Advertisement
E-Paper

স্কুলপড়ুয়া ছেলের টিফিন বাক্সে মাদক ভরে দেন বাবা! সীমান্তের জেলায় পাচারের নতুন কৌশল

স্কুলে পড়া ছেলের টিফিন বাক্সে বাবা যে রুটি-সব্জির সঙ্গে জাল টাকাও ভরে দিচ্ছেন, ‘স্বাদ’ বদলাতে কোনও দিন হেরোইন দিয়ে দিচ্ছেন, তা ভাবতেও পারেননি নিরাপত্তারক্ষীরা। এ ভাবে পাচার চলছে সীমান্তে।

trafficking

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ

প্রণয় ঘোষ

শেষ আপডেট: ০৯ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৪:৩৫
Share
Save

কখনও ঘাসের বস্তা, কখনও সাইকেলের টিউবের আড়ালে মাদক পাচার হয় বাংলাদেশে। আসলে নিরাপত্তার কড়াকড়ি যত বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পাচারের বিবিধ ফন্দি। কোনওটা খাটে। কোনওটা খাটে না। কিন্তু পাচারকারীদের চেষ্টায় ছেদ নেই। আছে পরিকল্পনার পর পরিকল্পনা। আর পাচারের ওই নয়া পরিকল্পনায় যুক্ত করা হচ্ছে ‘বাপ-ছেলে’কে। বার বার এই পাচার কৌশল সফল হচ্ছে। তবে পর পর কয়েকটি ঘটনার পরম্পরা দেখে বিএসএফ নিশ্চিত, তাদের চোখকে আর ফাঁকি দেওয়া যাবে না।

আসলে স্কুলে পড়া ছেলের টিফিন বাক্সে বাবা যে রুটি-সব্জির সঙ্গে জাল টাকাও ভরে দিচ্ছেন, ‘স্বাদ’ বদলাতে কোনও দিন হেরোইন দিয়ে দিচ্ছেন, তা ভাবতেও পারেননি নিরাপত্তারক্ষীরা। দিনের পর দিন এই নতুন ফন্দিতেই মুর্শিদাবাদের সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে পাচার হয়ে যাচ্ছে মাদক, জাল টাকা, সোনাদানা। সেই চোরাস্রোত আটকাতে গিয়ে বার বার বিস্মিত হতে হচ্ছে বিএসএফকে। শমসেরগঞ্জ, সুতি, জলঙ্গির মতো মুর্শিদাবাদের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে পাচারের অভিযোগে একের পর এক পিতা-পুত্রের গ্রেফতারির ঘটনায় ক্রমশ ছক মেলাতে পারছেন তদন্তকারীরা। পুলিশের দাবি, জনবহুল এলাকায় পাচারের সামগ্রী নিরাপদে হাতবদল করতে টার্গেট করা হচ্ছে নাবালকদের। সবার নজর এড়াতে ওই চক্রে শামিল করা হচ্ছে কচিকাঁচাদের বাবাদেরও। মূলত কৃষিজীবী যুবক এবং প্রৌঢ়রা বাড়তি কিছু আয়ের জন্য নিজে তো পাচারচক্রে জড়াচ্ছেনই, অপরাধের দুনিয়ায় এগিয়ে দিচ্ছেন নিজের ছোট্ট সন্তানকেও!

শমসেরগঞ্জ এলাকার ডাকবাংলো এলাকা। সামনে দিয়ে চলে গিয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক। গত ২৯ অগস্ট এখানেই সোহেল রানা নামে ১৫ বছরের স্কুলপড়ুয়াকে ধরে পুলিশ। তার কাছে মেলে ৫০০ টাকার ১১২টি জাল নোট। পুলিশি তদন্তে উঠে আসে সীমান্ত পেরিয়ে এই জাল টাকাগুলি ভারতে এনেছিলেন সোহেলের বাবা। হাতবদলের জন্য ছেলেকেই সবচেয়ে ‘বিশ্বস্ত’ মনে করেছেন বাবা। ছেলের স্কুলব্যাগ হয়েছে বাবার পাচারের কারবারের নিরাপদ ঠাঁই।

চলতি বছরের জুন মাসের আরও একটি উদাহরণ পায় পুলিশ। মুর্শিদাবাদের বাউরিয়া থেকে তিন লক্ষ টাকার জাল নোট-সহ গ্রেপ্তার হয় দুই কিশোর। এক জন দশম শ্রেণির ছাত্র, অন্য জন পড়ে একাদশ শ্রেণিতে। তাদের স্কুল ব্যাগে করে ওই জাল টাকা পাচারের চেষ্টা চলছিল। সেই চেনা ছকের উদাহরণ মিলেছে দিন কয়েক আগেও। মুর্শিদাবাদের সুতি থানার ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সাজুরমোর থেকে সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া স্কুলের ইউনিফর্ম পরিহিত তিন পড়ুয়াকে আটক করে পুলিশ। তিন জনের ব্যাগে তল্লাশি চালিয়ে মেলে দু’লক্ষ টাকার জাল নোট এবং ১৫০ গ্রাম হেরোইন। পুলিশি জেরায় অষ্টম শ্রেণির ওই তিন পড়ুয়া জানায়, ওই টাকা তারা পেয়েছে যে যার বাবার কাছে। ‘‘কী বলছিস? বাবা তোদের ব্যাগে জাল নোট আর হেরোইনের প্যাকেট ঢুকিয়ে দিচ্ছে?’’ বিস্ময় চেপে রাখতে পারেননি তদন্তকারী এক অফিসার। উত্তরে তিন কিশোরই মাথা নেড়ে ‘হ্যাঁ’ বলেছে।

কয়েক দিন আগেই জলঙ্গিতে ঘটেছে এমনই আরও একটি ঘটনা। বাবা ছেলেকে ইয়াবা ট্যাবলেট পাচারের টোপ হিসেবে ব্যবহার করত বলে তথ্য পায় বিএসএফ। তার পর পাকড়াও হয় ছেলেটি।

পর পর এমন বেশ কিছু ঘটনায় উদ্বিগ্ন সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ। বাবার হাত থেকে কাঁটাতার পেরিয়ে এ পারে আসা মাদক, সোনাদানা, জাল টাকা নাবালক ছেলের মাধ্যমে পাচারকারীদের ডেরায় পৌঁছে দেওয়ার এই পন্থা রুখতে তৎপর হচ্ছে পুলিশ এবং বিএসএফ। দক্ষিণবঙ্গ ফ্রন্টিয়ারের বিএসএফের ডিআইজি একে আর্যের কথায়, ‘‘পাচারকারীরা কিছু দিন পর পর তাদের কৌশল বদলায়। আমরাও সতর্কতার সঙ্গে তাদের সেই কৌশল ভেদ করে পাচারের পরিকল্পনা ভেস্তে দিই। নাবালকদের ঢাল করে পাচারের পরিকল্পনা সম্পর্কে আমরা অবগত। বেশ কিছু গ্রেফতারও হয়েছে।’’

জঙ্গিপুর পুলিশ জেলার সুপার ভিজি সতীশ বলেন, ‘‘জেলার সীমান্তবর্তী অংশগুলোতে অল্পবয়সি পাচারকারীদের সংখ্যা বাড়ছে। চিন্তার ব্যাপার হল, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যদের হাত ধরেই তারা অপরাধ জগতে প্রবেশ করছে। এই প্রবণতা যে কোনও মূল্যে রুখতে হবে। তার জন্য আইনি পদক্ষেপের সঙ্গে সঙ্গে দরকার সামাজিক বোঝাপড়া।’’

আসলে সীমান্তবর্তী এলাকার অনুন্নয়নের সুযোগে নুন আনতে পান্তা ফুরোনো সংসারগুলোকে টার্গেট করছে পাচারচক্রের হোতারা। বাবা এবং নাবালক সন্তান-সহ একটা গোটা পরিবার জড়িয়ে পড়ছে আন্তর্জাতিক পাচার চক্রের জালে। যা উদ্বেগের তো বটেই।

Trafficking Drug Trafficking BSF West Bengal Police India Bangladesh Border

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।