ষিণ বঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (বিএসএফ) বলছেন, ‘‘যে কোনও প্রকার চোরাচালান আটকাতে সীমান্তরক্ষী বাহিনী তৎপর। সীমান্তের সতর্কতা আরও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Sugar Trafficking Black Marketing India Bangladesh Border
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy