Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪

সংসারের হাল ধরতে নৌকা ভুলে ছুটতে হচ্ছে কেরলে

জল-ছাড়া মাছ আর মাছ বিনে মৎস্যজীবী, দুই-ই সমান। শুকনো শ্যাওলার পথ ধরে বিপন্ন মৎস্যজীবীদের খোঁজ নিল আনন্দবাজারসংসারের হাল ধরতে তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে কেরলে। হালের বদলে এখন সঞ্জয়ের হাতে উঠে এসেছে হাতুড়ি, কোদাল। শিখতে হয়েছে নতুন করে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ।

শীর্ণ হচ্ছে নদী।

শীর্ণ হচ্ছে নদী।

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ২১ নভেম্বর ২০১৯ ০৩:৪৬
Share: Save:

ডিঙিতে ঠাকুর্দার কোলে বসেই মাছধরার হাতেখড়ি হয়েছিল তাঁর। ঠাকুর্দাই তাঁকে শিখিয়েছিলেন, শক্ত হাতে কী ভাবে ধরতে হয় নৌকার হাল। আর কিশোর বয়সে বাবার হাত ধরেই পাক্কা ধীবর হয়ে উঠেছিলেন জলঙ্গির গুঁড়িপাড়ার সঞ্জয় হালদার।

কিন্তু এখন আর তাঁর হাতে সেই হাল নেই, ডিঙিতে নেই জালও। সংসারের হাল ধরতে তাঁকে পাড়ি দিতে হয়েছে কেরলে। হালের বদলে এখন সঞ্জয়ের হাতে উঠে এসেছে হাতুড়ি, কোদাল। শিখতে হয়েছে নতুন করে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ। সঞ্জয় বলছেন, ‘‘যারা যে কাজ করে, বাইরে গিয়ে সেই কাজই তাকে করতে হয়। কিন্তু আমরা তো নৌকা চালানো আর মাছ ধরার বাইরে কিছু জানি না। এখন পেটের দায়ে এই বয়সে এসে নতুন করে সব শিখতে হচ্ছে!’’

বাড়ির পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীটা শীর্ণ হতে হতে এখন নালায় পরিণত হয়েছে। যে বিলে টলটল করত জল তা-ও আজ বদ্ধ ডোবা। জেলার অন্যতম বড় বিল ভাণ্ডারদহের পাড়ে বাড়ি মৎস্যজীবী অমরেন্দ্রনাথ হালদারের। তাঁর কথায়, ‘‘বছর কুড়ি আগে পর্যন্ত এই বিলে জল থইথই করত। কখনও কল্পনাও করিনি, এই বিলের এমন হাল হবে। মৎস্যজীবীরা বাধ্য হচ্ছেন ভিনরাজ্যে পাড়ি দিতে।’’

কিন্তু এই সমস্যার সমাধান কী ভাবে সম্ভব? দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক বিদ্বানকুমার দাস বলছেন, ‘‘প্রথমত এই বিলের উৎসমুখ পরিষ্কার করা খুব জরুরি। ভাণ্ডারদহ বিলের গোবরা নালার মুখে পাথর দিয়ে যে ভাবে বেঁধে দেওয়া হয়েছে তাতেই সঙ্কট তৈরি হয়েছে। গোবরা নালায় স্লুইস গেট তৈরি করলেই ভাণ্ডারদহ বিলের সমস্যা মিটে যাবে।’’

মৎস্যজীবীরা বলছেন, ‘‘আমাদের দেশেই শুনেছি বহু জায়গায় মৃতপ্রায় নদীকে ফের বাঁচিয়ে তোলা হয়েছে। আমাদের রাজ্য বা জেলাতেও তো এমনটা করা যায়। একশো দিনের কাজের প্রকল্পে নদীগুলোকে সংস্কার করলেও সেখানে সারা বছর জল থাকবে। আমরাও মাছ ধরতে পারব। তা হলে আর ভিনরাজ্যে যেতে হয় না।’’

আজ, একুশে নভেম্বর বিশ্ব মৎস্যজীবী দিবস। আর সেই দিনকে সামনে রেখেই আন্দোলনে নামছেন দক্ষিণবঙ্গ মৎস্যজীবী ফোরামের সদস্যেরা। সংগঠনের তরফে জানানো হয়, এর আগেও জেলার বিলগুলি সংস্কারের দাবি তোলা হয়েছিল। এ বারের স্লোগান— ‘জল বাঁচাও, মাছ বাঁচাও, মৎস্যজীবী বাঁচাও’।

অন্য বিষয়গুলি:

Domkal River Environment
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy